Tuesday, June 2, 2020

কিশোর মজুমদার




প্রেমের সংলাপ – ১ | আগুন

কিশোর মজুমদার |

 

চয়নিকা : জল না আগুন ?
রুদ্র : আগুন।
চয়নিকা : কেন আগুন কেন ?
রুদ্র। : কারণ আগুন না থাকলে জল এর দরকার কি বলো ? আর দুনিয়াজোড়াই তো আগুন । রূপের আগুন, বিদ্রোহের আগুন, বাজার আগুন , কামনার আগুন আর ,…..
চয়নিকা : আর ।
রুদ্র। : আর ভালোবাসার আগুন।
চয়নিকা :ভালোবাসার আগুন !!!
রুদ্র। :আরে ওই যে বলে না , কি যেন , প্রেমের আগুন ।
চয়নিকা : প্রেমের আবার আগুন হয় না কি ?
রুদ্র : হয় না আবার । প্রেমের আগুন যখন জ্বলে একবার পুড়ে পুড়ে নিজেও মরে আর অপরকেও মারে। কথায় বলে পিরিতির আগুন।
চয়নিকা :ছাড়ো আগুন প্রেমিক।
রুদ্র। : আরে তুমিই তো বললে , আমার কি দোষ।
চয়নিকা : আচ্ছা ঠিক আছে , ঠিক আছে। এবার বলোতো…..
রুদ্র। : কি ?
চয়নিকা : হুম… বলো তো …. গাছ না পাখি ?
রুদ্র। : পাখি ।
চয়নিকা : নদী না সাগর ?
রুদ্র। : নদী।
চয়নিকা : গেরুয়া না সবুজ?
রুদ্র। :বলবো না ।
চয়নিকা : আলো না আঁধার ?
রুদ্র। :আলো।
চয়নিকা : তাহলে বলো দিন না রাত ?
রুদ্র। : রাত ।
চয়নিকা : এই না বললে আলো , আবার বলছো রাত ?
রুদ্র : কারণ আছে । যাকগে । তোমার ইন্টারিভিউ শেষ ?
না বাকি আছে।
চয়নিকা : উম ম ম .…… বলো ইতিহাস না ভূগোল ?
রুদ্র : ভুগোল ।
চয়নিকা : বাংলা না ইংরেজি ?
রুদ্র। : বাাংলা। ভাগ্যিস বিলিতি না বাাংলা বলো নি ।
চয়নিকা : চুপ । বাড়ি না ফ্লাট?
রুদ্র: ফ্লাট ।
চয়নিকা : একান্নবর্তী না নিউক্লিয়ার ?
রুদ্র : অলক্লিয়র ।
চয়নিকা : মানে ?
রুদ্র। : মানে একা।
চয়নিকা : একা —-- ইইস…’ যাও আমি চললাম । থাকো একা।
রুদ্র। : আরে রাগছ কেন ?
চয়নিকা : তাহলে বলো —- ফুল না গান ?
রুদ্র। : গান ।
চয়নিকা : জীবন না যৌবন ?
রুদ্র: যৌবন ।
চয়নিকা : ছেলে না মেয়ে ?
রুদ্র : মেয়ে।
চয়নিকা : কেন মেয়ে কেন ? তুমি না বললে মেয়েরা এই করে , ন্যাকামি হাবিজাবি…..। এখন আবার মেয়ে কেন বলো…. বলো … বলো বলো কেন ?
রুদ্র: আ … লাগছে ।
চয়নিকা : বলো মেয়ে কেন ?
রুদ্র : তুমি যে মেয়ে , তাই । তুমি যে আমার অর্ধাঙ্গিনী …তাই। আর ফুটফুটে জোছনার মতো একটা মেয়ে চপলা চঞ্চলা মেয়ে ফ্রক পরে ছুটে দৌড়ে আসছে। ভাবতে ভালো লাগে …. কি সুন্দর।
চয়নিকা : তাই , আমি বুঝি ফ্রক পড়বো ?
রুদ্র। : আরে তুমি না । একটা ছোট্ট মেয়ে … বাচ্চা …তুলতুলে ….
হাঁটি হাঁটি পা পা …..
চয়নিকা : বটে ….. বিয়ে করার মুরোদ হলো না এখনো….
মেয়ে বাচ্চা …. যাও কথা বলবো না ।
রুদ্র: এই রাগ করো কেন ? সত্যিই তো । তোমার মত একটা মেয়ে ছানা । কত্ত সুন্দর করে চুল বেঁধে দেব , আদর করবো। গান শোনাবো।
চয়নিকা : হায় কপাল আমার। আমার বাবাও নাকি মাকে এই কথাগুলোই বলতো।
রুদ্র: তাই নাকি?
চয়নিকা : এই । আমাকে চুল বেঁধে দেবে না ? আদর করবে না ? নাকি মেয়েছানাকেই সব করবে ? আমি তাহলে বাবা মা ছেড়ে কার কাছে আসবো ?
( কান্না) ভ্যা ……….
রুদ্র: আ … আ…… কাঁদছ কেন ? বোঝ না এটা পাবলিক প্লেস ?
চয়নিকা : তো কি হয়েছে ? এক্ষুনি আদর করতে বলছি নাকি ?
রুদ্র। : আচ্ছা দেখা যাবে । যখনকার টা তখন ।
চয়নিকা : সত্যি বলো ? আমি সবকিছুই তোমার মধ্যে পাবো ? তুমিই আমার ভালোবাসা , স্বপ্ন ….. প্রেম … আর ভরসা।
রুদ্র। : আর আগুন ।
চয়নিকা : ধুত যাও তো।
রুদ্র : এই যেও না । প্লিজ । চয়নিকা প্লিস ।
দাঁড়াও। 
 (ডাকতে থাকে )




প্রেমের সংলাপ – ২ | কবি কবি ভাব

 কিশোর মজুমদার


চয়নিকা -তুমি না ভীষণ কবি কবি ভাব
রুদ্র --আরে কিছু নয়, ও আমার স্বভাব
চ--তাই বলে সবসময় কবিতা…সবখানে ছন্দ…..
রু--হলোই বা, বলো কি আছে মন্দ ?
চ--আরে ধুস্, ভাল্লাগেনা যাও ।
রু--ভালবাসি তো, কাছে আছি তো, তাও…..
চ--ইস্ কোন পাগলের পাল্লায় পড়লাম রে বাবা
রু--আসলে পাগল হয় সবাই, হয় বাচাল নয় বোবা
চ--আজ তোমার কি হয়েছে বলবে???
রু--এই বাদাম এনেছি, খাবে?ঝালমুড়ি চলবে??
চ--কপাল, প্লিজ ছাড়োনা ফালতু কাব্যি করলে ভালো লাগে না, ইসসস্,
ওকে ওকে,,,তুমি একটা করে কথা বলো দেখবে কেমন ভালো লাগে, বলো বলো, বলোনা, যেকোনো একটা লাইন বলো….
রু--বলছি, বলো আমাদের জীবনটা কত সুন্দর
চ--হুম , আর তুমি একটা বান্দর।
রু--আমাকে বাঁদর বললে তুমি?
চ--এগ্গি বাঁদর না বাঙাল ভাষায় কইলাম । বান্দর বান্দর কইছি আমি।
রু--ওকে কাজের কথা বলোতো…
আজ কি কলেজ ছুটি?
চ--খোলাই থাক আর যাই থাক,ভাতের বদলে কি খাবো রুটি ?
রু--তুমি একদম ফালতু মিল দাও, কোন সৌন্দর্য নেই ওতে ।
চ--তুমি আমাকে শেখাও কেন?কি এসে যায় তাতে।
রু--উফ্ ছাড়োনা এবার প্লিজ।
চ--ক্যামন ঠেলা নিজের মেশিনে দাও গ্রিজ।
রু--ধুস, মেলাতে হবে না আর
চ--বোঝো ঠ্যালা, ক্যামন লাগে তোমার ।
রু-- sorry, প্লিজ, আর কাব্যি করবো না, হলো .।
চ--আচ্ছা ঠিক আছে এবার অন্য গল্প বলো ।
রু--ওই দেখো স্কুলের স্টুডেন্ট রাও আসছে পার্কে ।
চ--আসবে না,, উমম্ …সবাই কে খায় প্রেমের শার্কে।
রু--পারোও তুমি বস ।
চ--একগামলা দুধে একফোঁটা লেবুর রস ।
রু--তোমার কাব্যের ঠেলায় প্রেমের রস শুকিয়ে কিসমিস হয়ে গেল ।
চ--হুম, মিস তো হয়ে গেল ।
এবার অন্য কোথাও চলো।
এবার বুঝলে কেমন লাগে কথায় কথায় কাব্যি, কোন সিরিয়াস কিছু বলতে গেলেই বাজে লাগে জানো।
রু—-হুম আসলে লোকে বলে কি না, দুজন শিক্ষিত লোকের প্রেম নাকি শুকনো তর্কের আড়ালে শুকিয়ে যেতে থাকে।
তাই যদি কথায় কাব্যের রস মেশালে সম্পর্কটা যদি রসসিক্ত হয়…
চ—শোনো , সম্পর্ককে রসসিক্ত করতে হলে অন্তরটাকেও রসসিক্ত করতে হয়, বুঝলে, ওটা তোমার কিন্তু আছেই।
রু—তাই, তাহলে তো ভালোই..
আর তুমিও তো টইটম্বুর রসে ভরা… কলকাতার রসগোল্লা ।




প্রেমের সংলাপ – ৩ | মানুষ এত বোকা কেন

 কিশোর মজুমদার |


রুদ্র — বলো তো মানুষ এত বোকা কেন ?
চয়নিকা--তোমার মাথায় আবার কি ভূত চাপলো।
রুদ্র — না এমনি ভাবছি । মানুষ শুধু ছুটছে—ছুটছে- ছুটছে তো ছুটছেই।
চয়নিকা-- তো !
রুদ্র — আরে জীবন কোথায় ? বেঁচে থাকার আনন্দ কোথায় ?
চয়নিকা-- কোথায় ?
রুদ্র --কোথায় আবার ? এইখানে । আর এখন ই ।
কেউ যদি ভাবে যে জীবনে বাঁচব পরে , যখন আমার অনেক টাকা হবে ,
যখন আমার সামনের কাজটা সম্পূর্ন হবে , তারপরেই জীবন ঝিঙ্গালালা…
চয়নিকা-- হি হি হি হি হি……. তুমি বকতেও পারো বাবা।
তো কি হয়েছে তাতে ?
নিজের জীবন নিয়ে বাঁচি না এত মানুষের কথা ভেবে করবো কি !! বলো —
রুদ্র — অবুঝ হয়ো না ।
তোমার চারপাশের মানুষের দ্বারাই তুমি প্রভাবিত হও বুঝলে ।
ওদের ভাবনা ,ওদের আচরণ সংস্কার সব ই তোমাতে সঞ্চারিত হয়ে যায় ।………. (বলতে থাকে)
চয়নিকা--ইশ ! (স্বাগতোক্তি) শুরু হয়ে গেল আর থামবে না
আজ পুরো sociology পুরো msw কোর্স কমপ্লিট হবে আমার।
রুদ্র — কিছু বললে ? ঠিক আছে আর বলবো না ।
চয়নিকা-- নান-- না না না না প্লিজ রাগ করো না । মজা করলাম প্লিজ।
ও …হা কি বলছিলে যেন ! মানুষ ।
ওই তো বললে যে চারপাশের মানুষের দ্বারাই প্রভাবিত হই আমি ।
রুদ্র — আরে তুমি প্রভাবিত হও তো বলি নি । বললাম যে মানুষ ।
চয়নিকা-- ওই হলো আর কি আমিও তো মানুষ । আমিই হলাম বলো।
রুদ্র --তো দেখো আসার পথে দেখলাম ছোট্ট একটা ফুটফুটে বাচ্চা ,
তাকে ওর মা কি মারটাই না মারলো। ওর দোষ কি ,
ও নাকি পড়তে বসে না খালি খেলতে চায়।
চয়নিকা--হুম । তো তুমি কী কিরলে ? ও ও তুমি তো কবি , rapid action নেবে না ।
রুদ্র — ওহ মজা নয় চয়না please ।
চয়নিকা-- ঠিক ই বলেছি, বললাম যে তুমি লিখবে
ও নিয়ে যাতে অনেক মানুষের ভাবনায় change আসে ।
রুদ্র — হুম । তো বলছিলাম যেটা , এত সুন্দর শিশুটা সুন্দর খেলতে চায় ,
তাকে জোর করে বড় হবার স্বপ্ন চাপিয়ে ওর আপন মনে খেলাটা উপভোগ করতে না দিয়ে ,
এই শৈশব টাকে ভুলিয়ে দিয়ে কোথায় খুঁজছে মানুষ জীবন ?
চয়নিকা-- এত ভাবিনি গো । ঠিক ই বলেছ তো ।
রুদ্র — ভাব তো একবার । কিচ্ছু না যদি শিশুটিকে আপন মনে খেলতে দিয়ে শুধু দেখা যায় ।
just follow him . দেখবে অনেক কিছু শেখার আছে ওর কাছে । কিন্তু তার বদলে ….
চয়নিকা-- তার বদলে ……
রুদ্র — তার বদলে , বর্তমান নেই , জীবনে কোন আনন্দ নেই ,
শুধু আছে ভবিষ্যৎ । এক অনাগত সুখের জন্য কষ্ট করা আর কষ্ট দেয়া ।
চয়নিকা-- কষ্ট দেয়া ?
রুদ্র — আরে শিশুটা কষ্ট পাচ্ছে না বলো ।
ওর খেলার সুখের স্বর্গ ছিনিয়ে কোন পন্ডিত করতে চাইছি বলো।
“ছোট ছোট শিশুদের শৈশব চুরি করে গ্রন্থ কীটের দল বানায় নির্বোধ ”
চয়নিকা-- নচিকেতা । ভালোই বলেছ বস ।
রুদ্র — আর যে স্বপ্ন দেখে কষ্ট তো তার আছেই ।
আর যাকে নিয়ে দেখে বা যার উপর চাপায় স্বপ্ন তার বারোটা বজায় আর কি ।
চয়নিকা-- সত্যি তুমি না পারো বটে ।
এই রোমান্টিক এই রিয়ালিস্টিক । কিন্তু আমাদের কি হবে ?
রুদ্র — কি হবে আর । এই মাটির ঘরের জ্যোৎস্না ওঠা
দাওয়ায় বসিয়া এমনই রকম ছেলেমানুষি গল্প করিবে আর আমি বসিয়া বসিয়া শুনিব।
আর শুনিব হাতির বৃঙহন……
চয়নিকা-- আরণ্যক …..আরণ্যক … বিভূতিভূষণ …Right ?
রুদ্র — একদম রাইট । একটু তুমি মাখিয়ে চালিয়ে দিচ্ছিলাম আর কি ।
চয়নিকা-- হুমমম । চলো এবার ওঠা যাক।
রুদ্র — একি এক্ষুনি চলো ? আরে তোমার ফ্লিপকার্ট থেকে কেনা
লিপস্টিক টা একটু কেমন সুন্দর করেছে তোমায় আগে দেখতে দাও ।
চয়নিকা-- ওঁওঁওঁওঁওঁওঁ তুমি আমার দেখবে।
কখন থেকে ঠোঁট বাড়িয়ে মি…… করে আছি তাও চোখে পড়ে না ।
আর দেখতে হবে না ছাড়ো।
রুদ্র — বাহ একটু না রাগলে যে তোমায় মানায় না ।
চয়নিকা-- ধুউউউৎ । তুমি দেখবে আমাকে !! কি জানি বাপু ।
এখন কি যে তোমার নজরে পড়েছে । আর কিই বা দেখো কে জানে ।
রুদ্র --ইস…. চয়নিকা প্লিজ । সত্যি বলছি কোথাও তাকাই না আমি ।
কাউকে দেখি না আমি । আমার চোখে শুধু চয়নিকা , চয়না , সুউউচয়না ।
চয়নিকা--তাই । সত্যি । বলছ ? একদম মিথ্যে কথা । মিথ্যে মিথ্যে……
রুদ্র — সত্যি বলছি তোমায় ছাড়া কাউকে দেখি না গো ।
বিশ্বাস না হয় ওই দেখো ওই মহিলাকে , আমি একটুও দেখি নি ।
চয়নিকা-- কি …
রুদ্র — হুম। ওই যে কমলা রঙের শাড়ি পরা মেয়েটা , ওকেও দেখি নি ।
চয়নিকা-- কোন মেয়ে….
রুদ্র — ওই যে কমলা শাড়ি , ম্যাচিং ব্লাউস , লাল টিপ ,
পায়ে সাদা পদশ্রী কোম্পানির জুতো। হাতে স্টাইলি ভ্যানিটি , আর
চয়নিকা-- ( রেগে গিয়ে) কি ই ই ই ই ……
রুদ্র — আর চোখের কোনে সলজ্জ হাসি, বিদ্যাপতির রাধা এ যুগে জন্মেছে…….
চয়নিকা-- কি ।? হম ? দাঁড়াও । আমি চললাম। (রাগ করে চলে যায় )
রুদ্র — এই এই প্লিজ প্লিজ ।
মজা করছিলাম প্লিজ … চয়নিকা …. চয়না….. সূচয়না…..দাঁড়াও প্লিজ .
(ডাকতে থাকে দূর থেকে)




প্রেমের সংলাপ – ৪ | পাগলা কবির মুড

 কিশোর মজুমদার


চয়নিকা — আজ কোন কবিতা শোনাবে
রুদ্র — আজ আর কোন কবিতা নয় , আজ শুধুই তুমি আর আমি, মানে আমরা শুধু দুজনে।
চ-- হুম, বুঝেছি । তার মানে তোমার ওই জ্ঞানগর্ভ কথা হবে, লাগবে না যাও।
রু-- তুমি তো আমাকে জানোই। তোমায় কাছে পেলে…
চ-- কি, কাছে পেলে, কবিতা পালিয়ে যায় ?
রু-- উফ, শুরু হলো ইয়ার্কি, কবিতা পালাবে কেন? মানে একটু ইয়ে মানে, ইয়ে হয় আর কি
চ-- ইয়ে মানে কি গো, বলো না।
রু-- ইয়ে মানে মানে—
চ-- মানে, ও, বুঝেছি।
রু-- কি বুঝেছো?
চ-- বলবো কেন? যা বোঝাতে চাইছো,তাই বুঝেছি ।
এবার বলোতো আজ কি লিখেছো।
আমায় আমার টাইম দিয়েছো ১টায়, তুমি এসে বসে আছো, কটায় হবে,, কটায় বলোনা, কটায়, ১০টা, ১১টায় ।
এতক্ষণ শুধু ই লিখলে, নাকি আমায় ছাড়াই তোমার বেশি ভালোলাগে
রু-- ওই আর কি লেখাও ছিল।
আর মনে করে নাও না দুর্গাপুজোর শুরুর অনেক আগে থেকেই মানুষ যেভাবে প্রস্তুতি নেয়,ওইরকম ই প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম ।
চ-- মা দুর্গা মর্ত্যে যাবেন শুনে, মহাদেব তিন ঘন্টা ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছে । এমন তো শুনিনি, আর কিসের ই বা প্রস্তুতি নেবেন ।
যাকগে কি লিখলে শোনাবে না?
রু-- হুম, শোনাবই তো । পরে শোনাই, আসলে মুড আসছে না।
চ-- আজ আবার কি হলো ? মুড কে চুরি করলো আবার ?
শোনো, দিনে দিনে দেখছি তোমার ফ্যান ফলোয়ার বেড়েই চলেছে, ব্যাপার কি হ্যাঁ ….?
রু-- কেন, ঈর্ষা হয় বুঝি…?
চ-- হবেই না বা কেন বলো । দিনে দিনে মুড চুরি যায়, মাঝে মাঝেই আনমনা দেখি। কবিদের কোন বিশ্বাস নেই
রু-- বাজে কথা বললে । কবিরা কি দোষ করলে আবার।
চ-- জানি না, তবে ভয় লাগে। যদি আমায় ছেড়ে আর কোন পাঠিকার পাল্লায় পড়ে যাও ।
রু-- শুনো আমার চয়নিকা, আমার চয়না ,আমার সু—চয়না, হাজারটা মেয়ের মধ্যে যখন তোমাকে ভালোবেসেছি, বুঝবে, তোমার মধ্যে কুছ তো স্পেশাল হ্যায় ….
চ-- কি এমন স্পেশাল দেখলে গো আমার মধ্যে ?
বলো না গো প্লিজ, আমার মধ্যে কি আছে আমিই জানি না। তুমি বলে দাও…
রু-- শুনবে….
চ-- হুম বলো….
রু-- চোখের পাতায় ঘুমন্ত রোদ্দুর
ঠোঁটের কাছে জ্যোৎস্না লেগে আছে
যাই কি করে বলো তোমার কাছে
ফুল ফুটেছে কাঁটায় ভরা গাছে।
চ-- কাঁটায় ভরা গাছে ? আবার কাঁটা কোথায় পেলে? আমি তো নিষ্কণ্টক ….
রু-- বাহ্। তো চলো, কাল দিল্লি ঘুরে আসি…
চ-- ইসসস্ বাবা ঠ্যাঙাবে। আর তোমার সাথে যাবোই বা কি করে ?
রু-- এক নম্বর কাঁটা এটা, বুঝলে…
চ-- ছিঃ, বাবাকে কাঁটা বলছো…!
বলোতো কোন বাবা মা মেয়ে কে ছেড়ে দেবে..?
রু-- যাইহোক, শুনবে না তর্ক করবে ?
চ-- হ্যাঁ শুনবো বলো। তারপর…
রু-- আঁছড়ে পড়ে দুষ্টু জলের ঢেউ
পাড়ের কাছে ভাঙন লেগেই আছে
জল ছুঁতে যায় ছটফটানি মন
ঝাপট মারে ডাঙায় তোলা মাছে…
চ-- বাহ্ তারপর…
রু-- হাতড়ে বেড়ায় জোনাকি এক ঝাঁক
আঙুল থেকে ইশারা পায় গতি
পা দুটো চায় নিঝুম চলার পথ
মধুর লোভে তোমার গাছের প্রতি।
——-হল এবার,, আজ থাক। চলো ওঠা যাক ।
চ-- হুম চলো।
থাকো না আরেকটু…..
রু-- উঠতেই হবে, উপায় নেই। প্লিজ
চ-- কি আর করা। পাগলা কবির মুড।
চলো যাই।



প্রেমের সংলাপ – ৫ | অন্ধকারের প্রেমিক

 কিশোর মজুমদার



চয়নিকা : তুমি রোজ কটায় ঘুমাও বলো তো ?
রুদ্র : কটায় হবে ? এই আর কি 2টা 4টা হবে ।
চয়নিকা : 2টো না 4 টে ?
রুদ্র : নিশাচর বলতে যা বোঝায় , ঠিক তা নয় ।
চয়নিকা : মশাই , 2টো 4টে মনে নিশাচরই হল ।
আচ্ছা , এত রাত জেগে করোটা কী বলোতো ?
কবিতা লেখো ? সেই 12টা না বাজতেই তো offline হয়ে যাও ।
রুদ্র : হুম….. কী করি শুনবে ?
চয়নিকা : বলো ।
রুদ্র : ছাদে গিয়ে পায়চারি করি । আর
চয়নিকা : আর ?
রুদ্র : আর আকাশের তারাদের সাথে মিতালি করি ,
দমকা হওয়ার সাথে গোল্লাছুট খেলি ,
বন্ধু নীরবতার সাথে প্রেমের গল্প করি । অন্ধকারের সঙ্গে ……
চয়নিকা : অন্ধকারের সঙ্গে ?
রুদ্র : আমার চিরন্তন প্রেম । অন্ধকারই আমার আলোর সহযাত্রী ।
চয়নিকা : তাই বুঝি ? আচ্ছা বলো তো কবিরা তো নিশাচর হয়েই থাকে ,
সে আর এমন কথা কি ?
ফুল পাখি চাঁদ তারা গান তো বাঙালির প্রেমিক হৃদয়ের অলংকার ।
রুদ্র : সবার জন্য নয় চয়নিকা ।
চয়নিকা : মানে ? তুমি বুঝি চাঁদ ভালোবাসো না ? জ্যোৎস্না ,
সে তো কবির হৃদয়ের বীণার তারের tune ।
রুদ্র : না ।
চয়নিকা : কি না ? জ্যোৎস্না রাত তোমার ভালো লাগে না বুঝি ?
রুদ্র : না ।
চয়নিকা : কেন কেন ? তুমি এত আলাদা কেন ?
রুদ্র : দেখ , মানুষের ওই এক দোষ । কবি মানে খোঁচা দাড়ি ,
কাঁধে ঝোলা , পাজামা আর পাঞ্জাবি পরা আলাভোলা লোক হবে ।
আর ফুল পাখি চাঁদ তারা নিয়ে কারবার ।
চয়নিকা : তো কি তাইতো হবে ।
রুদ্র : না । কবিরা এখন জিন্স পরে , পার্টি করে ,
মঞ্চ কাঁপিয়ে মোটিভেসোনাল স্পিচ দেয় , ফুল পাখি ছেড়ে মানুষকে ধরে ,
ব্লগ লেখে , car drive করে ফেমিলি ট্যুর এ যায় ।
বুঝলে ? কবি হয় হৃদয়ে —-- বাইরের লোক দেখানো ভাবসাবে নয় বুঝলে ?
চয়নিকা : বাহ , দারুন বললে তো ।
দাঁড়াও এবার কলেজে সোশ্যাল এ তোমায় একটা লম্বা স্পিচ দেওয়াবো ।
রুদ্র : আমার বয়েই গেল তাতে । আমি যা ভালোবাসি তাই তো করবো ।
চয়নিকা : এই না বললে কবিরা মোটিভেসোনাল স্পিচ ও দেয় ।
রুদ্র : তো আমি কেন ? যারা দেবার দেয় ।
চয়নিকা : ছাড়ো না ওসব কথা । আগে বলো এত সুন্দর জ্যোৎস্না তোমার কেন ভালোলাগে না ?
রুদ্র : স্বীকারোক্তি চাইছো ? না কি আবার আমার ইন্টারভিউ নেবে ?
চয়নিকা : হুম … দুটোই । বলো না প্লিজ ।
মেঘের সঙ্গে লুকোচুরি খেলা জ্যোৎস্না ভরা পূর্ণিমার চাঁদ তোমার ভালো লাগে না কেন ?
রুদ্র : আসলে কি জানো ? আমি অন্ধকারকে ভীষণ ভালোবাসি ।
কেননা , সেই তো সমস্ত রূপ-রস-গন্ধের উর্ধে আমার সত্যিকারের
সত্তাটিকে কলমের সামনে এনে দেয় ।
সাদা পাতার কাছে আত্ম সমর্পণ করতে বলে আমার সমস্ত অহমিকাকে ।
চয়নিকা : বাহ ! ফ্যান্টাস্টিক । বলো বলো আর ?
রুদ্র : ঠাট্টা করছো ? যাও, বলবো না কিছু আর ।
চয়নিকা : এই --না--না-- প্লিজ না , ঠাট্টা নয় । তুমি বলো ।
একটু মজা করলাম জাস্ট । বলো না ,
কি হলো তোমার ভালোবাসার সে অন্ধকারের ?
রুদ্র : শোনো , আর ওই জ্যোৎস্না ভরা চাঁদ অন্ধকারের বুক চিরে
মানুষের ভালোলাগার রূপটিকেই সামনে এনে দেয় । —-
ওই যে রূপ--রস-- গন্ধ--স্পর্শের জগতে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে
নিজেরই চোখের খামে সবকিছু বন্দি করে ফেলে ।
চয়নিকা : তাই ?
রুদ্র : হা তাই । রুপোলি আলোর মায়ায় মোহময়ী আরেকটি রূপ
এনে দেয় সামনে — আর নিজের সঙ্গে দেখা করাই হয়ে ওঠে না ।
চয়নিকা : হুম , বুঝেছি । কি আর করা । যাক গে ।
তবে একটা কথা বলে দিচ্ছি ,
তোমার ঐ অন্ধকারকে আমি কিন্তু আমার ঘরে ঠাঁই দেব না , বুঝলে মশাই ?
রুদ্র : তোমার হাসির আলোয় ভালোবাসার প্রদীপের রোশনাই
আমার অন্ধকারকে ঠেলে দূর করে দেবে না ?
চয়নিকা : কোথায় ?
রুদ্র : কোথায় আবার ; ঝাড় জঙ্গল বনে বাদারে ।
চয়নিকা : আর আমি ?
রুদ্র : তুমি ? তুমি যে আমার চয়নিকা ,আমার চয়না — সুউউ--চয়না ,
আজীবন আমি তোমার ভালোবাসার ফুল চয়ন করতে করতেই
একটার পর একটা প্রদীপ জ্বেলে যাবো তোমার ঘরের প্রতিটি আনাচে কানাচে ।
চয়নিকা : দারুন —দারুন । একটা কবিতা শোনাবে আজ ?
রুদ্র : না চয়না , আজ থাক । পরে হবে খন ।
চয়নিকা : কি আর করা — অন্ধকারের প্রেমিক ।
রুদ্র : কি বললে ? তোমার তবে কি ? বলো আমি তোমার তবে কে ? বলো ।
চয়নিকা : কানে কানে বলি এসো ….. কানে … কানে ….




প্রেমের সংলাপ – ৬ |রোদ ও বৃষ্টি

কিশোর মজুমদার


রুদ্র : হ্যালো …

চয়নিকা : হুম .. বলো শুনছি
রুদ্র : কি ব্যাপার বলো তো ? আজ কোনো ফোন নেই টেক্সট করেছি রিপ্লাই দাও না .

খুব আপসেট মনে হচ্ছে ?
চয়নিকা : দূর .. কিছু ভাল্লাগে না । পাগল হয়ে যাচ্ছি। বাড়িতে মা নেই এদিকে বাবা ছুটি পেয়ে অফিসের একগাদা লোককে নিমন্তন্ন করে বসে আছে। ভাইকে ঘুম থেকে তুলে বাজারে পাঠালাম । তারমধ্যে ভুলুর মা ফোন করল , আজ আসতে পারবে না।
রুদ্র : ওহ ! তাহলে তো সেই চাপ আছে তোমার । রান্না কদ্দুর ?
চয়নিকা : ঐতো রান্না কমপ্লিট করলাম । উনাদের সাত সাতজন কে খেতে দিলাম । … জাস্ট খাওয়া কমপ্লিট হল । বাসন কোসন সব পরে আছে ।
যাগ্গে । কি খবর বলো তো। আজ তোমার প্রোগ্র্যাম ছিল না ? যাও নি এখনো ?
রুদ্র : নাহ গেলাম না । ভালো লাগছে না । ওদের না করে দিলাম।
চয়নিকা : দাঁড়াও দাঁড়াও দাঁড়াও দাঁড়াও ….. নামলো বৃষ্টি । ছাদে এক গাদা জামাকাপড় । ভিজলো সব একটু হোল্ড করো আসছি ।
— উফ সিঁড়ি বাইতে বাইতে শেষ আর কি ।
বলো , ওহ কি যেন বললাম ? ও তুমি গেলে না কেন ? কলেজের প্রোগ্রাম । খুব বড় অনুষ্ঠান । তো ক্যান্সেল করলে কেন ?
রুদ্র : ছাড়ো তো ওসব । ভাবছিলাম তুমি আমি একটু বেরু বেরু কৰো । সে তো আর হলো না ।
চয়নিকা : হল না কেন ? আমার তো সব কমপ্লিট । শুধু বাবাটাকে একটু ম্যানেজ করতে পারলেই … (জোরে বৃষ্টির শব্দ )
রুদ্র : এই তো এখানেও শুরু হয়ে গেল । কি আর করা । তুমি খাবে না ? যাও খেয়ে এস , কথা বলি।
চয়নিকা : তুমি খেয়েছ ? হ্যালো , বলি তুমি খেয়েছ ? হ্যালো হ্যালো ……

( বৃষ্টির শব্দ …৩ সেকেন্ড পরে )
রুদ্র : হ্যালো বলো ?
চয়নিকা : কই গেলে তুমি ? এই যে না বলে চলে যাও না , ভাল্লাগে না।
রুদ্র : ব্যালকনিতে এলাম , বৃষ্টি দেখব । খুব মেঘ দেখা যাচ্ছে । যাও না খেয়ে এস । আর কোথাও যাবো না , ফোনেই কথা বলবো ।
চয়নিকা : আমি এখন খাবো না , ভাই একটা বইয়ের দোকানে গেল , …ওহো — ছাতা নিয়ে যায় নি । ও এলে খাবো একসাথে …তুমি বল …আজ কিছু লিখলে ? ওহো , তোমায় বলতেই ভুলে গেছি , কালকের পত্রিকায় বেরোনো তোমার লেখাটা আজ পড়লাম । খুব ভালো লিখেছ , তবে …
রুদ্র : তবে ?
চয়নিকা : তবে , তুমি তোমার লেখার প্যাটার্নটা চেঞ্জ করো প্লিজ ।ওই ছন্দবদ্ধ একই প্যাটার্ন লিখে চলছ
রুদ্র : কিরকম লিখবো তবে ?
(বৃষ্টির শব্দ)
চয়নিকা : বাইরে থেকো না , ঘরে চলে এস ঠান্ডা লাগবে তোমার
রুদ্র : কিছু হবে না গো … শোনো না গো ..সেদিন …
চয়নিকা : সেদিন ?

রুদ্র : সেদিন নীল শাড়িতে খুব ভালো লাগছিলে তুমি .. কানে ঐরকম দুল পড়েছ .. কখনো তো পরো না ..গাছের ধূসর ব্যাকগ্রাউন্ডে তোমার ওই পিকটা কিন্তু বাঁধাই করবো । . আমাদের লেখার ঘরে দেয়ালে রাখবো।
চয়নিকা : কেন , আমি একা কেন দেয়ালে ঝুলব ? তুমিও আমার সঙ্গে ঝুলবে । এক দড়িতে দুজন ।
রুদ্র : প্রেমের মধুরতা ভুলে মরণের কথা বলছ কেন ?
চয়নিকা : আরে কানুর প্রেমেই তো রাধার মরণ হল আর কি ।
রুদ্র : তোমার বুঝি সেই দশা ?
চয়নিকা : তা নয়তো কি ? তোমার এক ফোনেই আমি উতলা হয়ে
উঠি । আমি সারাদিন ফোন না করলে তো তোমার ভালোই হয় । ডিস্টার্ব থাকে না কোনো ।
রুদ্র : আজ সারাদিন অপেক্ষায় ছিলাম কিন্তু ।
চয়নিকা : কৃষ্ণও তাহলে রাধার অপেক্ষা করে ?
রুদ্র : নয়তো কি ? গানে গপ্পে কবি সাহিত্যিক শুধু রাধার
বিরহ আর যন্ত্রনাই দেখিয়েছেন । কিন্তু একবারও কি
ভেবে দেখেছো কৃষ্ণের দশা ?
চয়নিকা : কৃষ্ণের তো ভালোই । রাধা ছাড়াও তো অনেক ফ্যান ফলোয়ার আছে ।
রুদ্র : তাতে কি ? রাধা তো একটাই , না ? যাক গে , বলো কাল কি দেখা হবে শ্রীমতি রাধার সনে ?
চয়নিকা : ওমা , দেখো দেখো কি সুন্দর রোদ উঠেছে । তুমি আধ ঘন্টার মধ্যেই চলে এসো । শোনো না , বাইক নিয়ে এসো আজ । আর মনে হয় বৃষ্টি আসবে না ।
রুদ্র : জি ম্যাম , আমি 25 মিনিটেই চলে আসছি । কোথায় আসবো বলো ?
চয়নিকা : আমাদের ওই তল্লি গাছ ।
রুদ্র : রাধা কদম তমাল ছেঁড়ে তল্লি তলায় দাঁড়াবেন ?
চলো , রেডি হই ।
চয়নিকা : কি মজা । ওই শোনো না … তুমি আজ পাঞ্জাবি পড়বে বলো ? ওই যে হলুদ পাঞ্জাবিটা , আর হ্যাঁ , কলাপুরী জুতো .. ওটাও পরে আসবে হ্যাঁ ।
রুদ্র : জিন্সের সঙ্গে কলাপুরী স্যান্ডেল ?
চয়নিকা : না না । পাজামা পাঞ্জাবি আর ওই জুতো ।
রুদ্র : তুমি তাহলে শাড়ি পড়বে বলো ? বাইকে নীলাম্বরী শাড়ির আঁচল এড়িয়ে উড়বে তোমার খোলা চুল । বেশ , লম্বা একটা ট্যুর দেবো আজ ।
চয়নিকা : ধুস , শাড়ি পড়ব । কিন্তু আজ শ্যাম্পু করা হয় নি । চুল ছাড়তে পারবো না ।
রুদ্র : তথাস্তু । রাখছি তাহলে । একটা দেবে না ?
চয়নিকা : না , এখন না । রাখছি ওই যে ভাই এলো বুঝি । খেয়ে দেয়েই যাচ্ছি । রাখি ।
রুদ্র : ওকে ।
চয়নিকা : রাখলাম ।
রুদ্র : রাখো রাখো ।
চয়নিকা : তাহলে রাখি ? দেরি করো না কিন্তু ।
রুদ্র : রাখো রাখো । পাগলী একটা ….উফ ।





প্রণয় গাথা

কিশোর মজুমদার



অনেক পুরোনো হয়ে যা তুই
অনেক অনেক বেশি পুরোনো
চারপাশে অরণ্য বিভুঁই
বেলওয়ারী রূপকথা জড়ানো ।

একপাশে হৃদয়ের মাঠে
আমি বুনি শাকপাতা বীজ
তোর চোখে যদিও বখাটে
গলাতে ঝোলানো তাবিজ ।

তুই তবু আমারই হতে
মঙ্গলে পুজো উপবাস
আর খুব হারজিরে শীতে
কুয়াশায় ঢাকা চারিপাশ

এমন এক দিনে এসে তোর
হাত ধরে অসীম সাহসে
পুকুরের পাড়ে দেব দৌড়
বসে যাবো ছায়ায় ঘাসে ।

বনফুল কুড়িয়ে কিছু
দেব কতক আঁচলে ঢেলে
তোর চোখে দৃষ্টি নিচু
আমি যে বখাটে ছেলে ।

বর্ষাতে গাছ ভেজা জল
আমি তোর উঠোনের কোনে
কলাপাতা করে সম্বল
ডাক দেব অতি গোপনে ।

বড় হবো , হবো বুঝমান
মাস কয় অদেখার পর
দেখে নিবি কত পিছুটান
ছিল তোর মনের ভেতর ।

আর ডাক দেবো না তোকে
তুই এক বড় হওয়া মেয়ে
কেউ দেখে তোকে আর আমাকে
আব্বুকে বলে দেবে গিয়ে ।

এরপর হাজার বছর
তোর প্রেম করে ইতিহাস
শাকপাতা বীজের মতন
আমি করি কবিতায় চাষ ।

তুই যাবি দূরে কোথা চলে
পুরোনো কাহিনীর মত
প্রেম বুঝি বেদনারই বলে
যুগ যুগ বাঁচে অবিরত ।

আমার এই লেখা কবিতায়
মন চিপে রসটুকু মেখে
ঢেলে দিয়ে প্রণয় গাথায়
তোর জন্য যাবো শুধু রেখে ।

এত যুগ পরে দেখা হলো
আজ সেই বখাটে ছেলে
তোকে দেখ কবিতা শোনালো
বুঝে নে প্রেম কাকে বলে ।

এতদিন পরে মুখোমুখি
ফেসবুকে বনলতা সেন
কাল ছুটি , চলে আয় খুকি
বখাটে ছেলেটাকে চেন ।

যান্ত্রিক সময়ের দাবি
আমি জানি তুইও ব্যস্ত
একবার শুধু দেখে যাবি
কথা নেই , কথা শেষ তো ।

সব রং চলে গেছে ব’লে
দেখাটা কি আর হবে না ?
একবার দেখে যাস চলে
কোনোদিন আর ডাকবো না ।

একবার শুধু দেখে যাস
একটুও আটকাবো না ।
ডাক্তার দিয়েছে জবাব
আমি আর জানি বাঁচবো না ।

কবিতায় প্রেম বেঁচে যাবে
আমি শুধু থাকবো না আর
প্রেম হয়ে কবিতা লুটাবে
সব প্ৰেম তোর আর আমার ।






প্রেমের কবিতা

আমাকে ভালোবাসার পর – হুমায়ুন আজাদ আমাকে ভালবাসার পর আর কিছুই আগের মত থাকবে না তোমার, যেমন হিরোশিমার পর আর কিছুই আগের মতো ন...