একটা সংবাদের অপেক্ষায় আছেন, তাই না?
 আবুল হোসেন খোকন
 ---
 সংবাদটা যখন আপনার কাছে গিয়ে পৌঁছুবে
 আমি জানি সুপ্রভা দেবী, আপনি তখন ভীষণ ব্যস্ত-
 দম ফেলবারও ফুরসৎ নেই আপনার।
 কামকষ্টের মতো আনন্দমাখা কষ্টে
 আপনি তখন গেরস্থালী সামলাচ্ছেন-
 নিজস্ব পুরুষকে ঘিরে আপনার অতীব সাধের
 জান্নাতুল ফেরদাউস।
 ধোপার সাথে জরুরী কাজ সারতে সারতেই
 নিতান্ত অবহেলায় সংবাদটা শুনবেন আপনি।
 এবং আমি জানি সুপ্রভা দেবী 
 শুনতে শুনতেই বিদ্রুপের হাসিটুকু হাসতে
 বিন্দুমাত্র ভুল হবে না আপনার
 কেননা ওই একটাই মাত্র হাসি
 আপনি শিখেছিলেন জীবনে।
 সংবাদটা শুনে কিছুই এসে-যাবে না আপনার
 রান্নার আয়োজনে ব্যস্ত হয়ে উঠবেন আপনি।
 ঝোল-ঝোল মাংসে গোল করে কাটা আলু
 ভীষণ পছন্দ আপনার নিজস্ব পুরুষের।
 আমি জানি সুপ্রভা দেবী সেদিন
 কোথাও এতোটুকু ভুল হবে না আপনার।
 আলু কাটতে গিয়ে হাত কাঁপবে না,
 প্রেশার কুকারে সিঁটি গুণতে ভুল হবে না,
 পরিমিত হবে মাংসের ঝোলে নুনের পরিমাণ।
 বরং অন্যান্য দিনের তুলনায়, সুপ্রভা দেবী,
 সেদিন আরও বেশি সুস্বাদু হবে
 আপনার হাতের অষ্টব্যঞ্জন;
 এবং কখোন যেন একসময়
 সংবাদটা বেমালুম ভুলে যাবেন আপনি।
 আপনার সেদিন অনেক্ষণ সময় কাটবে স্নানঘরে।
 উষ্ণ জলে সেদিন গোলাপের পাপড়ি ছড়াবেন আনমনে
 শরীরের প্রতিটি অঞ্চল সুগন্ধী সাবান ফেণায় ঘষে-মেজে
 নিজেকে আপনি করে তুলবেন পূত-পবিত্র।
 অতঃপর, শরীরের গড়ানো জল ঝাড়তে গিয়ে যখন
 আয়নায় দেখবেন নিরাবরণ শরীরখানি নিজের
 ঠিক তখনই সুপ্রভা দেবী,
 ঠিক তখনই প্রথম, আপনার মনে পড়বে সংবাদটা;
 মনে পড়ে যাবে কেউ একজন
 রূপোর কলসে ভরে রাখা চোখের জলে
 আপনাকে স্নান করিয়ে দিতো,
 আর স্নান শেষে নরোম গামছায়
 আপনার মোহময় শরীর মুছে দিতো সে।
 এবং ঠিক তখন থেকেই আমি জানি সুপ্রভা দেবী,
 আপনার মুখ থেকে মিলিয়ে যেতে শুরু করবে
 ঠোঁটের কোণায় ঝুলে থাকা সেই হাসি
 আপনার ভালো লাগবে না কিছুই
 দমবন্ধ হয়ে আসতে থাকবে আপনার
 পাগলের মতো আপনি ছুটে বেড়াবেন এঘর থেকে সেঘর
 মূহুর্মূহু গর্জনে উত্তাল ঢেউয়ের ফণায়
 আপনার কানে আপনার মগজে
 পিন আটকে যাওয়া রেকর্ডের মতো বেজে চলবে সেই সংবাদ
 আপনি লন্ডভন্ড করে ফেলবেন আপনার পরিপাটি দেহ
 বিছানা-বালিশ-দেয়ালের ঝুলে থাকা যুগল ছবি
 আপনার জান্নাত-আপনারই হাতে গড়া দূরত্বের প্রাচীর।
 অতঃপর রাত গভীর হয়ে গেলে সুনসান
 আপনার নিজস্ব পুরুষ যখন পাশ ফিরে শোবে নিশ্চিন্তে
 আমি জানি সুপ্রভা দেবী-
 পরিপাটি বিছানা ছেড়ে সবার অলক্ষ্যে আপনি
 চোখের জলে ভাসতে ভাসতে চলে আসবেন এইখানে,
 যেখানে একলা আমায় রেখে গেছে ওরা,
 যেখানে আমি সবকিছু ভুলে শান্তিতে ঘুমাবো অনন্তকাল।
মেহেদী পাতা
 আবুল হোসেন খোকন।
 অনন্ত, মেহেদি পাতা দেখেছ নিশ্চয়?
 উপরে সবুজ, ভেতরে রক্তাক্ত ক্ষতবিক্ষত-
 নিজেকে আজকাল বড় বেশি মেহেদি পাতার মতো
 মনে হয় কেন?
 উপরে আমি অথচ ভিতরে কষ্টের যন্ত্রণার-
 এমন সব বড় বড় গর্ত যে-
 তার সামনে দাঁড়াতে নিজেরই ভয় হয়, অনন্ত।
 তুমি কেমন আছো?
 বিরক্ত হচ্ছ না তো?
 ভালবাসা যে মানুষকে অসহায়ও করে তুলতে পারে-
 সেদিন তোমায় দেখার আগ পর্যন্ত-
 আমার জানা ছিল না।
 তোমার উদ্দাম ভালবাসার দ্যুতি-
 জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে ফেলেছে আমার ভিতর-
 আমার বাহির-
 আমার হাতে গড়া আমার পৃথিবী।
 অনন্ত, যেই মিথিলা সুখি হবে বলে-
 ভালবাসার পূর্ণ চন্দ্র গিলে খেয়ে-
 ভেজা মেঘের মতো উড়তে উড়তে চলে গেল,
 আজ অন্য শূন্য, অনন্তকে আরো শূন্য করে দিয়ে-
 তার মুখে এসব কথা মানায় না,
 আমি জানি-
 কিন্তু আমি আর এভাবে এমন করে পারছি না
 আমার চারদিকের দেয়াল জুড়ে থই থই করে-
 আমার স্বপ্ন খুনের রক্ত।
 উদাস দুপুরে বাতাসে শিষ দেয়
 তোমার সেই ভালবাসা
 পায়ে পায়ে ঘুরে ফেরে ছায়ার মতন-
 তোমার স্মৃতি।
 আমি আগলাতেও পারি না,
 আমি ফেলতেও পারি না।
 সুখি হতে চেয়ে এখন দাঁড়িয়ে আমি-
 একলা আমি-
 কষ্টের তুষার পাহারে।
 অনন্ত তোমার সামনে দাঁড়ানোর কোনো
 যোগ্যতাই আজ আমার অবশিষ্ট নেই।
 তবুও,
 তবুও তুমি একদিন বলেছিলে-
 ভেজা মেঘের মতো-
 অবুঝ আকাশে উড়তে উড়তে-
 জীবনের সুতোয় যদি টান পরে কখনো,
 চলে এসো, চলে এসো-
 বুক পেতে দেব আকাশ বানাবো
 আর হাসনাহেনা ফুটাবো।
 সুতোয় আমার টান পরেছে অনন্ত,
 তাই আজ আমার সবকিছু,
 আমার একরোখা জেদ,
 তুমিহীনা সুখি অনেক স্বপ্ন!
 সব, সবকিছু জলাঞ্জলি দিয়ে-
 তোমার সামনে আমি নতজানু-
 আমায় তোমাকে আর একবার ভিক্ষে দাও।
 কথা দিচ্ছি- তোমার অমর্যাদা হবে না কোনোদিন।
 অনন্ত, আমি জানি-
 এখন তুমি একলা পাষাণ কষ্ট নিয়ে ঘুরে বেড়াও,
 প্রচনণ্ড এক অভিমানে-
 ক্ষণে ক্ষণে গর্জে ওঠে অগ্নেয়গিরি।
 কেউ জানে না, আমি জানি-
 কেন তোমার মনের মাঝে মন থাকে না,
 ঘরের মাঝে ঘর থাকে না,
 উঠোন জোরার ওপর কলস-
 তুলসি তলের ঝড়াপাতা,
 কুয়োতলার শূন্য বালতি-
 বাসন-কোসন, পূর্ণিমা-অমাবস্যা
 একলা ঘরে এই অনন্ত-
 একা শুয়ে থাকা।
 কেউ জানে না, আমি জানি-
 কেন তুমি এমন করে কষ্ট পেলে-
 সব হরিয়ে বুকের তলের চিতানলে-
 কেন তুমি নষ্ট হলে?
 কার বিহনে চুপি চুপি, ধীরে ধীরে-
 কেউ জানে না, আমি জানি-
 আমিই জানি।
 আগামী শনিবার ভোরের ট্রেনে তোমার কাছে আসছি।
 অনন্ত, আমার আর কিছু না দাও- অন্তত শাস্তিটুকু দিও।
 ভালো থেকো
 তোমারই হারিয়ে যাওয়া মিথিলা।
বেঁচে থাকলে লালশাক কিনবো প্রতিদিন
-আবুল হোসেন খোকন
 ১১ মে ২০২০/বনশ্রী
 ------------------------------------
 এখন আমার অখণ্ড অবসর।
 আজই প্রথম কেন যেন মনে হলো
 আমার একটু কাঁদা উচিৎ।
 এতোদিন ভেবেছি ওসব শুধু সময়ের অপচয়
 ওসব ন্যাকামো আমাকে মানায় না।
 আমাকে মানায় না কাজ ফেলে ধুম করে বাড়ি ফেরা
 আমাকে মানায় না সকালে হাঁটতে গিয়ে
 বেলীফুল কেনা
 অথবা নিদেনপক্ষে ফুটপাথ থেকে বেছে বেছে
 কিনে নেয়া নরোম বাতাবী কিংবা লালশাক।
 আমাকে মানায় না বাজারের ফর্দ আর
 থলে হাতে ঘিনঘিনে গলিতে গিয়ে
 ডালায় পড়ে থাকা মাছের কনসা তুলে দেখা,
 দাম-দর করা, ঠিকঠাক টাকা গুণে নেয়া।
 আমাকে মানায় না চা বানিয়ে কাপের দেয়ালে 
 ঝুলে থাকা গড়ানো চায়ের ফোঁটাটুকু মুছে নেয়া,
 আমাকে মানায় না বিকেলের চায়ে
 আমাকে মানায় না সন্ধ্যায়
 সন্তান হয়ে হোমওয়ার্কে, পড়ার টেবিলে।
 আমাকে মানায় না রাতের জোনাকীতে-জ্যোৎস্নায়
 রমণের আগে প্রাক প্রস্তুতি আমার কাছে মনে হয়
 শুধুই সময়ের অপচয়।
 আমার মনে নেই শেষ কবে আমি মাকে ডেকেছি
 আমার মনে নেই শেষ কবে আমি
 সন্তানের গালে চুমু খেয়েছি
 আমার ঠিক মনে পড়ছে না শেষ কবে আমি
 স্ত্রীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছি।
 এই শহরতো এমন ছিলো না তখন
 এই সময়তো এমন ছিলো না তখন।
 শেষ কবে আমি ভোরের আযান শুনেছি আমার মনে নেই
 শেষ কবে আমি সূর্যোদয় দেখেছি আমার মনে নেই
 শেষ কবে আমি বরান্দায়
 বেড়াতে আসা নাম না জানা নরোম পাখিটাকে
 দেখেছি পরম মমতায় আমার মনে নেই।
 আমারতো এসবের প্রয়োজন ছিলো না কোনো
 আমারতো ছিলো ক্ষমতার ডালপালা, মহীরূহ দম্ভের,
 আমারতো ছিলো চারপাশে চাপরাশি, কেরাণী ও ম্যানেজার
 আমারতো ছিলো ব্যস্ততা দিন-রাত নির্ঘুম
 সপ্তার এ-মাথা ও-মাথায় আমাকে যেতে হতো
 কোনো ভীন দেশে অথবা চীনদেশে ঘুমানোর কাজে।
 অথচ কী আশ্চর্য! এখন প্রতিদিন আমার ঘুম ভাঙে
 ভোরের আযানে
 প্রতিদিন আমি এই নিঃসঙ্গ বারান্দায় বসে দেখি সূর্যোদয়
 প্রতিদিন একটা পাখি এসে খেলা করে পায়ের কাছে নির্দ্বিধায়
 প্রতিদিন আমি মাকে ডাকি চিৎকার করে
 সন্তানকে ডাকি, রমণের সেই রমণীকে ডাকি প্রাণপন।
 অথচ কী আশ্চর্য একদিন শুধু আমাকেই চাইতো যারা
 আমার সেই চাপরাশী-ম্যানেজার-কেরাণীরা
 আমার সেই নেশায় বুঁদ হয়ে পড়ে থাকা বন্ধুরা
 রাতের রমণীরা,
 আমার সন্তান,
 আমাকে তাদের ভয়;
 আমার খাবার রেখে যাওয়া হয় দরজার বাইরের টুলে।
 আহারে!
 আজই প্রথম এই ভরা পূর্ণিমায়, এই নিঃসঙ্গ বারান্দায়
 কেন যেন মনে হলো আমার একটু কাঁদা উচিৎ।
 কেন যেন মনে হলো ঘিনঘিনে সেই বাজারের মাছ
 কানসা না তুলেই গিয়ে নিয়ে আসি বাসী-পঁচা
 তারপর ঘরে ফিরে খানিক বকাঝকা শুনি তার
 যাকে এতোদিন শুধু রমণ আর
 সন্তান উৎপাদনের প্রয়োজন ছাড়া
 অন্য কিছু আমি ভাবতেই পারিনি কোনোদিন।
 অদৃশ্য এই ভয়ের ভাইরাস থেকে যদি বেঁচে যাই
 ফুটপাথের সেই লালশাক কিনবো আমি প্রতিদিন
 দেখে-শুনে সস্তায়।
অভিমান কমলে তারপরে এসো
 ---------------------------------
 এখন তোমরা যাও,
 অভিমান কমলে তারপরে এসো।
 তাকে তোমরা কম অসম্মান করোনি।
 অথচ তোমাদের জন্যে তিনি কী না করেছিলেন,
 তোমাদের যেন কষ্ট না হয় তার জন্যে তিনি
 শীতল বুক পেতে দিয়েছিলেন।
 তোমাদের অভ্যেসগুলোকে আগলে রেখে
 তিনি কোথাও জল হয়েছেন
 কোথাও হয়েছেন অগ্নি অথবা বরফের সাদা রাত।
 না চাইতেই তিনি দু’হাতে উজাড় করে দিয়েছেন
 তার যা কিছু ছিলো সব।
 তোমাদের তিনি দুধে-ভাতে রাখতে চেয়েছিলেন
 প্রতি ঋতুতেই তিনি তাই পাল্টে নিতেন নিজেকে
 শুধু তোমাদের  জন্যে
 তিনি কখনও শ্রাবণের জল হয়েছেন
 নীল মেঘের নিচে হয়েছেন কখনও সাদা কাশ।
 তোমাদের কথা ভেবে বুকের মধ্যে তিনি
 সীলগালা করে রেখেছেন অগণিত আগ্নেয়গিরি।
 তিনি কোথাও বিস্তীর্ণ মরুভূমি হয়েছেন
 আবার কোথাওবা আদিগন্ত সবুজের বন
 সব তোমাদেরই জন্যে।
 সেই তোমরাই কিনা তাকে অসম্মান করলে যাচ্ছেতাই!!
 তাকে তোমরা বিবস্ত্র করলে,
 ছিন্নভিন্ন করলে তার সবুজের শাড়ী
 তার শীতল বুকের ভাঁজে-ভাঁজে গুঁজে দিলে বিষ
 তার শরীরের কলকল নীল জলে ভাসে তোমাদের
 যাবতীয় পেশাবের রং,
 তোমরা তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কেটেকুটে জুড়ে নিলে
 নিজেদের মতো করে।
 যখন তিনি দেখলেন হাতের জায়গায় হাত নেই তার
 পায়ের জায়গায় তোমরা মাথা নিয়ে গেছো
 তোমাদের প্রয়োজনমাফিক,
 তখনই তিনি জ্বলে উঠলেন দাউ দাউ দাবানল হয়ে
 যখন সহ্য করতে পারেননি আর অত্যাচার
 তখনই তিনি কেঁপে উঠেছেন সবকিছু নিয়ে তোমাদের
 অথচ তোমরা তখন ফিরেও তাকালে না।
 অবশেষে যখন তিনি দেখলেন
 তার বাকি বোকা সন্তান অভূক্ত আশ্রয়হারা
 যাদের তোমরা ছাড়া ছিলো না আর কেউ
 তখন তিনিতো করতেই পারেন অভিমান
 তখন তিনিতো নিতেই পারেন প্রতিশোধ।
 তোমরা বাদে এখন বাকিদের তিনি বুকে ধরে আছেন
 এখন তোমরা যাও,
 অভিমান কমলে তার, তারপরে এসো।
 -আবুল হোসেন খোকন
 ৮ এপ্রিল ২০২০/বনশ্রী
কে কারে দেখায় স্বপন
 ------------------------
 যার সাথে তুই বাঁধলি পরাণ এই অবেলায়
 সে কি তোরে সোনা ডাকে যখন-তখন
 আমার মতোন,
 কান্না শেষে কানে-কানে মুগ্ধ খেলায়?
 সে কি তোরে স্নানের শেষে
 গা মুছে দেয়?
 উদাস দুপুর বুকে নিয়ে
 আঙুল দিয়ে ছুঁয়ে ছুঁয়ে
 চোখের ভাঁজে-ঠোঁটের ভাঁজে
 বুকের তুমুল ওঠা-নামায়
 সুধা খোঁজে শিশুর মতোন?
 হত্যে দিয়ে পড়ে থাকে পায়ের কাছে
 অবশ দেহে নির্ণিমেষে দ্যাখে তোকে
 সুবোধ বালক অষ্টপ্রহর
 ধ্যাত্তেরিকা শুনে শাসন?
 তার কি আছে ভালোবেসে
 আমার মতো জল্লা জীবন?
 সে কি তোরে জ্বালায় ভীষণ নিরাবরণ
 বুকের মধ্যে মুখ লুকিয়ে ওমের আশায়,
 আঁকড়ে ধরে সেও তোকে এমনি ভয়ে
 গন্ধ খোঁজে তোর শরীরে আকুল হয়ে
 ছেলেবেলায় মায়ের মতোন?
 সে কি তোকে সেঁক দিয়ে দেয়
 পিঠের ব্যথায়
 জলে যেতে করে বারণ?
 মুখের ভাঁপে চশমা কাঁচের দাগ মুছে দেয়
 রাখে তোকে অহর্ণিশি
 বুকের কোণায় শ্বাসের মতোন?
 -আবুল হোসেন খোকন
 ২৬ মার্চ ২০২০/বনশ্রী
উষ্ণতা কাঙাল পুরুষেরা বাঁচে না বেশিদিন
 ..................................................
 আমার কেন যেন সবকিছু বাকি থেকে যায়,
 মাঝপথে কেন যেন সবকিছু ভুল হয়ে যায়।
 ছেলেবেলায় আমি একবার বৃক্ষ হতে চেয়েছিলাম,
 শিমুলের দানা ভেবে একবার সারারাত
 নিশিন্দার বীজ মুখে নিয়ে অপেক্ষায় ছিলাম প্রত্যুষের
 কেউ একজন বলেছিলো সেইকথা,
 আলো ফোটার আগেই যদি মুখে রাখা বৃক্ষের দানা
 উঠোনের কোণায় মাটি খুঁড়ে বুনে রাখা যায়
 তবে সেইখানে একদিন বৃক্ষ হওয়া যাবে।
 না ফোটা আলোয় সেদিন উঠোনের কোণায়
 ভুল করে আমি পুঁতে রেখেছিলাম
 শিমুলের বৃক্ষ ভেবে নিশিন্দার তিতা;
 আহারে...আহা...
 আমার কেন যেন সবকিছু ভুল হয়ে যায়
 বাকি থেকে যায় শিমুলের বৃক্ষ হওয়া।
 আমি একবার যাযাবর-সন্ন্যাসী হতে চেয়েছিলাম।
 আঁচলের গেরো খুলে ধীরে ধীরে
 মায়ের টকটকে লাল ঠোঁটে চুমু খেয়ে এক সন্ধ্যায়
 বলতেই সেইকথা, মা অনেক কেঁদেছিলো সারারাত,
 কি কারণে আমি তা বুঝতে পারিনি।
 এরপর বড় হতে হতে, যাযাবর-সন্ন্যাসী হতে হতে
 এখানে-ওখানে মায়ের গন্ধ খুঁজতে খুঁজতে
 কাঙাল আর দেউলিয়া হয়েছি শুধু
 কিছুই হয়ে ওঠা হয়নি আর
 বাকি থেকে যায় আমার হয়ে ওঠা, সবকিছু।
 একবার এক নারীকে আমি বলেছি সেইকথা।
 তার বুকে সেদিন আমি মায়ের গন্ধ পেয়েছিলাম।
 আকুলি কান্নায় আমি যখন সেই নারীর মধ্যে
 খুঁজি অন্য এক নারী
 শিশুর মতো তার ঠোঁটে আঙুল ছুঁয়ে খুঁজি
 মায়ের সেই টকটকে লাল ঠোঁট,
 মায়ের উষ্ণতা আর গন্ধ খুঁজি আমি পাগলের মতো-
 ভালোবাসাবাসি হয় না আর, নারী তখন পাশ ফিরে শোয়,
 কোনো ঝিরিকান্নার শিশু নয়, নারী শুধু ভালোবাসে পুরুষ-
 অথচ উষ্ণতা কাঙাল পুরুষেরা বাঁচে না বেশিদিন।
 নাগরিক এই যাযাবর সন্ন্যাসে
 ভালোবাসাবাসি, বেঁচে থাকাথাকি যাবতীয় এইসবে
 আমার কেন যেন ভুল হয়ে যায় সবকিছু,
 আমার কেন যেন সবকিছু বাকি থেকে যায়।
 -আবুল হোসেন খোকন
 ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০/বনশ্রী
লিলুয়া হাওয়ায় মনে হয় যাওনের তারিখ
 ..................................................
 পরাণতো আর এতোকিছু মানেনা পাখি 
 অমাবশ্যা-পূন্নিমায় কলিজায় তাই লাগে টান
 অন্তরে তাই বাইন্ধা নিরিখ চাইয়া থাকি
 বিষের ছোবল মারে সে আমারে, যারে ডাকি,
 যারে কই ব্যবধান।
 যারে তুমি দিয়াছিলা সংসার নুনে-ভাতে,
 শিমুলের তুলা ভেবে যারে দিয়াছিলা টান-টান,
 কষ্টের কুশ বোনা নিদ্রার সিথান সাথে।
 আমারেই কিনা শিখায় সে দড়ি হাতে,
 সে পড়ায় রোজ ভূমি আর দেহের ব্যবধান;
 জোনাক পক্ষীর মতো আন্ধারে আমারে
 লগন আর গোনে কলিজায় মারে টান।
 আহারে আমার পাখি আহারে...
 এ তুমি অনাবশ্যক দিয়াছো কাহারে
 যে বোঝে না নাড়ীর সঙ্গে নাড়ীর ব্যবধান।
 যে বোঝে না ঐখানে থাকে জন্মের নিরিখ,
 ভূমির ব্যবধানে দেহের লাগে না দড়ির সন্ধান
 কেউ কেউ থাকে না তাও থাকে দ্বান্দ্বিক,
 লিলুয়া হাওয়ায় মনে হয় তার যাওনের তারিখ।
 কও তুমি পাখি, এই কী তয় জন্মের দোষ-
 এতোই বেমানান?
 -আবুল হোসেন খোকন
 ১০ জানুয়ারি ২০২০/বনশ্রী
ছায়া, ভালোবাসা এবং ভূরিভোজ
 .......................................
 ক্ষমা করবেন,
 আর নিতে পারছি না বলে দুঃখিত।
 এযাবৎ কতো কিছুইতো খাওয়ালেন আপনারা-
 সবশেষে খুবলে নেয়া আমারই কলিজার ভূনা
 পরম মমতায় গরম রেঁধে খাওয়ালেন-
 ধুয়ে নিয়ে আমারই চোখের জলে।
 সেদ্ধ ধানের মতো দুপায়ের পাতায়
 ঠেলে-ঠেলে নিতান্ত করুণায়
 আমার সমুদয় কষ্টগুলো জড়ো করে একসাথে
 অতি যত্নে তাদের করে তুলেছেন
 টগবগে সাদা ভাত;
 সাথে দিয়েছেন অবহেলা-অবজ্ঞায়
 পুড়ে খাঁক হয়ে যাওয়া টুকরো টুকরো
 আমারই হৃদপিন্ড কড়া করে ভাজা।
 এতোকিছু কী একসাথে নামে গলা দিয়ে?
 জল চাইতেই এনে দিয়েছেন নিশিন্দার তিতা,
 জড়ো করা যতো উপেক্ষা ছিলো জীবনের
 সেইসব গুঁড়ো করে মেশানো শরবত।
 একে একে তুলে দিয়েছেন পাতে সুনিপুণ
 আমার যা কিছু অর্জন-অসম্মান,
 কান্নার দোপেঁয়াজা,
 বুকের কোণায় পুষে রাখা ভালোবাসাটুকু
 টান মেরে ছিঁড়ে নিয়ে-
 না পাওয়ার ক্ষোভগুলো
 মিহি করে বেটে শীল-নোড়ায়
 খাওয়ালেন এযাবৎ ভালোবেসে
 হেসে-হেসে নির্মম মমতায়।
 দয়া করে দেবেন না আর জন্মের কসম-
 দয়া করে খাওয়াবেন না আর কষ্টের কসম-
 যদি উগলে আসে সবকিছু গলা ঠেলে
 যদি উগলে আসে যাবতীয় বিষ-
 জীবনের যতো আক্ষেপ-অপমান
 অসম্মানগুলো যদি জ্বলে ওঠে দাউ-দাউ
 যদি ক্ষোভগুলো টুঁটি চেপে ধরে ময়দানে
 গর্দানে বাঘের কামড়ে যদি লহমায় শুষে নেয়
 এইসব কথিত ভালোবাসা-বাসি করুণা নির্মম
 তবে কিন্তু সব খেলা শেষ, সব শিল্পের অবসান
 বুঝে নেবে সময় কড়ায়-গন্ডায়
 ফেলে আসা জীবনের হিসেব-নিকেশ।
 অতঃপর সময়ই বলে দেবে
 বেলাশেষে কে থাকে পাশে আপনার
 কে থাকে ছায়া হয়ে সাথে অহর্ণিশ-
 আমি ছাড়া?
 -আবুল হোসেন খোকন
 ২৩ ডিসেম্বর ২০১৯/বনশ্রী
শব্দটা ছিলো মাত্র তিন অক্ষরের
 ........................................
 তিন অক্ষরের একটা ছোট্ট শব্দ
 জলাতঙ্কে পাওয়া সারমেয় হয়ে
 আমায় তাড়া করে অবিরাম।
 বুকের মধ্যে কাঠঠোকরার মতো অহর্ণিশ
 ঠুকরে খায় হৃদপিণ্ডের শিখণ্ডী শীশমেহাল-
 মগজের কোষে-কোষে বেপরোয়া রক্তপাত
 আমায় টেনে-টেনে নিয়ে যায় সৌম্য সন্ধ্যায়
 লাশকাটা ঘরে পাথরের ঠাণ্ডায়।
 তিন অক্ষরের একটা ছোট্ট শব্দ
 ডাকাতের মতো এসে রোজ
 দরজায় কড়া নাড়ে নির্ঘুম রাতে
 লুটপাট করে নিয়ে যায়
 তুলে রাখা যাবতীয় ভালোবাসা
 খুনসুটি-আহ্লাদ-সিথানের কথকতা,
 সে আমার কলিজায় মারে টান
 চোখ দু’টো তুলে নিয়ে বাজায় ডুগডুগি
 আঁছড়ে-পাছড়ে রেখে যায় সন্ন্যাসী সংসার;
 প্রতিদিন প্রতিরাতে
 সে আমায় সর্বশান্ত করে ফেলে রেখে যায়
 অচেনা কোনো বিষবাষ্পে গলিত বন্দরে একা।
 তিন অক্ষরের একটা ছোট্ট শব্দ আমায়
 গনগনে চিতায় পুড়ে তুলে নিয়ে যায় নির্দ্বিধায়
 অতি চেনা যমুনায় কালসাপ ঢেউয়ের ফণায়,
 দিনভর ঘুরে ঘুরে রেললাইন-পীচগলা রাজপথ
 রেড সিগন্যাল-বাসের টার্মিনাস
 জলের তৃষ্ণায় সে আমার লাল চোখে ঘষে দেয়
 দগদগে মরিচের ঝাল,
 সে আমায় পোড়ায় জলে আর হুতাশনে
 সেদিনের পর থেকে নিরন্তর-
 যেদিন কালোমেঘ ঝড়ে লণ্ডভণ্ড করে দিয়ে সব
 তুমি বলেছিলে তিন অক্ষরের সেই শব্দটুকু নির্বিকার
 আমি যেন তোমায় ‘বিরক্ত’ না করি আর।
 -আবুল হোসেন খোকন
 ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯/বনশ্রী
কষ্ট গিলে খেতে এখন আমার কষ্ট হয় খুব
 ..................................................
 কোনো প্রস্থানেই এখন আর তেমন কষ্ট হয় না,
 যেমন কোনো আনন্দ হয় না প্রত্যাবর্তনে।
 যে চিঠি কোনোদিন ডাকবাক্সের গহ্বর দেখেনি
 সে কী করে বুঝবে প্রাপকের হাতে পৌঁছানোয়
 আনন্দ কতোখানি?
 না-পাঠানো চিঠির মতো পড়ে থেকে থেকে
 এখন আর কোনো প্রস্থান কিংবা প্রত্যাবর্তনে
 আমার এসে যায় না কিছু।
 তবুও চলে যাবে বলে এই যে এতো আয়োজন,
 এতো-এতো ভালোবাসা-বাসি,
 এতো-এতো রাত জাগা, যাবতীয় উপাখ্যান
 কী এমন তুমুল প্রয়োজন ছিলো এসবের?
 কী এমন প্রয়োজন ছিলো
 লুকোনো বিষের পেয়ালায় সঞ্জীবনী সূধা ঢেলে
 ঠোঁটে ঠোঁট উষ্ণতায় ডুবে যাওয়া
 কালিন্দীর ঠান্ডায়;
 অথবা কোনো শ্রাবণের ভরা পূর্ণিমায়
 পুড়ে-পুড়ে ঘোলা চোখ হারানো অন্তর্বাস,
 লাল সন্ধ্যায় মুগ্ধ নিথর দিঘীতে ডুবসাঁতার?
 প্রয়োজন ছিলো না কোনো এতো আয়োজন।
 আমিতো চাইনি এসবের কিছু কোনোদিন।
 চেয়েছি শুধু পোড়া ঘরখানি যেন
 পোড়ে না আবারও,
 যেন কোনো প্রাপকের হাত সামান্য মমতায়
 ভাঁজ খুলে খুলে পড়ে নেয় অনাদরে পড়ে থাকা
 ধূলোজমা জীবনের চিঠি।
 কষ্টের দলা গিলে খেয়ে আমি তার পায়ে শুধু
 সঁপে দেবো কান্নার নুনে ভরা সমুদয় কলস।
 অথচ, আবারও সেই প্রত্যাবর্তন,
 অথচ আবারও সেই কলিজায় টান
 আয়োজন প্রস্থানের।
 এখন আর তেমন কষ্ট হয় না এসবে।
 যদিও, কষ্ট গিলে খেতে এখন-
 আমার কষ্ট হয় খুব...
 -আবুল হোসেন খোকন
 ১৩ ডিসেম্বর ২০১৯/বনশ্রী
কেউ একবার ফিরেও তাকালো না কোনোদিন
 ..........................................................
 একমুঠ ভালোবাসার জন্যে কতো যে ছুতো-নাতা খুঁজি
 কতোবার যে ফিরে ফিরে চাই চলে যেতে যেতে
 কেউ একবার ফিরেও তাকালো না কোনোদিন।
 চোখে যদি কিছু একটা পড়েছে কখনও
 বালিকণা কিংবা বাতাসী পোকা
 অথবা তেমন কিছুই না হয়তো,
 কেন যেন মনে হতো আঁচলের ভাঁপ দিয়ে
 মুখের উপর নিঃশ্বাস ফেলে কেউ যদি একবার
 পাক দেয়া আঁচলের শক্ত ডগায় খুঁজে দিতো
 এইসব বানানো বালিকণার ছুতো আর আহ্লাদ-
 তবে ঐটুকু দৃশ্য বুকে ধরে পার করে দেয়া যেতো
 গোটা একটা জীবন,
 বোঝেনি তা কোনোদিন কেউ।
 আঁচলের ভাঁপতো দূরে থাক,
 অন্তত কেউ একবার মমতায় বলেনি কোনোদিন
 জলের ঝাপ্টা দিতে চোখে-মুখে,
 বানানো ছুতোয় আমার চোখ পুড়ে যায়
 অবিরত-অবিরাম
 একবার কেউ ফিরেও তাকালো না।
 একমুঠো প্রশ্রয় আর ঠান্ডা জলের লোভে
 কতো না দুপুর আমি আজদাহা রোদে ঘুরে ঘুরে
 চোখ-মুখ লাল করে নিয়ে বসে থেকেছি অপেক্ষায়
 কেউ যেন এসে থুতনি ছুঁয়ে অন্তত একবার
 মায়াচোখে বলে- ‘খাওয়া হয়নি বুঝি সারাদিন কিছু?’
 বানানো জ্বরের ঘোরে প্রলাপ বকে-বকে কতোদিন
 আমি শুধু অপেক্ষায় থেকেছি
 ঠান্ডা কোনো হাত যদি একবার এসে রাখে হাত
 জ্বরের ছুতোয় এই পোড়াকপাল কিংবা সন্ন্যাসে।
 ক্লান্তিতে কারও বুকে মাথা রাখবো বলে
 কতো না রাত আমি চোখ খুলে রেখে কাটিয়েছি নির্ঘুম,
 কতো না শ্রাবণ কাটিয়েছি বৃষ্টির ফোঁটা গুনে,
 কতোবার যে সক্রেতিস হতে চেয়ে
 চুমুকেই শেষ করে বিমোহিত হেমলক
 খালি পেয়ালার পাশে অপেক্ষায় থেকেছি কতোদিন
 আসে যদি কেউ,
 কেউ যদি ভুল করে তুলে নিয়ে যায় একবার-আহারে...
 ফিরেও তাকালো না কেউ
 কোনো ছলে কোনো ছুতোয় কোনোদিন,
 শুরু কিংবা এই একলা বেলায়, একলা ভেলায়
 বেলাশেষে...
 -আবুল হোসেন খোকন
 ১৩ নভেম্বর ২০১৯/বনশ্রী
তোমাকে ভুলতে আরেকটু সময় লাগবে আমার
 .......................................................
 বুকের বাঁপাশে রাখা তোমার চোখজোড়া
 কোনোমতে সরানো গেলো না এখনও,
 তোমাকে ভুলতে হলে তাই
 আরেকটু সময় লাগবে আমার।
 নিঃশ্বাস নিতে হবে এটা যেমন মনে রাখতে হয় না
 ঠিক তেমন করেই মাঝে-মাঝে ভুলে যাই
 তোমাকেও ভুলে যেতে।
 তোমাকে ভুলতে হলে তাই
 আরেকটু সময় লাগবে আমার।
 বৃষ্টির ফোঁটা যতোগুলো গুণতে পারো একসাথে
 অথবা গুণতে পারো না যতোগুলো
 তারও চেয়ে বেশিবার যদি মনে পড়ে,
 যদি এখনও দেহের আনাচে-কানাচে
 প্রতিটি কোণায়, প্রতিটি লোমকূপে দেখি
 আটকে থাকে আলুথালু মেঘ আর গরম নিঃশ্বাস,
 দেয়ালের পলেস্তারায়-সংসারে-শরীরে
 এখানে-ওখানে যদি লেগে থাকে এখনও
 দগদগে ডাকাতের মতো
 তোমার কানামাছি-খুনসুটি-আহ্লাদ
 তবে কান্নার জল ছাড়া পৃথিবীর কোন্ জলে বলো
 ধুয়ে-মুছে নেবো এইসব ক্ষতচিহ্ন-এইসব দাগ?
 বললেই তো আর রাতারাতি হয় না এসব,
 সময় লাগে গোছগাছে, বেঁধেছেদে নিতে
 টুক্-টাক্ পড়ে থাকা ধুলোজমা স্মৃতির কৌটো
 আদরের শিশি, ঘামেভেজা জোনাকের রাত,
 সময় লাগে কিছুটা হলেও।  
 তোমাকে ভুলতে হলে তাই
 আরেকটু সময় লাগবে আমার।
 -আবুল হোসেন খোকন
 ১০ অক্টোবর ২০১৯/বনশ্রী
একটি হাস্যকর প্রস্থান
 .................................
 চোখের জলের মূল্য জানিস?
 ওজন কিংবা খুঁটিনাটি?
 কতোটুকু কষ্ট পেলে শীতল মেঘে আগুন জ্বলে
 আগুন ভাসে শ্রাবণ জলে,
 চোখের কোণায় নোনাজলে কষ্ট জ্বলে,
 বুকের কোণায় একলা নীরব অভিমানে
 বুঝিস কিছু, কোনোদিনও, মূল্য কতো
 চোখের জলের, হুতাশনের?
 বুঝিস কিছু, বলিস কথা যা ইচ্ছে তাই,
 কোন্ কথাটা কতোটুকু মনকে পোড়ায়
 সকাল-বিকেল-রাত-বিরাতে ছোবল মারে
 মগজ জুড়ে, ঝাউকান্না দীর্ঘ শ্বাসে
 উথাল-পাথাল সব গিলে খায় গেরস্থালীর;
 কোন্ সীমানা ছাড়িয়ে গেলে মানুষ শুধু
 তাকিয়ে থাকে বাক্যহারা নির্ণিমেষে
 ফেলে আসা পথে তাকায় পেছন ফিরে
 স্মৃতির পাতায় শব্দ খোঁজে জব্দ ব্যাকুল?
 সেসব যদি বুঝতি কিছু একটু হলেও
 তাহলে আর এই নিশিথের আহাজারি, চন্দ্রগ্রহণ
 বিসর্জনের মহামারী চারদেয়ালের অন্ধকারে
 আমার ঘরে থাকতো পড়ে বেলাশেষে বল?
 চোখের জলের ওজন কতো জানিস নাতো
 জানবি আমার শবযাত্রায় চল।
 -আবুল হোসেন খোকন
 ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯/বনশ্রী
আহারে, আমার মুখ ঢেকে যায় সবুজ শ্যাওলায়
 ........................................................
 একবার একজন আমাকে হাত ঈশারায় কাছে ডেকেছিলো,
 আমি বুঝতে পারিনি;
 একবার একজন আমাকে পদ্মপুকুর থেকে মুখ তুলে বলেছিলো
 কবিতাই বোঝো শুধু? মানুষ বোঝো না?
 আমি বুঝতে পারিনি।
 একবার একজন খুব আনমনে বলেছিলো
 তার বুকে নাকি বাস করে তেত্রিশ কোটি কবিতা।
 আমি তন্নতন্ন করে তার বুকে বহুদিন লাঙল চষেছি,
 মাধুকরী জ্যোৎস্নায় টান-টান পাহাড়ী শয্যায়
 ফালি-ফালি আলোয় গলে যাওয়া দেহের ভাঁজ খুলে-খুলে
 বনপাংশুল ঝিরিকান্নায় কবিতার সেই পংক্তির খোঁজে
 আমি তারে তছনছ-সর্বনাশ করেছি বহুদিন,
 তারপর চলে যেতে যেতে সে বলেছিলো একদিন
 মেহেদির সবুজ পাতায় কবিতা থাকে না কখনও,
 কবিতারা বসবাস করে তার মজ্জায়-গভীরে,
 ক্ষতক্ষিত অন্তরলালে, অন্তরালে-
 সেইখানে খুঁজে দেখো।
 আমি বুঝতে পারিনি।
 একবার একজন আমাকে অপেক্ষায় রেখে
 আর আসেনি কোনোদিন; আমি বুঝতে পারিনি।
 একবার একজন আমাকে ভালোবাসবে বলে
 মন্দ বেসেছিলো খুব; আমি তাও বুঝতে পারিনি।
 ঈশ্বর হবো বলে জীবনের যাবতীয় খেরোখাতা-বীজধান
 সুখের লুকোনো নাকছাবি তার হাতে তুলে দিয়ে
 দেউলিয়া হয়ে গেছি আমি কোনো এক শ্রাবণের রাতে;
 ঠোঁটে ঠোঁট রেখে মনসার তপ্ত নিঃশ্বাসে
 সেই রাতে বলেছিলো সে-
 সময় পেলে একদিন এসে ভালোবেসে যাবে এই সন্ন্যাস।
 অতঃপর অপেক্ষায় থেকে থেকে বহুদিন-বহুরাত
 বুঝতে পারিনি আমি, আহা-
 মন্দ বেসে-বেসে তার সময় হয়ে ওঠেনি আর,
 ভালোবাসবার।
 একবার একজন আমাকে বলেছিলো করুণায়,
 কষ্টগুলো সে নাকি একদিন এসে মুছে দিয়ে যাবে সব।
 ইলিশের ফুলে ওঠা পেট চিড়ে সাধ্যের অতীত আহ্লাদে
 মাখা ভাত মুখে তুলে দেবে ঈশ্বরী হয়ে পরম মমতায়,
 আমি বুঝতে পারিনি।
 অথচ সেই থেকে আমি ধূলোজমা কষ্টগুলো খুঁজেপেতে
 সামনে নিয়ে বসে আছি অহর্ণিশ,
 কখন সে এসে মুছে দিয়ে যাবে এইসব;
 অথচ সেই থেকে আমি এক দুধের বালক
 হা’ হয়ে পাত পেতে বসে আছি দিন-রাত
 কখন সে এসে মুখে তুলে দেবে লুকোচুরি মমতায়
 ভাতে মাখা ইলিশের গোল-গোল দলা।
 সময় তার হয়ে ওঠেনি কোনোদিন আর,
 এতোটুকু করুণার, আমি বুঝতে পারিনি।
 বুঝতে পারিনি আমি- এভাবেই কতোজন
 এলো-গেলো, ভূগোল-নামতা-ধারাপাত শেখালো,
 বোঝা না বোঝায়, বেলা-অবেলায়
 চেয়ে চেয়ে দেখি আমি-
 বুঝি আমি চারিদিকে আমার শেকড় গজায়;
 বুঝি আমি, ভাতের দলা মুখে পেতে নয়,
 ফেঁপে ওঠা কষ্টের বিস্ময়ে
 আমার হা’ হয়ে যাওয়া মুখে আর চোখে
 অনাগত অনাহুত ফসিলের ঘ্রাণ, আহারে-
 দিনে-দিনে ঢেকে যায় সবকিছু আমার
 সবুজ শ্যাওলায়।
 -আবুল হোসেন খোকন
 ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯/বনশ্রী
 
সুন্দর
ReplyDelete