Wednesday, April 27, 2022

স্বপ্নীল চক্রবর্ত্তী

 

-একটা তুমির গল্প
©স্বপ্নীল চক্রবর্ত্তী

তুমি বলেছিলে রাতে তোমার ঘুম হয় না,
আমি বুঝেছিলাম সময় চাইছো;
তুমি বলেছিলে "আকাশে কী মেঘ করেছে দেখো?",
আমি বুঝেছিলাম তোমার মন খারাপ।
তুমি বলেছিলে "চুলে জট বেধেছে";
আমি বুঝেছিলাম তুমি স্পর্শ চাইছো।
তুমি বলেছিলে আজ বিকেলে তুমি বারান্দায় থাকবে;
আমি বুঝেছিলাম সাক্ষাত চাও।
তুমি বলেছিলে,অন্ধকারে আমার বড্ড ভয়;
আমি বুঝেছিলাম তোমার আমাকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে;
তুমি বলেছিলে সমুদ্রে যাবে;
আমি বুঝেছিলাম পাশাপাশি হাত ধরে হাঁটতে চাইছো।
তুমি বলেছিলে নীল প্রিয় রঙ,
আমি বুঝেছিলাম তোমার কষ্ট হচ্ছে;
তুমি বলেছিলে ঠোঁট ফেটেছে,
আমি বুঝেছিলাম চুমু খেতে চাইছো;
তুমি বলেছিলে অংক ভালো লাগেনা,
আমি বুঝেছিলাম তুমি কবিতা ভালোবাসো;
তুমি বলেছিলে " আজ তাড়াতাড়ি ঘরে ফিরতে হবে",
তুমি বলেছিলে,এই হুটহাট দেখা করা,অসময়ে ফোন করা আর তোমার ভালোলাগছেনা;
আমি বুঝে গিয়েছিলাম,বিচ্ছেদ চাইছো।
তারপর অলিখিত সাক্ষরে তুমি যখন ইনভিজিবল কোর্টে
 আমার বিরুদ্ধে বিচ্ছেদের মামলা ঠুকে দিলে;
আমি বুঝেছিলাম তুমি মুক্তি চাও।
এরপর সব বুঝে যখন আমি দার্শনিক,
সব মিটিয়ে তুমি যখন অন্য ঘরের শো-পিস,
একদিন আমাদের দেখা হলো তখন;
তুমি জিজ্ঞেস করেছিলে,"কেমন আছো?"
আমি বুঝে গিয়েছিলাম তুমি ভালো নেই। 
 
 
 
 
যদিও গণিত সহজ
-স্বপ্নীল চক্রবর্ত্তী
 
কেউ ঘরে ফেরে,কেউ ঘর ছেড়ে পালায়
যদিও রাস্তা একটাই-
ফিরে যাওয়া আর ছেড়ে চলে যাওয়া মানুষের সেই বিষণ্ণ 
কোলাহলের ভেতর বিউগল বাজাচ্ছেন একজন বালিকা 
স্বভাবের মহিলা,চোখে শোকসভার করুন মাহফিল,
ঠোঁটে বুনো ঝোপের অচেনা ফুল আর শাড়িতে স্কুলপালানো 
ছেলেদের সিনেমা দেখার নেশা।
নেশা থেকেই যাবতীয় সর্বনাশের শুরু-
আমার সর্বনাশ ভালো লাগে,মাঝে মাঝে স্বপ্নে দেখি 
পৃথিবীটাকে আপেলের মতো টুকরো টুকরো করে
 কেটে পরিবেশন করা হচ্ছে জাতিসংঘের কোনো জরুরী অধিবেশনে,
মাঝে মাঝে দেখি আমি ভুল করে ঢুকে গেছি কোনো প্রত্যাখ্যাত কিশোরীর অর্ধেক স্বপ্নের ভেতর,বেরোবার রাস্তা নেই!
আবারো বলছি আমার সর্বনাশ ভালো লাগে।
বিউগল,পূর্ন বয়স্ক মহিলার বালিকা স্বভাব,আর পৃথিবীর আসন্ন সংকটের কথা ভাবতে ভাবতে আমি তোমাকে গোপনে ছুঁয়ে দেখার পাপের ব্যাপারটা ভুলে যাবো একদিন।
তোমাকে ভুলতে সময় লাগবে,কবে নাগাদ তা এখনই বলতে পারছি না৷

 
 
 
 
প্রস্থান
©স্বপ্নীল চক্রবর্ত্তী
 
ছেড়ে চলে যাচ্ছো? যাও।
ছেড়ে চলে যেতে নির্দিষ্ট কোনো কারণের দরকার হয় না,জানি। 
কিন্তু একসাথে দুজনেরই যেদিন ঘর বাধার অসুখ হয়েছিলো? 
সে অসুখটা সারিয়ে দিয়ে যাও।
ছেড়ে যাচ্ছো যাও,আটকানোর আমি কে?
কিন্তু যেদিন দিব্যি দিয়েছিলে,
আমাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার আগে যেনো তোমার মৃত্যু হয়?
না না,তোমার মৃত্যু হোক আমি চাইছিনা,
তুমি শুধু যাওয়ার আগে ওই দিব্যিটা ফিরিয়ে নিয়ে যাও।
চলে যাচ্ছো যাও,যেতে বারণ করবোনা,করলেও তুমি শুনবে কেনো?
শুধু আমাকে তোমার সাথে কাটানো সব সকাল দুপুর রাতের স্মৃতি ভুলিয়ে দিয়ে যাও।
ছেড়ে চলে যাও,
যাওয়ার আগে আমার দেয়া সবকটা চিঠি,
আমার জেগে থাকা রাত,ধার করা ঘুম,একুশটা চুমু ফিরিয়ে দিয়ে যাও।
ছেড়ে চলে যাবে? যাও।
তোমাকে কখনো ঘৃণা না করেই বাঁচতে পারবো এমন কোনো ছোট্ট একটা কারণ বলে যাও।
ছেড়ে তুমি চলে যেতেই পারো ;
বুকের ভেতর শব্দ হলে হোক,
চোখের শ্রাবণ মাসে কার কী আসে যায়;
তুমি শুধু তোমার বলা সত্যি কথার মতো মিথ্যেগুলোকে অবিশ্বাস করা শিখিয়ে দিয়ে যাও।
ছেড়ে চলে যাবে,যাও;
পায়ের শব্দে চাপা পড়ে যাক অযুত-নিযুত দীর্ঘশ্বাস,
তুমি শুধু আমার নেওয়া প্রতিটি দীর্ঘশ্বাসে তোমাকে আগলে রাখার অভিশাপ দিয়ে যাও।
 

 
 
ভালোবাসা থাকুক
©স্বপ্নীল চক্রবর্ত্তী
 
সিঁড়ির নীচে একটা ছোট ঘর,সময়মতো জল আসে না,রান্নাঘরে শ্যাওলা জমে থাকে,বেডরুমে আরশোলা আর ছাঁড়পোকার নিয়মিত যাতায়াত। শাড়ি,শার্ট এদিকে সেদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে,মাঝে মাঝে তরকারি পুড়ে যাওয়ার গন্ধ পাওয়া যায়-
মাঝরাতে ওই ঘর থেকে একটা ছেলের কবিতা পড়ার শব্দ শুনি,একটা মেয়ে ছুটির দিনের ভর দুপুরে খিলখিল করে হেসে ওঠে -
ওখানে ভালোবাসা থাকে।
রাস্তার পাশে বস্তা দিয়ে বানানো একটা নোংরা বিছানা,স্বামীটা মাতাল আর বউটা মস্ত ঝগড়াটে। তবুও হুট করে বৃষ্টি নামলে ওরা ভেজা পাখির মত গুটিসুটি হয়ে বসে থাকে একটা ভাঙা দোকানের চালের নীচে। বউ বাজের শব্দে ভয় পেলে স্বামী খপ করে হাত ধরে বলে, "ডরাইস না বউ, আমি তো আছি। "
ওখানে ভালোবাসা থাকে।
বৃদ্ধাশ্রমে কপালভর্তি সিঁদুর পরিহিতা একজন বুড়ি মা রোজ রোজ শয্যাশায়ী স্বামীর কপাল ছুঁয়ে ঈশ্বরের কাছে ফিসফিস করে কী যেনো বলে যান,ঈশ্বর শুনতে পান কিনা জানি না তবুও ডাক্তার অবস্থার উন্নতি হচ্ছে বলে লিখে দেন একটা ব্যস্ত প্রেসক্রিপশনে৷
আমি নিশ্চিত,ওখানেও ভালোবাসা থাকে।
স্মৃতিতে,সিঁথিতে,আদরে,ঝগড়া আর অভিমানে,অন্ধকারে,ভোরে,হিসেবের খাতায়,মৃত্যুশয্যায়,আড়ালে,লজ্জায়,অসময়ের বৃষ্টিতে অথবা তীব্র শীতে,মিছিলে,সভায়,পার্কে, ব্যস্ত অফিস শেষে ঘরে ফেরার আনন্দে ভালোবাসা বেঁচে থাক পৃথিবীর শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত।

 
 
 
সিদ্ধান্ত
~স্বপ্নীল চক্রবর্ত্তী
 
কী চাই তোমার? নিঃসংশয়ে বলে দিতে পারো-
এ্যামেচার কবিতা? উগ্র পারফিউম? সিনেমার মতো হুবহু কোনো চুমুদৃশ্য অথবা দুপুরমনি ফুল!
দাঙ্গা বাঁধিয়ে এনে দিতে পারি দেবদূত শিশু
যুদ্ধ সাজিয়ে ফেলে দিতে পারি কয়েকটা লাশ;
শুধু বলে দাও জন্ম নাকি মৃত্যু,ধর্ম নাকি প্রয়োজন ভালোবাসো?
কারো কিশোরী বয়স কেড়ে নিতে পারি আগুনের দামে; বস্তি পুড়িয়ে,একশোটা বাড়ি ছারখার হলে হোক।
পাহাড় থেকে এনে দিতে পারি সহজ সরল প্রাকৃতিক প্রেম;
সমুদ্র থেকে কিনে নিতে পারি সূর্যাস্তের আড়াইশো গ্রাম পবিত্র আলো।
আফ্রিকা থেকে নিয়ে দিতে পারি সিংহের সম্ভ্রম;
ইউরোপ থেকে মোনালিসার যাবজ্জীবন কোয়ারেন্টাইন,তুমি বলে দেখো শুধু।
কলঘর থেকে চেয়ে নিতে পারি পর্দা টাঙানো নির্জন স্নান;
স্নান ভালোবাসো জানি।
সবকিছু পারি,পারবো না শুধু ছেড়ে চলে যেতে,
তাও যদি বলো চলে যেতে তবে যাবো
দীর্ঘশ্বাস থেকে পালিয়ে বেড়ানো কার্বন আমি ;
কবার ছাড়বে সে সিদ্ধান্ত তোমার হাতেই থাকলো।
 
 
 
-মুহূর্ত কী?
-কারো কাছে স্মৃতি,কারো কাছে এক্সপিরিয়েন্স....
-"কথা দেওয়া"?
-কারো কাছে নিছক উপলক্ষ,কারো কাছে শক্ত একটা খুঁটি।
-প্রেম?
-কারো কাছে খাবারের স্বাদ বদলানো,কারো কাছে আত্মসমর্পণ।
-স্পর্শ?
-সাধারণত দু ধরণের,কোনো স্পর্শ শুধুই ছুঁয়ে দেখা! কোনো স্পর্শ দাবানলের মতো ছড়িয়ে যায়,আগুন!
-অবহেলা?
-চেনা রাস্তা হুট করে ভুলে যাওয়া অথবা একই রাস্তায় নিয়ন আলোর নীচে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা,প্রতিদিন,কেউ আসবে না জেনেও!
-ছেড়ে চলে যাওয়া?
-কারো কাছে মুক্তি,কারো কাছে ইচ্ছেমৃত্যু। 
 
__ স্বপ্নীল চক্রবর্ত্তী 
 
 
 
 
প্রশ্রয়
~স্বপ্নীল চক্রবর্ত্তী
 
যেমন ধরুন আপনার দুঃখের কথা আমাকে কিছুটা বললেন,আমি অল্প শুনেই যেনো সবকিছু বুঝতে পারলাম অথবা কিছুই না বুঝে হাত দুটো হাতের ভেতরে নিয়ে সংকোচে বললাম,সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।
কিন্তু কিভাবে?
আপনার মৃত বাবা কি করে আপনার মাথার কাছে একশো টাকার নোট রেখে যাবে?
কিভাবে আপনি বিশ্বাস করবেন যে আপনার গানের মাস্টার আপনার ইচ্ছের বিরুদ্ধে আপনাকে ছোঁয়নি কখনো?
কি করে আপনার ছাঁদ থেকে চুরি হয়ে যাওয়া শাড়ি আলমারির ভেতরে ফিরে আসবে,প্রিয় উৎসবের আগে?
সুতরাং এই যে আমি মাত্রই একটা ভন্ডামি করলাম,আপনি টের পেয়েও পেলেন না বরং আমার হাত ধরার ইচ্ছেটাকে প্রশ্রয় দিলেন-
এই প্রশ্রয় সমুদ্রস্নানের মতোই মিথ্যে এবং মিলিটারি জুতোর শব্দের মতো করুণ।



নিজের মানুষ
©স্বপ্নীল চক্রবর্ত্তী

মুঠো খুলে দেখি আর কিছু নেই;
দেওয়ার মতো যা কিছু ছিলো
বিকেল বেলা,টুকরো চিঠি,আদুরে আলাপ, সব নিয়ে গেছো;
ফিরিয়ে দেওয়ার বেলায় শুধু আমাকেই দিলে,
তাও অর্ধেক,আসল আমি টা তোমার কাছেই।
আমাকে কী তুমি দুঃখ ভাবো? পোষাক ভাবো?
শোবার ঘরে যাওয়ার আগে স্নানঘরে সব বদলে ফেলো,ঘ্রাণ ধুয়ে দাও আঁজলা জলে;
আমি যদি বিদ্রোহ করি? যদি বলি "থেকেই যাবো" তোমার কাছে,
রক্তে কিছুটা এখনো আছে।
তাও নেবেনা? পুড়িয়ে ফেলবে? অন্য ছলে?
তোমার নিজের মানুষ অংক বোঝে?
জ্যামিতি কষে? গ্রাফিতি এঁকে বুঝিয়ে দেয়?
স্বৈরাচারী আব্দারে রোজ মানচিত্রে আগুন লাগায়? জ্বর উঠলে জলপট্টি কে দিয়ে দেয়?
ব্যথার ছলে আদর মাখায় সন্ধ্যে হলে?
তাকে তুমি আগলে রেখো,যত্নে রেখো;
আমি তো বুঝি কতোটা কি হয়, নিজের মানুষ বদলে গেলে।



শাড়ি বিষয়ক হাবিজাবি
©স্বপ্নীল চক্রবর্ত্তী


তুমি প্রথমবার শাড়ি পরলে পৃথিবীর আয়ু অর্ধেক কমে যায়,রাস্তায় নাম্বারপ্লেট ছাড়া বাইকের আনাগোনা বাড়ে,নতুন নতুন চুল বড় করা বখাটেরা পাখিদের কাছ থেকে শীষ দেয়া শিখে নেয়-
রাজনীতির প্যাঁচ বুঝে যায় নবীন ছাত্রনেতা,মা বাবার বয়স বাড়ে,শহরটা সার্কাস হয়ে যায় যেনো পথেঘাটে বাঘ সিংহের অদ্ভুত সব ছেলেখেলা।
পাহাড়ে সাঁওতালি উৎসব শুরু হয়,সমুদ্রে হাওয়াবদলে যায় কিডনী ফেইলিউরের রোগী।
তুমি প্রথমবার শাড়ি পরলে কবিতার খাতায় ভুলভাল সব হিসেব লিখি,চায়ে চিনি কম কম লাগে,নতুন করে সিগারেট ছেড়ে দেয়ার প্রতিজ্ঞা করি। হাত ধরতে লজ্জা পাই তবে বেহায়াদের মতো কোমড় জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করে। তুমি অসভ্য বললে ভালো লাগে,ইতর বললেও সহমত পোষণ করি।
তুমি যতোবার শাড়ি পরো আমার কাছে প্রথমবার মনে হয়,তোমাকে ছেড়ে বাসায় যেতে ইচ্ছে করে না তাই তুমি চলে গেলেও রাস্তায় রাস্তায় ঘুরি। তোমার শাড়িতে কি থাকে বলো তো?
মদ,জুয়া,খুন নাকি তাদের চাইতেও বড় কোনো চক্রান্ত?




সংসার
©স্বপ্নীল চক্রবর্ত্তী

আমি চাইতাম প্রতিদিন অন্তত দশ মিনিটের জন্য আমাদের দেখা হোক,
মাঠ পেরিয়ে হাত ধরাধরি করে অন্তত একবার রেললাইন পার হতে হবে,বৃষ্টিতে ভিজতে হবে,রাত জেগে ফোনে কথা বলতে হবে।
তুমি চেয়েছিলে আমাদের একটা সংসার হোক,
ছোট্ট রান্নাঘর,শোবার ঘরে দক্ষিনের জানালা,বিকেল বেলায় জানালায় চোখ এলিয়ে আড়াইশো গ্রাম হলুদ,এক কেজি পেয়াঁজ,চারটে ডিমের ফর্দ লেখা।
তোমার চাওয়া দেখে আমিও বিপ্লবী হয়ে গেলাম,
কিছু একটা করতে হবে বলে রেসের ঘোড়ার মতো ছুটতে লাগলাম।
ছুটতে ছুটতে আমি এখন অনেক দূরে,
আমার আশেপাশে তোমাকে খুঁজে পাচ্ছিনা কোথাও;
তুমিও এখন দিব্যি অন্য কারো সংসার সাজাচ্ছো,নিঃশ্বাস ফেলার জো নেই।
মাঝে মাঝে তোমার শহরে দমকা হাওয়ার সাথে বৃষ্টি আসে,
আমার ঘরের ইলেকট্রিসিটিও চলে যায় তখন,
চোখে জল না আসলেও দুজনেরই কান্না পায়,বুক ভাঙে;
আমরা টের পাই,ছোট্ট একটা সংসার বুকের ভেতরেও সাজানো থাকে।



মনে করো
©স্বপ্নীল চক্রবর্ত্তী

মনে করো আমরা এখন পাহাড়ে,
অথবা সমুদ্রে।
মনে করো একটা গোটা সিনেমাহল শুধু আমাদের জন্য, অথবা পার্কের সব বেঞ্চ ফাঁকা
-যেমনটা চাও।
মনে করো আমাদের বিয়েতে কেউ উপহার দিয়ে গেছে প্যারিসের প্লেনের টিকিট,
তোমার আলমারিতে শাড়ির কালেকশন দেখে মাথা ঘুরে অজ্ঞান হয়ে গেছে তোমার হিংসুটে বান্ধবীর দল।
মনে করো আমার অফিসে অনেক কাজ,অনেক বড় চাকরি করি,সন্ধ্যেবেলা গাড়ি কিনতে যাবো একসাথে-একথা তুমি প্রতিবেশি বৌদিকে বলছো।
মনে করতে পারো বাচ্চাকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিতে যাচ্ছি,সে কি ঠিকমতো নিজের নামের অর্থ বলতে পারবে? এ নিয়ে আমরা খুব চিন্তিত।
মনে করো এইমাত্র যার সাথে তোমার বিয়ে ঠিক হলো সেও ঠিক আমার মতোই অপ্রস্তুত,বেহায়া,বিষণ্ণ কোনো বেকার।
প্রেমিকার বিয়েতে নির্লজ্জের মতো নেমন্তন্ন খেয়ে ওয়েটারকে দশটা টাকাও বখশিশ দেবে না।
মনে করো আমি কেউ না,কিছুই না,কখনো কোথাও ছিলাম না। 
 
 
 
 
যেভাবে ভুলে যেতে পারবে
©স্বপ্নীল চক্রবর্ত্তী
 
যেভাবে সহজেই ভুলে যেতে পারবে,বলছি,মন দিয়ে শোনো-
খোঁপা যেনো খালি না থাকে,যে খোঁপায় বেলীফুল,রজনীগন্ধা অথবা অভিজাত পারিজাত থাকে,সেখানে আমি থাকি না।
নিয়মিত শোকসভায় যাবে,অপরিচিত মৃত মানুষদের জায়গায় আমার কথা ভাববে,শোকসন্তপ্ত কোনো মা'কে দেখতে পেলে আমাদের কিছুটা স্মৃতি দিয়ে দিতে পারো,স্মৃতির মতো অপ্রয়োজনীয় ভারী কোনো বস্তু নিজের কাছে রাখতে নেই।
প্রতিদিন দুপুরবেলা একটা করে হ্যাপি-এন্ডিংওয়ালা সিনেমা দেখবে,বিকেলবেলা খালিপায়ে রাস্তায় হাঁটতে যেতে পারো,ইটের ভাঙা টুকরোরা নাকি ব্যথা দিয়ে ব্যথা ভোলায়;রাতে অন্তত একটা অপ্রিয় কোনো মেনু রেখো ডিনারটেবিলের নির্জন বুকে।
পুনশ্চঃ এই কবিতাটা একবারের বেশী পড়া যাবে না,কবিতারা কখনোই ভুলে যেতে সাহায্য করে না।

 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 

প্রেমের কবিতা

আমাকে ভালোবাসার পর – হুমায়ুন আজাদ আমাকে ভালবাসার পর আর কিছুই আগের মত থাকবে না তোমার, যেমন হিরোশিমার পর আর কিছুই আগের মতো ন...