আমার একদিন সব হবে-
খাঁ খাঁ রােদে তােমার মতােন, অমন একটা ছাতা হবে
বাদল দিনে বৃষ্টিভেজা, নীল মলাটের খাতা হবে।
ভােরের বেলা পা ডুবাতে, ঘাসফুলেদের মেলা হবে
যখন তখন কষ্টগুলাে ঘুমপাড়ানি বেলা হবে।
আমার একদিন সত্যি হবে-
রােদ পােহানাে চাদরখানা, শীত সকালে আমার হবে
নীল যে বােতাম আজ ছিড়ল, সেও সেদিন ঐ জামার হবে।
উলের ভেতর চুপটি থাকা, অপেক্ষারাও ক্লান্ত হবে।
ক্লান্ত হাতে একখানা হাত, স্পষ্ট ছুঁয়ে কথা হবে
শুকিয়ে যাওয়া স্বপ্নগুলাে সবুজ তরু, লতা হবে?
আমার একদিন সত্যি হবে-
পথের ধুলাের ঝড়ে, গন্ধমাখা আঁচল হবে।
আয়নাজুড়ে চুপিসারে, চোখভর্তি কাজল হবে।
হঠাৎ নামা সন্ধ্যে বেলায়, আলসেমিতে আদর হবে।
বুকের ভেতর লুকিয়ে থাকা, চুপ শিশুটি বাদর হবে।
রাত দুপুরে মাথার নিচে, একটা মাত্র নালিশ হবে।
তােমার অমন ওঠার সিঁড়ি, হয়তাে সেদিন নামার হবে
কিংবা সেদিন আমি ছাড়া, আর সকলি আমার হবে।
কেউ নেই
সাদাত হোসাইন
আমি ভাবতাম পথ হাঁটলেই পথ ফুরােবে,
কাঁটা ডিঙালেই শিশিরভেজা আস্ত গােলাপ।
আমি ভাবতাম রাত পােহালেই সকাল হবে রােজ,
জানালাজুড়ে একটা দুটো পাখি থাকবে।
আলাে থাকবে, কফির কাপে ধোঁয়া থাকবে।
তােমার হাতের ছোঁয়া থাকবে।
আমি ভাবতাম ভালােবাসলেই তুমি থাকবে,
আঁচল ছুঁতেই এলিয়ে যাবে তৃষ্ণা বুকে।
কানের কাছে ফিসফিসানি কাব্য হবে,
বৃষ্টি নেমে সন্ধ্যা হবে, রােজ রজনিগন্ধা হবে।
আমি ভাবতাম, কান্না শেষে দুপুর রােদে হাসি থাকবে,
রাত্রিগুলাে জোছনামাখা স্বপ্ন হবে।
হাতের মুঠোয় হাত থাকবে, চোখের কোণায় রাত থাকবে।
রাত্রিজুড়ে এলােমেলাে চুল থাকবে,
ঠোঁটের ভেতর ইচ্ছে করে ভুল থাকবে।
আমি ভাবতাম পথ হাঁটলেই পথ ফুরােবে।
পথের শেষে ঘর থাকবে, গ্লাসভর্তি জল থাকবে,
মন খারাপের প্রহরগুলােয় তােমায় ছুঁয়ে মন থাকবে
এখন দেখি পথ হাঁটলেও পথ থেকে যায়
বুকের ভেতর শূন্য কেমন মাতাল হাওয়ায়!
আমি ভীষণ একলা মানুষ
সাদাত হোসাইন]
আমি ভীষণ একলা মানুষ,
আমি ভীষণ আমার ভেতর থাকি।
যত্ন করে খুব খেয়ালে রােজ,
‘আমি’টাকে আমার ভেতর রাখি
আমি ভীষণ অভিমানের মেঘ,
আমি ভীষণ ক্লান্ত একা ভোর।
কষ্টগুলাে রােজ জমিয়ে ভাবি,
সুখগুলাে সব থাকুক না হয় তাের।
আমি ভীষণ মন খারাপের দিন,
আমি ভীষণ কান্নামাখা রােদ।
অশ্রুগুলাে বর্ষা জলে ভাসাই,
ঋণগুলাে সব না হয় হলাে শােধ।
আমি ভীষণ স্মৃতির খেরোপাতা,
মলাটজুড়ে হাজার আঁকিবুঁকি।
‘আমি’টাকে আমার ভেতর রাখি।
যেতে চাইলে যেও
সাদাত হোসাইন]
যেতে চাইলে যেও
নিয়ম করে বুকের ব্যথার ওষধটুকু খেও।
রােজ সকালে ঘুমটা ভেঙে একটুখানি হেঁটো,
সুখের সকল গল্প এবার যত্ন করে এঁটো।
যেতে চাইলে যেও-
আমার চেয়ে ঢের ভালাে আর কাউকে হঠাৎ পেও।
তার আঁচলে শিউলি ফুলের মন ছিটিয়ে দিও,
ভালােবাসার সবটা ঢেলে হৃদয় কিনে নিও
চাইলে যেতে যাও-
রাতদুপুরে লাগলে একা ওষুধ কিনে নাও।
ওষুধটুকু যাচ্ছ ফেলে, এমনি করে কই?
আমি কি আর তােমার বুকের ব্যথার ওষুধ নই?
1
চলে গেলে মুছে যেও ধুলোয় লেগে থাকা পায়ের ছাপ,
হাওয়ায় ছড়িয়ো না গায়ের ঘ্রাণ।
ওইখানে রেখে যেও যা ছিলো আমার।
রেখো যেও ভুলভাল স্মৃতির রুমাল।
চলে গেলে মুছে যেও দেয়ালের রঙ,
যেখানে যা ছায়া হয়ে ছিলো, তার সব নিয়ে নিও,
নিয়ে যেও মায়া হতো যা, তাও।
ওইখানে রেখে যেও অবহেলা যত,
যত ছিলো মিছে আর ভান।
চোখের পাতায় যদি লাগে কিছু ব্যথা, রেখে যেও তাও,
এইখানে এই বুকে জায়গা অনেক।
চলে গেলে ভুলে যেও, ফিরে আর এসোনা এ পথে,
এইখানে বৃক্ষের মতো, থেকে যাক কেউতো শপথে।
দরজায় লেগে থাক খিল, লেগে থাক দেয়ালে অমিল,
জানালায় লেখা থাক, ছিলো না কোথাও কেউ,
ভালো কেউ বাসেনি কখনো।
চলে গেছে যারা, তারা কেউ, এইখানে ছিলোনা কখনো।
2
শুনছো মেয়ে?
এই যে ধূসর মেঘের খামে, বর্ষা নামে,
জমছে কতো ফুলের রেণু চুলের ভাঁজে।
দখিন হাওয়া হঠাৎ এসে, আঁচল ভাসায় সুবাস মেখে,
জলের কণা আলতো করে গাল ছুঁয়ে যায়।
ছুঁতে পারো, তুমিও খানিক?
শুনছো মেয়ে?
একটা চিঠি ঘুরে বেড়ায় এই শহরে, ঠিকানা নেই,
সেই চিঠিটার বুকের ভেতর জমছে ব্যথা সঙ্গোপনে,
বাতাস ভারি দীর্ঘশ্বাসে, কী যায় আসে!
একটা কেবল দুপুর থাকে, খা খা রোদের,
একটা খাঁচায় হলুদ রঙের পাখি থাকে,
সকাল দুপুর সেই পাখিটার বুকের ভেতর,
কে জানি কে আকাশ আঁকে!
শুনছো মেয়ে, সেই আকাশে একলা একা কে উড়ে যায়?
কার কী ভুলে?
ঠিকানাহীন, চিঠির মতো বাউন্ডুলে।
শুনছো মেয়ে, এই শহরে একটা বুকে,
তোমার নামে সকাল, দুপুর, সন্ধ্যা নামে!
3
আমাকে হারাতে দিলে, নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তিতে ছেয়ে যাবে তোমার শহর।
একটা হিজল ফুলের গাছ,
একটা শান্ত পুকুর ঘাট,
ঘাটের পাশে পাখি, পাখির নামটি ডাহুক পাখি হলে, তাহার দুটি চোখ,
চোখের ভেতর মায়া, মায়ার ভেতর তোমার নামটি লেখা।
একটা আদিগন্ত মাঠ, মাঠের পাশে ঘর, ঘরের পাশে একটা সজল দীঘি।
অনন্ত এক কাব্যকথার রাত, রাতের ভেতর দিন, দিনের ভেতর তোমার আমার হাজার খেরোখাতায়, হাজার স্মৃতির ঋণ।
একটা হাতের ছোঁয়া, ছোঁয়ার ভেতর ছায়া, ছায়ার ভেতর আটকে থাকা তুমি,
তোমার সকল কান্না দহন দিন।
চারদেয়ালের ভেতর হঠাৎ হাওয়া, হাওয়ার বুকে ঘুমপাড়ানি গান, গানের ভেতর মন।
একটা অমল আকাশ, আকাশজুড়ে ইচ্ছেমত ওড়া, রাত পোহাবার বাঁশি।
একটা অশত্থ গাছ, গাছের পাশে জলের কলরোল। ভালবাসার নহর।
বুকের ভেতর নদী।
এসব হারাও যদি?
এই শহরটা জানে, এমন করে কনক্রিটের বুকে, আর কাঁপে না কেউ।
কারো হৃদয় আর কাঁদে না, কেউ দেবে না আর, এমন মায়া মেখে।
আমার ছোট্ট বুকের ভেতর কেবল, কাঁপতো হৃদয়, কাঁদতো ভীষণ, তোমায় ভালোবেসে।
আর কে এমন, ভালোবাসার দামে, কিনবে তাহার প্রহর?
আমাকে হারাতে দিলে, নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তিতে ছেয়ে যাবে তোমার শহর।