Friday, March 13, 2020

নতুন কবিদের কবিতা

নতুন কবিদের কবিতা 

যদি আমার শরীরে পাখির ডানা থাকত
....অরণ্য আর্য

যদি আমার শরীরে পাখির ডানা থাকত এবং
আমি উড়ে গিয়ে পৌঁছে যেতাম তোমার কাছে,
আঁচলে ঢাকা বুকের খুব কাছাকাছি গিয়ে বলতাম
শুধু তোমার জন্য আকাশ পেরিয়ে এসেছি,
তখনও কি তুমি এমনি করে ফিরিয়ে নিতে মুখ?
শীত, বসন্ত কখনও কি আমি নেমে আসব না মাটিতে?
মেঘের মতন বায়বীয় বুকে আর কতকাল উড়ব একা!
জানি, চাক্ষুষ দেখাই সব নয়, নয় চূড়ান্ত কিছু;
তবু মাঝেমাঝে মনে হয়, হয়ত একটিবার সামনে গিয়ে
দাঁড়ালে তোমার চোখে আমি বরফের মত স্বচ্ছ
হয়ে যেতাম, চামড়া রক্ত মাংস ভেদ করে তুমি
হৃদয়ে সঞ্চিত সব বিক্ষিপ্ত বুদ্বুদ দেখে নিতে পারতে।
যদি পৃথিবীতে আজও অরণ্যের যুগ রয়ে যেত,
মানুষ ও হরিণের গতির পার্থক্য খুব বেশি হত না;
কোন প্রিয় হরিণীর সঙ্গে তুমি নদীর তীরের কাছে
সবুজ ঘাসের পরে শুয়ে শুয়ে যদি দেখতে কী করে
গোধূলির লাল আঁচে আকাশ দগ্ধ হয়ে ছাই হয়,
সেই আগুনকে সাক্ষী করে যদি আমি ঘাসফুল নিয়ে
চারপাশে ছড়িয়ে দিতাম, সেদিনও কি বিক্ষোভে
তুমি সব উড়িয়ে দিতে কপালের অবাধ্য চুলের মত?
পৃথিবীর সব দেওয়াল আবরণ ভেঙে গিয়ে যদি
শুধুই আকাশ থাকে, তোমার অবধি সব পর্দা সরে যায়,
আমার দীর্ঘশ্বাসে তোমার গাছের পাতা দুলে ওঠে,
নির্জন আঙিনায় জমে ওঠে মৃত পাতার পাহাড়,
তখনও কি তুমি দৃষ্টি দিতে না এ দিগন্তের দিকে?
পৃথিবীর ফিকে নীল আকাশ আরও রক্তিম হলে
ইচ্ছে ছিলো, শেষবার আহত হবার; তাই উন্মুক্ত
বুক নিয়ে উড়ে গেছি-- বিষাক্ত তীরের প্রতি যেমন
ছুটে যায় আত্মঘাতী চিল-- তাদের মিছিলে আমি
এক অনুসারী শুধু-- ধুধু মরুর পথে আলেয়া মুগ্ধ মুসাফির!
মুখে ছবির মতন হাসি নিয়ে স্তব্ধতায় থেকে গেলে;
তোমার চোখের দীপে ক্লান্তিহীন আলো জ্বলেছিল;
তবু আমি একটানা মৃদু এক আর্তনাদ শুনে
ডুবে গেছি নিবিড় অন্ধকারে, যেখানে সময় থেমে
আছে একটি প্রহরে তবু কেটে যায় অজস্র রাত!
তবুও তোমার হাতে আমার প্রদীপ জানি জ্বলবে না;
তোমার আঁধার বলবে না ব্যর্থ দীপের কোন কথা;
পৃথিবীর লাভার আকুলতা শান্ত হচ্ছে যতদিন ধরে
তারও আগে ঠিক হয়ে গেছে, তুমি কটাক্ষপাতে
আমার সকাল সন্ধ্যা আলোহীন করে নিভে যাবে;
সেই অভিশাপ তুমি কি ফিরিয়ে নেবে কোনদিন?
যদি আমি ডানা নিয়ে ছুটে যাই, 

বরফের মতন স্বচ্ছ গাছহয়ে
তোমার দরজার কাছে টপটপ করে ঝরাই সুরভি শিশির;
তুমি কি তখনও তোমার পায়ের কাছে তাকাবে না?

 আমি মাটিতে সম্পূর্ণ নিঃশেষ হয়ে যাবার আগে
তোমার চোখের তাপে ফের বাষ্প হয়ে উড়ে যেতে চাই;
তুমি মৃত্যুর দিকেও কি চেয়ে দেখ না?

 দেখ না উড়ছে কত নশ্বর পাখি! 




ভালো থেকো তুমিও
(ইফফা তাবাসসুম তালুকদার জান্নাত)


হয়ত আমাদের আবার দেখা হবে
অচেনা কোনো রাস্তায় কিংবা চেনা কোনো গলিতে।
হয়ত আমরা দুইজনই দুইজনকে চিনতে পারবো
কিংবা না চিনার ভান করবো।
হয়ত দুইজনই দুইজনের দিকে 

তাকিয়ে পুরনো কথা মনে করে অল্প হাসবো।
কিংবা সবই ভুলে গেছি এমন একটা ভাব করবো।
হয়ত খুব করে জানতে ইচ্ছে হবে কেমন আছো?
কতো দিন পরে দেখা!
আচ্ছা! আমার কথা কি তোমার মনে পরে?
সেই বিকেল বেলা একসাথে পাশাপাশি কোচিং এ যাওয়ার কথা!
কলেজ যাওয়ার পথে ফুল হাতে নিয়ে পথ আটকানোর কথা!
সামান্য ঝগড়ায় ছেড়ে চলে যাবে বলে কেঁদে ভাসিয়ে দেওয়ার কথা!
কিংবা সামান্য অভিমানে গাল ফুলিয়ে মুখ ঘুরিয়ে বসে থাকার কথা!
ছোট ছোট খুনসুটি গুলোর কথা!
আচ্ছা!তোমার কি সেগুলো স্মৃতি মনে পরে?
নাকি হাজারো নতুনের ভিড়ে হারিয়ে ফেলেছো আমাকে চিরতরে!
এভাবেই দুইজনেই মনে মনে অনেক কথা বলবো।
যে কথা গুলো এতো দিন মনের মধ্যে চেপে রাখা ছিলো।
যে প্রশ্ন গুলো এতো দিন হৃদয় মাঝে দাগ কেটে যেতো।
আজও সেই প্রশ্ন গুলো দাগ কেটে গেলো দুইজনের হৃদয়ে।
দুইজনেই ভাববো আজ আর এগুলো জিজ্ঞাসা করে কি লাভ?
ও নিশ্চয় নতুনকে নিয়ে ভালোই আছে।
তারপরে দুইজনই পাশ কাটিয়ে চলে যাবো যে যার গন্তব্য স্থানে।
ভালো থাকুক স্মৃতিগুলো।
হাজারো নতুনের ভিড়ে হারিয়ে যাওয়া 

সেই পুরনো স্মৃতি গুলো সত্যিই ভালো থাকুক।
ভালো থেকো তুমিও।




 বোবা মেয়েটা 
....অন্ত মিলন


আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম,
বোবা মেয়েটা আমার সামনে এসে আমার হাতে 

এক পোটলা ঝালমুড়ি ধরিয়ে দিয়ে দিলো দৌড়।
আমি তার দিকে পলকহীন তাকিয়ে ছিলাম,
মুহুর্তের মধ্যেই হাওয়া হয়ে গেলো বোবা মেয়েটা।

বোবা মেয়েটা,
ঝালমুড়ি,
তার সৌন্দর্য, তার সৌন্দর্য বোধ, 

ঝাল মুড়িতে লাল গোলাপের পাপড়ি;
একটা কল্পনার ভেতরে কোথায় যেন হারিয়ে যাই আমি।
তার কেঁপে ওঠা ঠোঁট, তার কিছু বলতে না পারার আকুতি, 

তার গালের টোলে বসে থাকা পঙ্গপালের মতো দুঃখ গুলো;
আচমকা ঝাঁকি তোলে আমার বুকের ঠিক বাম পার্শে।

রোজ সকালে বকুল ফুল কুড়াতে যায় বোবা মেয়েটা।
আমি ঘর থেকে বের হয়ে গেলে,
বোবা মেয়েটা আমার ঘরের বারান্দায়
বকুল ফুলের মালা রেখে যায় প্রতিদিন।
আমি প্রতিদিন তার যত্ন করে রেখে যাওয়া
বকুল ফুলের মালা সযতনে আগলে রাখি আমার ঘরের দেয়ালে।
আমার সঙ্গে বোবা মেয়েটার দেখা হয়ে গেলে কখনও,
আমি তাকে কি যেন বলতে চাই,
আমি বলতে পারি না।
বোবা মেয়েটা লাজুক ভঙ্গিতে দৌড়ে পালায়,
আমি তাকে কিছুই বলতে পারি না।

কোনো কোনো দিন বিকেল বেলা বোবা মেয়েটা 
আনমনা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে পুকুরপাড়ে
গাব গাছটার নিচে।
আমি ধীর পায়ে এগিয়ে যাই তার কাছে,
তার পেছনে গিয়ে দাঁড়াই,
সে টের পায়না;
সে কিছুতেই টের পায়না আমার উপস্থিতি।
আমি পেছন থেকে তার চুলের তীব্র গন্ধ ভোগ করতে থাকি,
আমি মাতাল হতে থাকি তার চুলের তীব্র গন্ধে।
আমি তাকে মনে মনে আবৃত্তি করতে থাকি।
আমি আবৃত্তি করি তার চুল,
আমি আবৃত্তি করি তার চুলের তীব্র গন্ধ।
একটা মোহ আমার ভেতরে তখন কানামাছি খেলে,
খেলে গোল্লাছুট।
আমি আমার চোখ জোড়া বন্ধ করে,
আমি কোথায় যেন হারিয়ে যাই !

সেদিনও ভোর এসেছিল আমাদের নাগরিক জীবনে।
মুয়াজ্জিনের আযানের ধ্বনি কি আমার কানে এসেছিল সেদিন ?
সেদিনও কি উলুধ্বনি দিয়েছিল কেউ মন্দিরে মন্দিরে ?
একটা কাকের ডাকে আমার ঘুম ভেঙেছিল সেদিন।
আমি কফির পেয়ালায় চুমুক দিতে দিতে
পত্রিকার পাতায় দেখছিলাম -
ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের আপাদমস্তক।
অকস্মাৎ, আমার কর্ণকুহরে ভুমিকম্পের মতো 

ঢুকে গেলো একটি আর্তচিৎকার, "
 বোবা মাইয়াডা আর নাই, বো-বা-মা-ই-য়া-ডা! "
মহুয়া গাছটার চারিদিকে উৎসুক মানুষের ভীড় !
আমি নিথর দাঁড়িয়ে আছি !
আমি তাকিয়ে আছি মহুয়া গাছের ডালে ঝুলে থাকা একটা চাঁদের দিকে,
আমি একটা রক্তাক্ত পায়জামার দিকে তাকিয়ে আছি ;
আমি তাকিয়ে আছি একটা ছেঁড়া জামা'র দিকে,
আমি দেখতে পাচ্ছি -
আমার চোখের সামনে দিয়ে দৌড়ে পালাচ্ছে দশ হাজার উট,
দশ হাজার উটের বেঁচে থাকার আকুতি আমাকে আহত করছে খুব !
আমার চোখ অন্ধকার হয়ে আসছে,
আমি দেখতে পাচ্ছি -
অগণিত অন্ধকার হাত আমার দিকে তেড়ে আসছে,
আমি দশ হাজার উটের মতো দৌড়াতে পারছি না;
আমি দৌড়াতে পারছি না !

সেদিনও ভোর এসেছিল আমাদের নাগরিক জীবনে।





 আমি একটা পাগল
 ....অন্ত মিলন


আমি একটা পাগল, আস্ত পাগল, এবং পাগল, আর শুধুই পাগল !
আমি তোমার সিঁথির উপর দিয়ে হেঁটে যা-ই
তোমার মেরুদন্ডের বাঁকা পথে।
আমি তোমার পিঠের ভাঁজে ভাঁজে লিপিবদ্ধ করি
আমার ভাগ্য।
আমি তোমার সামনে দাঁড়াতে পারি না,
আমি তোমার চোখের দিকে তাকাতে পারি না !
আমি তোমার চোখের দিকে তাকালেই -
তোমার চোখের অগ্নি আমায় ভস্ম করে দেয়,
আমায় ধ্বংস করে দেয় ;
আমি কিছুতেই তোমার সামনে দাঁড়াতে পারি না।

আমি একদিন সাহস করে তোমার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম।
আমি একদিন সাহস করে তোমার চোখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম।
তোমার চোখের অগ্নি আমায় ভস্ম করে দিয়েছে,
আমায় ধ্বংস করে দিয়েছে।
তোমার চুল গুচ্ছ আমায় অক্টোপাসের মতো
টেনে নিয়েছে তোমার সিঁথিতে,
সে-ই থেকে আমার শুরু !

আমি তোমার সিঁথির উপর দিয়ে হেঁটে যা-ই
তোমার মেরুদন্ডের বাঁকা পথে !
আমি তোমার পিঠের ভাঁজে ভাঁজে লিপিবদ্ধ করি
আমার ভাগ্য।
আমি তোমার পিঠের চূড়ায় বসে নক্ষত্র দেখি,
নক্ষত্র গুনি, নক্ষত্র আবৃত্তি করি প্রতিদিন।
আমি একটা পাগল,
আস্ত পাগল,
এবং পাগল,
আর শুধুই পাগল !




কবিতা: বুমেরাং

তৃষা সাহা
০৯/০৩/২০৩০

সময়টা ঠিক বলতে পারবনা বাবু;
যখন ঘুম ভাঙল তখনো আলো ফোটেনি
ঠিক করে— মাঠে যাচ্ছিলাম কাজ সারতে,
তখন দেখি কি যেন একটা পড়ে আছে
রাস্তার ধারে; টর্চ মেরে দেখি
পাশের বাড়ীর সুজন মন্ডল পড়ে আছে!
বাবা গো! রক্তে একেবারে মাখামাখি!
ছুটে ঘরে এসে মানুষটারে জাগাই;
তা সে’ই ছুটাছুটি করে সবাইকে খবর দেয়!

আমার নাম? মালতী গো বাবু, মালতী মন্ডল!
সোয়ামীর নাম তারক মন্ডল।
আমি আপিস বাবুদের বাড়ী ঠিকে কাজ করি।
আমার মানুষটা ঐ সুজন কর্তার জমিতেই মুনিষ।
সুজন কর্তা লোক মন্দ ছিল না গো!
গরীবের জন্য তার মনে অনেক দয়া।
কুড়ি-পঁচিশ বিধে দুই ফসলি ধানের জমি তার;
তার বৌটাও নক্ষীমন্তর মেয়েমানুষ!
চিরটা কাল উপকার করেছে,
পূজা-পার্বণে মিষ্টিটা, ফলটা
আমার ছেলেপিলে গুলোকে দিত;
গেল মাসে আমার কোলেরটার জন্য
কলকাতা থেকে জামা এনে দিল,
মনটা বড় ভালো গো বাবু!

যবে থেকে সাহেব বাবুরা
কারখানা করার জমি খুঁজতে এল-
সব কেমন যেন পালটে গেল।
সুজন কর্তা চাষীদের বোঝাত—
কারখানা হলে নাকি কারো ভালো হবে না
রাতবিরেতে একা একা হেঁটে ফিরত
সক্কলে মানা করেছে— তা সেকথা শোনে কে?
যেন ভূতের ভর হয়েছিল;
সারাক্ষণ জমি আর জমি......জমি বাঁচাও লড়াই!

থানায় ওসির কাছে বয়ান দিয়ে বাড়ী ফিরলাম।
একটু পরে বিশু এসে বাকী টাকা দিয়ে যাবে;
অনেক টাকা...আদ্দেক টাকা আগেই দিয়েছে।
টাকাটা পেলেই মানুষটা খাসীর মাংস আনতে যাবে,
বাচ্চা গুলো কতকাল খায় নি!

বাসন গুলো মাজতে শুরু করলাম;
গতকাল সুজন কর্তার বাড়ী থেকে পায়েস পাঠিয়েছিল।
আমাদের দয়া দেখাতে এসেছিলেন! দয়া!
যত সব পয়সার ফুটানি। হুঃ!
দিয়েছি একেবারে বিষ দাঁত ভেঙে।
সুজন মন্ডলের যাবতীয় খবর
আমার কথাতেই তো মানুষটা বিশু কে দিয়েছিল,
নাহলে অন্য গ্রামের বিশুর তো জানার কথা না।

একটা প্রচন্ড শব্দে চমকে উঠলাম।
ঘর থেকে এল মনে হচ্ছে।
দৌড়ে দরজার সামনে গিয়ে দেখি-
মানুষটা পড়ে রক্তে ভেসে যাচ্ছে।
আরে! সামনের দরজা দিয়ে ওটা কে পালাল,
বিশু না?
চোখের সামনে সব কিছু যেন কুয়াশায় মিলিয়ে গেল-
আমি পাথরের মত দাঁড়িয়ে রইলাম।



তোমার অভাব
...অন্ত মিলন

তুমি নেই,
শুধু ঘাসফুল গুলো রয়ে গেছে
মগজের বারান্দায়।
পানকৌড়ির ঠোঁটে ঠোঁট রেখে ঝিমোয় অন্ধ তমসা,
ডাহুকের চিৎকারে জেগে ওঠে কালো আত্মা,
কালো আত্মার বিলাপে মায়া হরিণীর দীর্ঘশ্বাস।

তুমি নেই,
শুধু সন্ধা মালতী গুলো রয়ে গেছে
মগজের বারান্দায়।
রাজহংসীর পালকে লিপিবদ্ধ হয় হতাশার গান,
কাকের কর্কশ কণ্ঠে আবৃত্তি হয় রবীন্দ্রনাথ- নজরুল,
শিশিরের পায়ে চুম্বন করে বিষধর সাপ,
সাপদের মিছিলে শামিল হয় সময়ের হাত।

তুমি নেই,
শুধু গোলাপের পাপড়ি গুলো রয়ে গেছে
মগজের বারান্দায়।
গোলাপি হাঁস গুলো বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
সবুজ ময়ুর, মেটেমাথা টিয়া, খয়রা ঝিল্লি,
কিছুই আজ আর নেই, বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
ছাতিমের ডালে বসে টুনটুনির তৃপ্ত সঙ্গম,
আজ বিলুপ্ত প্রায়।
ছোট্ট প্রিয়াঙ্গু, জংলী বরই, তিত্তিরাজ,
সব হারিয়ে গেছে বাঁদর লাঠির মতো।

তুমি নেই,
শুধু কৃষ্ণচূড়া গুলো রয়ে গেছে
মগজের বারান্দায়।
ঘুঘুদের সম্মুখে ওঁৎ পেতে আছে বিলাসবহুল ফাঁদ,
কাকাতুয়ার বুক থেকে চুঁইয়ে পড়ছে যন্ত্রণা,
সাদা বক পাখি গুলো উড়ে যাচ্ছে মহাশূন্যে,
আর কোনোদিন ফিরবে না বাঁশ বাগানে।
সারস পাখি গুলো লুটোপুটি খাচ্ছে পথে-প্রান্তরে,
চড়ুই পাখি গুলো আর বাসা বাঁধে না বকুলের ডালে।

তুমি নেই,
শুধু রক্তকরবী গুলো রয়ে গেছে
মগজের বারান্দায়।
শহরের কলকারখানা গুলো বন্ধ হয়ে গেছে,
অফিস-আদালত গুলো আজ হুমকির মুখে,
রেস্তোরাঁ, মদি দোকান গুলো জনমানবহীন,
কাঁচাবাজারে আগুন ;
শ্রমিকেরা নেমেছে রাজপথে,
আন্দোলনের নামে চলছে গনহত্যা,
দুর্ভিক্ষ হামাগুড়ি দিচ্ছে ঘরের উঠোনে।

তুমি নেই,
শুধু গন্ধরাজ গুলো রয়ে গেছে
মগজের বারান্দায়।
কিছু হতাশা,
কিছু শূন্যতা,
কিছু বেদনা বোধ,
পেটুকের মতো গিলে ফেলেছে পৃথিবীর সুখ।
তুমি নেই,
শুধু কিছু স্বপ্ন রয়ে গেছে
মগজের বারান্দায়।



নেতা’ আপনাকেই বলছি
——————————


কাব্যগ্রন্থ- সময় ভেসে যায় বৃষ্টির জলে
কবি-রশিদ হারুন
২১/০৯/২০১৮


প্রিয় নেতা,
আমার বিপ্লবী অভিবাদন নিবেন।
আপনাকে আমি এখন প্রায়ই টেলিভিশন আর পত্রিকায় দেখি।
আপনার স্বাস্হ্য আগের চেয়ে ভালো হয়েছে।
মুখের কালো দাগগুলো বোধ হয় এখন নাই।
আপনাকে যেহেতু আর রোঁদে পুড়তে হয়না,
তাই আপনি দেখতে আরো সুন্দর হয়েছেন।

আপনার সাথে দেখা করার জন্য অনেক চেষ্টা করছি।
আপনার সরকারী বাসায় গিয়েছিলাম।
পুলিশ ঢুকতে দিলোনা।
ফোন করেছিলাম অনেকবার,
আপনার পুরোনো নাম্বারে।
আপনার ব্যাক্তিগত সহকারী প্রতিবারই ফোন ধরে বলে-
“ আপনি পরে ফোন করুন, স্যার এখন মিটিং এ”।

আমি প্রতিবারই বলি-
“আমার নামটা বলবেন,
আমাকে যেন উনি এই নাম্বারে একটা ফোন দেন।
আমার খুব জরুরী দরকার।”

আপনার ফোন আর কখনোই আসলো না।
আপনাকে বোধহয় আমার নামটা

 বলেনি আপনার ব্যাক্তিগত সহকারী!!
বললে ,আপনি আমাকে নিশ্চয়ই ফোন করতেন।

আমি খুবই সমস্যায় পড়েছি।
‘বিপ্লব’ শব্দ’টি আমি প্রথমে আপনার মুখ থেকে শুনি।
তখন আমি কলেজে ১ম বর্ষে।
আপনি আমাদের ছাত্র সংসদের নেতা ছিলেন।
সবার নায়ক ছিলেন শুধু আপনার প্রতিবাদী কথার জন্য।
খুব সুন্দর ভাবে কথা বলতে পারতেন আপনি।
শুধু শুনতেই ইচ্ছে করতো।
আপনার চলাফেরা, কথাবার্তা, 

সবই ছিলো আমাদের আদর্শ।
আপনার আপোষহীন চরিত্র আমাকে

 নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে।
আপনি আমাকে যে ‘বিপ্লব’ শিখিয়েছিলেন-
সেখানে ছিলো শুধু সমাজ পরিবর্তনের কথা।
সম অধিকারের কথা,
ধর্মনিরপক্ষ রাষ্ট্রর কথা,
ক্ষধার্ত মানুষের জন্য খাবারের গল্প,
‘মানুষ’ এর জন্য মানুষের ত্যাগের কথা।
আহা শুধু শুনতেই ইচ্ছে করতো।
নিজেকে তখন মনে হতো চরম ‘বিপ্লবী’।

আপনার হয়তো মন নেই-
আমি আমার অসুস্হ বিধবা ‘মা’এর চিকিৎসার টাকা 

আপনার ‘বিপ্লবী ফান্ডে’ দিয়েছিলাম।
আপনি তখন আমাকে দেখিয়ে সবাইকে বলেছিলেন,
“ ওর দিকে তাকাও,
ও আজ আমাদের জন্য উদাহরণ হয়ে থাকলো।
দেশ হলো আসল মা।
একজন ‘মা’ মরে গেলে কিছু হবে না,
কিন্ত্তু দেশ মরে গেলে সবার ‘মা’ মরে যাবে”।
তখন আমার গর্বে বুক ফুলে উঠেছিলো।

আমার ‘মা’ বিনা চিকিৎসায় ঠিকই মরে গিয়েছিলো।
কারোই কিছু হয়নি,
শুধু কষ্ট পেয়ে চিৎকার কেঁদেছিলো 

আমার ছোট ভাই-বোন গুলো।
ওরাতো আর ‘বিপ্লব’ বুঝতো না।
আমারও কেমন যেনো কান্না পেয়েছিলো।
তবুও কাঁদিনি, যদি কেউ দেখে ফেলে,
আমি যে তখন চরম বিপ্লবী।

এই বিপ্লব বুকে নিয়ে সারাদিন আপনার সাথেই ছিলাম,
আপনার দেখানো রাস্তায় চলতে গিয়ে,
পুলিশ কেইস আর জেল জুলুমে লেখা পড়াটাও

 শেষ করতে পারলাম না।
জেলে বসেই শুনেছি আপনি সরকারী দলে যোগ দিয়েছেন,
আপনি এখন সরকারের বড় মন্ত্রী।

অনেক’দিন পর জেল থেকে বেড়িয়ে দেখি
একজন ও অভ্যর্থনা জানতে জেল গেটে নেই।
কেউ চিনলো না আমাকে।
শুধু দরিদ্র ভাই-বোন গুলো বুকে জড়িয়ে ধরেছিলো।

আপনাকে আমার জরুরী দরকার শুধু
একটি কথা জানার জন্য-
আপনি আমাকে যে বলেছিলেন,
“একজন ‘মা’ মরে গেলে কিছু হবে না,
কিন্ত্তু দেশ মরে গেলে সবার ‘মা’ মরে যাবে”।
আমার যে এখন সারাদিন মা’র কথাই মনে পড়ে।
যে’দিন পত্রিকায় আপনার মা’য়ের সাথে

 সুন্দর হাসিখুসি একটা ছবি দেখলাম-
সে’দিন আমার মা’র কথা বেশি মনে পড়লো।
আচ্ছা বলুনতো,-
‘বিপ্লব’ কথার অর্থ কি বদলে গেছে
আমি যখন জেলে ছিলাম?”
আমার খুব সন্দেহ হয় আমি বিপ্লবী হতে পারিনি।
আপনি যে ভাবে বলেছিলেন।

নেতা,
আমার না সারাদিন শুধু মা’র কথাই মনে পড়ে।
“বিপ্লব দীর্ঘজীবি হোক”
——————————————



---একটু ছুঁয়ে থেকো ---
রাশেদুল ইসলাম


এই শোন?
তুমি শুধু একটু পাশে থেকো,
আলতো করে ছুঁয়ে হাতটা শুধু ধরে রেখো।

যেমন করে ছুঁয়ে যায় পাখির ডাক ভোর ,
আর ঘুম ভেঙে রমনী ছোঁয় ঘরের ডোর !
যেমন করে ছুঁয়ে যায় সূর্যের হাসি,
সকালের নরম রোদ!
যেমন করে নদী ছুঁয়ে যায় প্রবল স্রোত।
যেমন করে রাখাল ছুঁয়ে যায় বাঁশি।

~~~~কি গো ওমন ছুঁয়ে
পাশে থাকবে তো?

এই শোন?
আমার পাশে থাকবে গো,
বাগানে যেমন ফুল ছুঁয়ে থাকে,
নৌকা যেমন নদীর কূল ছুঁয়ে থাকে!
বৃক্ষ যেমন ছুঁয়ে থাকে পাতা লতা শাখা ,
চিল, শকুনি, ঈগল যেমন ছুঁয়ে থাকে পাখা।

ওমন করে করে ছুঁয়ে পাশে থাকবে।
ঘাস যেমন ছুঁয়ে থাকে মাটি ,
বুড়ো বুড়ি যেমন ছুঁয়ে থাকে লাঠি !
সাগর যেমন ছুঁয়ে থাকে চর ,
প্রকৃতি যেমন ছুঁয়ে থাকে ঝর !

ওমন করে ছুঁয়ে ছুঁয়ে ,
থাকবে পাশে হাতটি শুধু ধরে।

~~~~কি গো পারবে না কি তুমি?
ঝিনুক যেমন ছুঁয়ে থাকে মুক্ত "
কথা এবং ছন্দ যেমন ছুঁয়ে থাকে লুপ্ত!
কাশ ফুল যেমন ছুঁয়ে থাকে বন "
প্রেমিকা যেমন ছুঁয়ে থাকে মন!
মাছ যেমন ছুঁয়ে থাকে জল ,
কাঠ বেড়ালী যেমন ছুঁয়ে থাকে ফল !

ওমন করে ছুঁয়ে ছুঁয়ে ,
শুধু থাকবে হাতটা আমার ধরে।

বসন্ত যেমন ছুঁয়ে থাকে কোকিল পাখি "
অশ্রু যেমন ছুঁয়ে থাকে আঁখি !
রাস্তা যেমন ছুঁয়ে থাকে গাড়ী ,
টিনের চাল যেমন করে ছুঁয়ে থাকে বাড়ি !

ওমন করে ছুঁয়ে ছুঁয়ে ,
শুধুই হাতটা রেখো ধরে।

~~~~কি গো পারবে তো?
মাঝি যেমন করে ছুঁয়ে থাকে পাল ,
জেলে যেমন করে ছুঁয়ে থাকে জাল !
বৃষ্টি যেমন করে ছুঁয়ে থাকে আকাশ ,
বৃক্ষ বন যেমন করে ছুঁয়ে থাকে বাতাস !

ওমন করে ছুঁয়ে ছুঁয়ে ,
শুধু হাতটা রাখবে গো ধরে।

ঝর্ণা যেমন ছুঁয়ে থাকে পাহাড়,
ক্ষুদা যেমন করে ছুঁয়ে থাকে আহার !

ওমন করে কিন্তু ছুঁয়ে থাকতেই হবে?
সূর্য যেমন শেষ বিদায়ে ছুঁয়ে যায় সন্ধ্যা ,
প্রেমিক যেমন কমল হাতে ছুঁয়ে থাকে রজনী গন্ধা !
যেমন করে ছুঁয়ে থাকে জোনাকি রাত,
ঠিক তেমন করে হাতে ছুঁয়ে রেখো হাত!

আঁধারে যেমন ওঠে জোছনা,
আমাকে ছুঁয়ে করে রেখো ওসনা!

ওমন করে ছুঁয়ে ছুঁয়ে ,
শুধু হাতটা রাখবে ধরে!

আমি জানি এই হাত তুমি ছাড়বে না,
এই হাত ছাড়া একা থাকতে তুমিও গো পারবে না!

যেমন করে ধান ছুঁয়ে থাকে জমি,
এবার তেমন করে ঠিক বলেছো তুমি!

ছাড়বো না গো ছাড়বো না,
একা থাকতে যে আমিও পারবো না!

শক্ত করে ধরবো,
ঐ হাতে হাত রেখে দুজন এক সাথে মরবো ।





তুমি বরং জিড়িয়ে নাও 
/ অন্ত মিলন

আমার ভাঙা কপালের উপর দিয়ে তুমি 
কোথায় হেঁটে যাচ্ছো নারী?
এই পথ তোমায় তীর্থ চেনাবে না কোনোদিন।
এই পথে বিপদ অনিবার্য !
এই বিপদসীমার উপর দিয়ে তুমি কোথায় হেঁটে যাচ্ছো নারী ?
বরং তুমি আমার বুকের উপর দিয়ে হেঁটে যাও,
তুমি আমার কাশ ফুলের উপর দিয়ে হেঁটে যাও,
তুমি আমার কবিতার উপর দিয়ে হেঁটে যাও !
আমার বুকের কাশফুল আর আমার 

বুকের কবিতাগুলো তোমায় তীর্থ চেনাবে।
হেঁটে হেঁটে তুমি বড়ো ক্লান্ত, অবসন্ন !
তোমার একটুখানি বিশ্রাম খুব বেশি দরকার।
তুমি বরং আমার ডান চোখের ভেতরে গহীন গুহায়
কিছুসময় জিড়িয়ে নাও !
ভয় নেই, ভূতপ্রেত তোমায় তাড়া করবে না।

 ভয়ংকর কোনো গোখরো, কিংবা সিংহের কোনো হুংকার নেই 
আমার চোখের ভেতরে গহীন গুহায়।
তোমার ভয় নেই নারী,
তুমি কিছুসময় জিড়িয়ে নাও !

তোমার পায়ে কাঁটা ফুটে রক্ত বেরোচ্ছে !
তুমি বরং আমার ঠোঁটে রাখো তোমার পা যুগল,
আমার ঠোঁট ব্লটিং পেপারের মতো
শুষে নেবে তোমার পায়ের ক্ষত।
তুমি বরং আমার ঠোঁটে রাখো তোমার পা যুগল !

এই রাতবেরাতে আমার পোড়া কপালের 
উপর দিয়ে হেঁটে হেঁটে তুমি কোথায় যাচ্ছো নারী ?
এই পথ তোমায় গন্তব্য চেনাবে না কোনোদিন।
এই পথে ধ্বংস অনিবার্য !
এই আঁধার পথে হেঁটে তুমি কোথায় যাচ্ছো নারী ?
বরং তুমি আমার বুকের উপর দিয়ে হেঁটে যাও,
তুমি আমার দূর্বাঘাসের উপর দিয়ে হেঁটে যাও,
তুমি আমার অণুগল্পের উপর দিয়ে হেঁটে যাও !
আমার বুকের দূর্বাঘাস আর আমার বুকের অণুগল্প গুলো
তোমায় তোমার গন্তব্য চেনাবে।

হেঁটে হেঁটে তুমি বড়ো ক্লান্ত, অবসন্ন !
তুমি বরং আমার ডান চোখের ভেতরে গহীন গুহায়
কিছু সময় জিড়িয়ে নাও !




























No comments:

Post a Comment

প্রেমের কবিতা

আমাকে ভালোবাসার পর – হুমায়ুন আজাদ আমাকে ভালবাসার পর আর কিছুই আগের মত থাকবে না তোমার, যেমন হিরোশিমার পর আর কিছুই আগের মতো ন...