Thursday, December 31, 2020

প্রদীপ বালা

 

 

আমার শহরঃ বৃষ্টিমানুষ
 – প্রদীপ বালা
 
মেঘ জমেছে তোরই বাড়ির ছাদের ওপর
এদিক ওদিক একটা দুটো বৃষ্টিমানুষ
একটু পরেই ভিজবে বসে আমার শহর
ভাসছে হাওয়ায় ইচ্ছে যত ফালতু ফানুস
###
ইচ্ছে আছে জমিয়ে টাকা বাইক নেবার
তারপরে চল তুই আর আমি লং ড্রাইভে
থাক পেছনে আইবুড়ো বোন অসুখ বাবার
কিছুটা সময় হারিয়ে যাব দিগ্বিদিকে
এমনি কত ইচ্ছে ফানুস হাওয়ায় ভাসে
এই শহরের মেসে মেসে রাস্তা ঘাটে
দিনের শেষে সেসব ইচ্ছে হয় ফ্যাকাশে
সেসব আবার করতে রঙিন রাতটা কাটে
আমি তখন ভীড় বাসেতে বাদুড় ঝোলা
ঘামের ঘ্রানে মাখামাখি নারী পুরুষ
অফিস যেতে যেসব মেয়ে সেক্সি শীলা
অফিস ফেরত তারাই সবাই বেলুন ফুটুস
‘আজ একটু অফিস থেকে জলদি ফিরিস
ময়দানে আর ভিক্টোরিয়ায় ভিজবো দুজন’
মেসেজ দেখে আদম হতে চাইছে শরীর
ইভের সাথে একটা বিকেল আর কতক্ষণ
নিয়ম মাফিক বসের ঘরে ডাক পড়ে যায়
মহিলা বস স্বামী আছে অন্যখানে
মাঝে মাঝেই চাকরী খাওয়ার ভয় দেখায়
কী কারণে মন তো আমার সবই জানে!
আমি তখন পোশাক ছেড়ে নগ্ন হলাম
করুক সে তার ইচ্ছে মত যা ইচ্ছে তাই
চোখে আমার ভাসতে থাকে ইভের শরীর
ধাক্কা মেরে ধাক্কা মেরে চাকরি বাঁচাই
###
‘আজ বুঝি অফিস ঘরেই সেরে দিলি?
বেশ পেয়েছিস মাল খানা তুই মনের মতন
আমার শালা পোড়া কপাল পুরো খিল্লি
একটা দুটো পেতাম যদি গরীব রতন
ইচ্ছে মতন উলটে পালটে করিয়ে নিতাম
না শুনলে আমার কথা একটু খানি
যখন তখন চাকরী খাওয়ার ভয় দেখাতাম
ছলা কলা আমিও কি আর কম জানি’
সহপাঠী বয়স ওর আমার মতোই
ছেলে মেয়ে দুটোই এবার ফাইনাল ইয়ার
যৌবন আছে পাক ধরে যাক চুলে যতই
এক টানেতেই সাবাড় করে চারটে বিয়ার
‘আজ বিকেলে তোর বর দেখি সেই হোটেলে
হাঁটুর এজের একটা মেয়ের কোমর ধরে…’
এসব কথা এখন মোটেও নতুন নয়
বেশ বুঝেছি বিয়ের সেই এক বছরে
প্রথম প্রথম ঠিকই ছিল হটাত করে
অফিস মিটিং বেড়ে গেল ছ মাসেতেই
আমারও তো অফিস আছে বুঝি না কি?
ধরাও খেল কিছু বলিনি ইচ্ছে করেই
রাগ হল না বরং ফুর্তি এল মনে
ভাবনা নেই আমার এখন যত ইচ্ছে
ঘুরব ফিরব শোব যাকে চাইবে প্রাণে
এমনি করে করে বেশতো চলে যাচ্ছে
###
যাক চলে যাক অবাধ্য সব মেসেজ যত
মাসের শেষে কাজের ওপর চোখ সরে না
আর কটা দিন পরেই একটু খুশি পাবো
এবার তবে রিপ্লাই দাও লক্ষ্মী সোনা
কাজের মাঝেও ভাবনা আসে ঘুরে ফিরে
সারা অফিস কাজের ভারে সময় নেই
তবু আমার মন থাকে সেই মেসেজ জুড়ে
রিপ্লাই নেই রিপ্লাই নেই রিপ্লাই নেই
নতুন প্রজেক্ট ধুয়ে মুছে শেষ করেছি
ইচ্ছে করে মারব ছুঁড়ে বসের মুখে
থমকে থাকি জীবন যুদ্ধে হার মেনেছি
চাকরী বাঁচে শুধুই শুধুই শরীর দেখে
হটাত করেই মোবাইলটা জানান দিল
শরীর বেয়ে উত্তেজনার ঢেউ খেলে যায়
ওইতো বুঝি আদমেরই মেসেজ এল
বসের মেসেজ শরীর আবার শীতল হয়
‘তাড়াতাড়ি চলে এস না শুনবো না
করনি তো কিছুই এবার এই প্রজেক্টে’
সারা শহর জুড়েই যেন বেশ্যাখানা
এমনি করেই চলছে যে কাজ কর্পোরেটে
ঘণ্টা খানেক শরীর খুলে বসের চোখে
জিভ দিয়ে তোর ইভের শরীর নষ্ট করুক
কি করে যে মুখ দেখাবো আদম তোকে
বৃষ্টি নামুক বৃষ্টি নামুক বৃষ্টি নামুক
###
বৃষ্টি নামুক বৃষ্টি নামুক বৃষ্টি নামুক
ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যাক ময়লা যত
দুটো শরীর ভিজে ভিজে হচ্ছে সারা
ভিজছে আরও শরীর জুড়ে শত ক্ষত
অন্ধকারের পর্দা নামে শহর ঘিরে
সাথে সাথে নিয়ন বাতি ঝলসে ওঠে
ইচ্ছে করে বসেই থাকি অন্ধকারে
বাতির আলো আমাদেরও শরীর চাটে
কত কথাই লুকিয়ে থাকে মনের ভেতর
কত গ্লানি ধুয়ে যায় বৃষ্টি জলে
এসব নিয়েই জেগে থাকে আমার শহর
বহন করে কত কথা বৃষ্টি জলে
এমনি ভাবেই দুঃখ বাড়ে রোজ বহরে
বৃষ্টি ভিজে চুপসে যায় ইচ্ছে ফানুস
কত জনায় ভিজছে বসে এই শহরে
………………………..সবাই তারা
বৃষ্টিমানুষ বৃষ্টিমানুষ বৃষ্টিমানুষ

 

 

 

আমার শহরঃ একটা ককটেল ফ্যামিলি 
– প্রদীপ বালা
 
সময়ের শেষ হয় এইখানেই
আবার টান টেনে টেনে লম্বা করি
ধিরে ধিরে ছড়িয়ে যাক সবখানেই
###
সকাল সকাল চায়ের কাপে জোর চুমুক
কাল রাতের সাড়ে তিন মিনিট, চায়ের ভেতর
মিষ্টি কম, বলছে কানে ফিসফিসিয়ে
তুই কামুক !
কাগজখানা বাগিয়ে ধরে খবর খোঁজা
ধর্ষণ আর শ্লীলতাহানি কোথায় কি
পাশের ঘরেই মেয়ে আমার চোখটি বোঁজা
অফিসঘরে চোখ সেঁটে যায়, উঁচুনিচু
যতই দেখো ততই আরও নতুন মজা
হাত দিতে যাও বসের চোখ, কাঁচুমাচু
ধুস শালা ! ধরবো না আর বসের আগে
ফিরতি পথের বাস ধরি, ভিড়ের ভেতর
চাপাচাপি গায়ের গন্ধ বেশ লাগে
আবার রাতে সাড়ে তিন মিনিট খেলতে হয়
ছোট্ট খেলা ঘাম ঝরে যায় ওটুকুতেই
বলুন দেখি ওটুকুতে শান্তি হয়? শান্তি হয়?
জ্বলছে আলো পাশের ঘরে পড়ছে মেয়ে
ছোট্ট ফুটো গর্ব করে চোখ রাখি
থ হয়ে যাই! মেয়ে আমার দেখছে বসে
পর্ণো ছবি! পর্ণো ছবি! পর্ণো ছবি!
###
পর্ণো ছবি! পর্ণো ছবি! পর্ণো ছবি!
দুটো সিডি বাবার ঘরে, প্রথম দেখি
নগ্ন মানুষ, বাৎস্যায়নের বাচ্চা সবই
বন্ধু বলে। আমরা দুজন সহপাঠী
প্রেমিক নয় বন্ধু শুধুই। প্রেমিক আছে
পার্কে বসে কিস করেছি। ছেলে খাঁটি
একদিন ওর বাড়ি ডেকে নিল আমায়
‘বাৎস্যায়নের বাচ্চা গুলো দেখবি আজ’
মোবাইল ওর ভর্তি করা কানায় কানায়
দেখতে দেখতে আমরা দুজন নগ্ন হলাম
আমরা দুজন বন্ধু শুধুই প্রেমিক আছে
বন্ধু খোঁজে দুপায়ের ফাঁকে বাৎস্যায়ন
সব শেষে অপরাধের বোঝা মাথায়
মুখ নীচু ভয়ে কাঁটা বন্ধু বোঝায়
‘ভাবিস নাতো এসব এখন কিচ্ছুটি নয়।’
তবু মনে অপরাধের বোঝা বাড়ে
চুপটি করে উঠতে থাকি সিঁড়ি বেয়ে
মায়ের কাছে মুখ দেখাব কি উপায়ে?
মায়ের ঘরের দরজা ভেজা আলো জ্বালা
অপরাধী চোখ রাখি। থমকে থাকি
মায়ের সাথে এক বিছানায় বাৎস্যায়ন!
বাড়িওলা ! বাড়িওলা ! বাড়িওলা !
###
বাড়িওলা ! বাড়িওলা ! বাড়িওলা !
ধিকি ধিকি জ্বলতে থাকা আগুন গুলো
চুপসে আসে বাড়িয়ে যায় মনের জ্বালা
মানুষটা যায় সকাল হলেই ফেরে আবার
রাত্রিবেলা! ক্লান্ত শরীর রুক্ষ মেজাজ
আরেকজনার ইস্কুলেতেই দিন কাবার
একটা মানুষ ঘরবন্দী সারা সময়
রাত নামলেই সাড়ে তিন মিনিট পৌরুষ
কী হয় ওতে? কী হয় ওতে? ওতে কী হয় ?
এতকিছুর পরেও তবু মানিয়ে নেওয়া
কাজের ভেতর মোবাইলের শব্দ ওঠে
মেসেজ ঢোকে মোবাইলটা ভুলে যাওয়া
আলতো হাতে মোবাইলের মেসেজ খোলা
উড়ুক্কু সব ভাবনা গুলোর থমকে যাওয়া
স্পষ্ট লেখা নামটা ছিল ‘সেক্সি শীলা’
‘সেদিন তুমি যা করলে না একদম বাজে
কনডম প্যাকেট আমার কাছেই রয়ে গেছে
নিয়ে যেও তোমার বৌয়ের লাগবে কাজে’
মাথার ভেতর ঘোরে শুধু ‘সেক্সি শীলা’
কীসের জন্য নিয়মমাফিক এই জীবন?
সব কিছু ছিঁড়ে ফেলে ডাকি তাকে
বাড়িওলা ! বাড়িওলা ! বাড়িওলা !

 

 

আমরা দ্রৌপদী নতুন শতাব্দীর
– প্রদীপ বালা 
 
এই দেখুন আমরা
আপনাদের সামনে দাঁড়িয়ে
মুখ ফিরিয়ে নেবেন না হে ভদ্রমহোদয়গণ
তাকিয়ে থাকুন
আজ দেখব আপনাদের পৌরুষত্ব
যুগ যুগ ধরে
আমাদের পণ্য হিসাবে ব্যাবহার করা
আপনাদের একচেটিয়া অধিকার
সবসময় দাদাগিরি ফলাবার প্রয়াস…
আপনারাই তো শিখিয়েছেন
. আপনাদের পরবর্তী জেনারেশনকে
হে ভীষ্ম, হে দ্রোণ, হে কৃপ, হে সঞ্জয়
হে পাণ্ডবগণ……
আজ মাথা নত করবেন না আপনারা
বলিহারি আপনাদের পৌরষ
যখন যেমন ইচ্ছা যথেচ্ছ ব্যাবহার করবেন
যখন যেমন ইচ্ছা ভাগ করে খাবেন সকলে
যখন যেমন ইচ্ছা বাজি ধরবেন আমাদের নিয়ে
যখন যেমন ইচ্ছা অগ্নি পরীক্ষা নেবেন
যখন যেমন ইচ্ছা চিতায় তুলবেন
. খুব মজা তাইনা?
আজ অবাক হচ্ছেন আপনারা, যে–
এই নতুন শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে
এ কোন দ্রৌপদীর দল উঠে এসেছে?
হ্যাঁ ভদ্রমহোদয়গণ
আমরা দ্রৌপদী নতুন শতাব্দীর
এই ভারতের মাতিতে দাঁড়িয়ে
আপনাদের দ্রৌপদীর মতো হাজারে হাজারে
বিবস্ত্রা হই প্রতিদিন
বিবস্ত্রা হই আপনাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজের উঠোনে
আর আপনাদের আদর্শে অনুপ্রাণিত
. পরবর্তী জেনারেশন
এখন গলা ফাটায়, চেঁচিয়ে আকাশ বিদীর্ণ করে–
নারীবাদ নারীবাদ বলে!
কিন্তু নারীবাদ বলে কি কিছু আছে এ দেশে?
যদি থাকতো তাহলে
প্রতিদিন এতো এতো কন্যাভ্রুণ হত্যা হত না
প্রতিদিন বিবস্ত্রা হতে হত না আমাদের
আর সেইদিন আপনাদের সভায়
দর্শক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন আরও একজন
হ্যাঁ কৃষ্ণবাবু, আপনার কথাই বলছি
জানি অনেকেই একথার প্রতিবাদ করবেন
কিন্তু সেদিন যদি আপনি সত্যিই
রক্ষা করতে আসতেন দ্রৌপদীকে
তবে সামান্য কাপড় দিয়ে করুণা করে
নাটক জমিয়ে না তুলে
দুর্যোধনের গালে ঠাস করে এক চড় মারতেন
কিন্তু আপনি পুরুষ হয়ে পুরুষতন্ত্রকে ভাঙতে চাননি
চাননি ভীষ্ম, দ্রোণ, কৃপ সহ অন্যান্য সভাসদরাও
ওইটুকু করুণা করে আপনি
আমাদের দগদগে ঘায়ে মলম লাগানোর চেষ্টা করেছেন
ভেবেছেন ওতেই নায়ক হয়ে উঠবেন
কিন্তু কৃষ্ণবাবু,
আমরা ঘাসে মুখ দিয়ে চলিনা
আপনার চরিত্রও আমাদের অজানা নয়……
আর আজ এই নতুন শতাব্দীর ভারতবর্ষে দাঁড়িয়ে
আমাদের পদে পদে বিবস্ত্রা হতে দেখে
আপনি চুপচাপ বসে আছেন
কোথায় গেছে আপনার এতো দরদ?
খুব উপভোগ করছেন বুঝি?
বোধহয় ছেলেবেলার শখ আপনার আজও যায়নি
নাকি–
এতো কাপড়ের যোগান দিতে গিয়ে যদি
শেষে নিজেরটায় টান পড়ে যায় সেই ভয়ে?
উত্তর চাই আপনার।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

No comments:

Post a Comment

প্রেমের কবিতা

আমাকে ভালোবাসার পর – হুমায়ুন আজাদ আমাকে ভালবাসার পর আর কিছুই আগের মত থাকবে না তোমার, যেমন হিরোশিমার পর আর কিছুই আগের মতো ন...