আবু খায়ের
অন্তত একবার হলেও বলুক
আবু খায়ের
আমাকে অন্তত একবার হলেও কেউ বলুক; ভালোবাসি.....
তারপর না হয় ভুলে যাক।
ভুলে যাক একটা পূর্ণিমা অথবা এক অমাবস্যার রাত।
অন্তত একবার হলেও কেউ বলুক;
আমি সে আনন্দে এ খরা চৈত্রের বুকে আনবো আষাঢ়ের জল;
হিমালয় থেকে আনবো কুড়ে একঝাক বাউণ্ডুলে মেঘের দল।
আমাকে অন্তত একবার হলেও কেউ বলুক;
আমি শরতের গলায় ঘন্টা ঝুলিয়ে আনবো বসন্ত;
আঁধো ফোঁটা কলিকার বুকে ঘ্রাণ।
আমি মাতাল হয়ে নৃত্যের তালে
দিতে পারি তার তরে এ জীবন বলিদান।
আমাকে অন্তত একবার হলেও কেউ বলুক;
এ নশ্বর জীবনের এ এক অবিনশ্বর চাওয়া ...
অন্তত একবার হলেও দুলুক এ দেহ;
কারো রেখে যাওয়া সে বিস্মৃত কথামালায়...
একবার হলেও ভাবুক
ভাসুক সে স্রোতে এ প্রাণ।
আমাকে অন্তত একবার হলেও কেউ বলুক;
আমি সে আবেশেই পারি দিবো
আরও এক নক্ষত্রের বছর;
আরও এক নিঃসঙ্গ শহর।
আমাকে অন্তত একবার হলেও কেউ বলুক;
ভালোবাসি.....।
28-10-19
তুমি যেভাবেই থাকো ধূসরে ঊষর;
বিরান তপ্ত ভূমি...
আমি বলরাম সেজে সেথা বুনিবো ফসল;
সবুজ আনিবো চুমি।
কখনো রোপিবো প্রেমের পুষ্প
গাঁথিবো গলার হার;
কখনো রজনী ক্লান্ত সজনী
চন্দ্রমল্লিকার।
কখনো রোপিবো অভিমানী চাপা;
শিউলি বকুল জুঁই...
শোভিত খোঁপা ফুটাবো জবা
তারি আশায় জেগে রই।
কখনো মিলনে স্মৃতিও স্বপনে
ফোঁটাবো নিশিথ কুঁড়ি;
আনিবোই বসন্ত এ আশ্বিনে
নক্ষত্র দিয়ে পাড়ি।
অ-প্রেমিকের জন্য ----
আবু খায়ের
ছেলেটি আজও ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে।
গত বসন্তে তার হাতে ছিলো
টাকটকে লাল একটা গোলাপ....
আজ জলন্ত সিগারেট।
গত বসন্তে তার চোঁখে স্বপ্ন ছিলো;
আজ কালো চশমার ঘোলা আকাশ।
অথচ ছেলেটি কারো প্রেমিক হতে চেয়েছিলো।
চেয়েছিলো এক শ্রাবণের দুপুরে কারো আঙ্গুল ছুঁয়ে
নরম বৃষ্টির উল্লাসে ভিজতে।
ছেলেটি আজও ভেজে..
মেঘেরা ঘনো হলে মরে যায় আকাশ
কালো মেঘ টল টল করে তার চোঁখে;
কেউ দেখেনা, কেউ জানে না...
ছেলেটি ভিজে যায় শোকে।
অথচ ছেলেটি কারো প্রেমিক হতে চেয়েছিলো।
স্মৃতিরা সুখে থাক;
আবু খায়ের
30-09-19
আমি আধাঁরেই জাগিবো রাতি
এক আকাশ কষ্ট নিয়ে এ নক্ষত্রের রাত।
এ হেমন্তের মেঘের দুপুর
না হয় একটু বৃষ্টি ঝড়ুক,
একটু কালো হোক আকাশ।
আমি বহুকাল পুষেছি
পুড়েছি অনলে শুধু;
এবার না হয় ভিজুক হৃদয়
সে আঁখি জলে।
তবু স্মৃতিরা সুখে থাক;
আমি না হয় আবার অপেক্ষা করবো ফাগুনের জন্য,
আরেক বসন্তের জন্য,
আরেক পূর্ণিমার জন্য ।
এ অবসাদের পৃথিবী নিভে যাক;
তবু স্মৃতিরা সুখে থাক।
মরে যাক দূর্বার ডগায় জেগে থাকা এক ফোঁটা শিশিরের জল।
আমিতো বেঁধেছি স্বপন অকারণে শুধু;
মেঘ আসে ঊড়ে যায়
একঝাক বকের দল।
তবু স্মৃতিরা সুখে থাক ।
সুখে থাক আমার নির্ঘুমতা
আমার নিরবতার সাথী
এক একটা অন্ধকার রাত।
07-03-2020
কেনো গো তুমি এ আঁধারে ফোটালে এতোটা ফুল;
মোর সুরের রাণী তন্দ্রাহেরী
নাম না জানা বকুল।
আমিতো ছিলাম উদাসী বাউল
ওগো বিবর্ণ সারাবেলা;
কখনো নদী, কখনো সাগর
কখনো তারার মেলা।
কখনো ছুঁটেছি দিগম্বরী
আশায় আশার তরী;
অকূলে আষাঢ়ে দুলেছি হারিয়ে
অজানার পথ ধরি।
মোর কাননে ফোটালে আজি
নিশিথ মহুয়া ফুল;
মোর সুরের রাণী তন্দ্রাহেরী
নাম না জানা বকুল।
25-11-19
গত রাতের শেষ প্রার্থনাতেও তুমি ছিলে।
অথচ কি আশ্চর্য...!
আজ ভোর হলো,
ঘুমও ভাঙ্গলো আমার
একরাশ হতাশা, গ্লানি নিয়ে।
একটা কর্কশ ঘড়ির বিকট শব্দে ।
কি অসহ্য এ কৃত্রিম ডাক,
আমার ঘুম ভাঙ্গার আয়োজন,
আমার প্রতিদিনের সকাল।
চেয়ে দেখি, এক তীক্ষ্ণ আলো
জানালার পথ ধরে এসে
ঢলে পড়েছে আমার বিবর্ণ বিছানায়।
কি উদভ্রান্ত সে আলো !
আমার অন্ধকার ঘরে যেন এ এক অস্ত্রধারী সৈনিক,
হুংকার করে নিজের শক্তির প্রকাশ ঘটাচ্ছে
আমার এই অন্ধকার নিঃশব্দতার বাসরে...।
14-02-2020 (পহেলা ফাল্গুন)
কুয়াশার বুক চিরে যখন
বসন্ত বাতাস দোল দিয়ে যাচ্ছে মূক এই প্রান্তর;
প্রকৃতিও তখন লজ্জাবতি সাজে সেজেছে,
এঁকেছে দেহে রঙের ছটা।
আমি আগন্তুকের মতো অভিসন্ধি মনে উৎস খুঁজি...
কোথায় লুকিয়ে ছিলো এতকাল এ রূপ ।
সেই কবে থেকেই ভেবেছি;
ও রং মেখে
আমি আবির আনিবো এ পৃথিবীর বুকে।
অথচ,
প্রতীক্ষায়, প্রতীক্ষায়, আমি হারিয়েছি...
নিভে গেছে ধূপ; শীতের নদীর মতোই চুপ।
আমি জানি,
যে নদীর স্রোত খুইয়েছে জলজ গজে;
তার বুকে ঢেউ বড়ই বেমানান।
বেমানান আজ এ বসন্তও !
উৎসবের নগরীর নগ্ন পদযাত্রায়
কাঁটা বিঁধে রক্তাক্ত হয় পা;
লোকে আলতা ভেবে ভেংচি কাটে...।
ওরা জানেনা,
ভালোবাসার জন্য মানুষ বাঁচেনা;
বাঁচার জন্য মানুষ বারবার ভালোবাসে।
একদম ভালো আছি
০৭-০২-২০২০
একদম ভালো আছি।
দিব্যি কাটছে সময়; যাচ্ছে দিন।
কোন অভিযোগ নেই কারো...
অভিমানে ঝরেনি আঁখি।
এখন একগাদা অবসর বুকে নিয়ে দম ফেলি জোরে।
কেউ বলেনা, কেমন আছো...?
মিথ্যে করেও আর উত্তর দিতে হয়না... ভালো আছি বেশ !
দিব্যি কাটছে দিন; যাচ্ছে সময়।
নেই কোন তাড়া কাজে;
মুঠোফোনও বেশ শান্ত।
আলস্যে আঙ্গুলের ছাপ
নাম্বারের চেয়ে ক্যামেরাতে অভ্যস্ত হয়েছে এখন।
নেই অলিক স্বপ্নে জেগে
নিদ্রাহীন বৃথা আলাপন।
দিব্যি কাটছে সময়; যাচ্ছে দিন।
একদম ভালো আছি।
08-12-19
প্রিয়তম,
আবু খায়ের
তুমি চলে যাওয়ার পরই বুঝতে পেরেছি;
এই ব্যস্ত শহরে একদিন
প্রেম এসেছিলো।
অথচ এই প্রেম পাবার জন্য কতটাইনা আকুল ছিলাম।
প্রতিনিয়তই কামনা করতাম, স্বপ্ন দেখতাম,
আঁকতাম মনের কোণে সঙ্গোপনে।
একদিন প্রেমে পড়বো...
কারো নরম হাতের আলতো স্পর্শে ভুলে যাবো
চৈত্রের প্রখর দুপুরের তাপদাহ।
আলস্যে আঙ্গুলের ডগায় পিষ্ট হবে বিকেলের বাদাম।
পকেট ভর্তি টাকা....
আমরা হেঁটে যাবো মাইলের পর মাইল।
একটা টকটকে লাল গোলাপের জন্য
পুরো শহরে চলবে চিরুনি অভিযান।
কারো আবদার মেটানোর জন্য মধ্য রাতে উঠবে সূর্য।
আমি চোঁখ বুজে পৌঁছে যাবো গলির শেষ প্রান্তে।
তুমি চলে যাওয়ার পরই বুঝতে পেরেছি;
এই ব্যস্ত শহরে একদিন
প্রেম এসেছিলো।
অথচ তুমি যখন ছিলে..
কি আশ্চর্য;
একটু ও বুঝতে পারিনি তা।
এই যে তোমাকে মনে করছি,
ভীষণ রকম মনে করছি....
যেন তুমি চলে গিয়ে বেশ
প্রেমিক হয়েছো..!
তুমি যখন ছিলে;
কি নিরেট নির্লিপ্ত ছিলে...
তোমার হ্যাঁ কখনো উচ্চারিত হ্যাঁ ছিলো না; নিরবতা ছিলো।
আর না; চরম অট্টহাসি ...
তুমি চলে যাওয়ার পরই বুঝতে পেরেছি;
প্রেম এসেছিলো।
০৭-০২-২০২০
একদম ভালো আছি।
দিব্যি কাটছে সময়; যাচ্ছে দিন।
কোন অভিযোগ নেই কারো...
অভিমানে ঝরেনি আঁখি।
এখন একগাদা অবসর বুকে নিয়ে দম ফেলি জোরে।
কেউ বলেনা, কেমন আছো...?
মিথ্যে করেও আর উত্তর দিতে হয়না... ভালো আছি বেশ !
দিব্যি কাটছে দিন; যাচ্ছে সময়।
নেই কোন তাড়া কাজে;
মুঠোফোনও বেশ শান্ত।
আলস্যে আঙ্গুলের ছাপ
নাম্বারের চেয়ে ক্যামেরাতে অভ্যস্ত হয়েছে এখন।
নেই অলিক স্বপ্নে জেগে
নিদ্রাহীন বৃথা আলাপন।
দিব্যি কাটছে সময়; যাচ্ছে দিন।
একদম ভালো আছি।
08-12-19
প্রিয়তম,
আবু খায়ের
তুমি চলে যাওয়ার পরই বুঝতে পেরেছি;
এই ব্যস্ত শহরে একদিন
প্রেম এসেছিলো।
অথচ এই প্রেম পাবার জন্য কতটাইনা আকুল ছিলাম।
প্রতিনিয়তই কামনা করতাম, স্বপ্ন দেখতাম,
আঁকতাম মনের কোণে সঙ্গোপনে।
একদিন প্রেমে পড়বো...
কারো নরম হাতের আলতো স্পর্শে ভুলে যাবো
চৈত্রের প্রখর দুপুরের তাপদাহ।
আলস্যে আঙ্গুলের ডগায় পিষ্ট হবে বিকেলের বাদাম।
পকেট ভর্তি টাকা....
আমরা হেঁটে যাবো মাইলের পর মাইল।
একটা টকটকে লাল গোলাপের জন্য
পুরো শহরে চলবে চিরুনি অভিযান।
কারো আবদার মেটানোর জন্য মধ্য রাতে উঠবে সূর্য।
আমি চোঁখ বুজে পৌঁছে যাবো গলির শেষ প্রান্তে।
তুমি চলে যাওয়ার পরই বুঝতে পেরেছি;
এই ব্যস্ত শহরে একদিন
প্রেম এসেছিলো।
অথচ তুমি যখন ছিলে..
কি আশ্চর্য;
একটু ও বুঝতে পারিনি তা।
এই যে তোমাকে মনে করছি,
ভীষণ রকম মনে করছি....
যেন তুমি চলে গিয়ে বেশ
প্রেমিক হয়েছো..!
তুমি যখন ছিলে;
কি নিরেট নির্লিপ্ত ছিলে...
তোমার হ্যাঁ কখনো উচ্চারিত হ্যাঁ ছিলো না; নিরবতা ছিলো।
আর না; চরম অট্টহাসি ...
তুমি চলে যাওয়ার পরই বুঝতে পেরেছি;
প্রেম এসেছিলো।
corona virus
19-03-2020 (12:00pm)
একি আশ্চর্য দিন পার করছি।
পেটে প্রচণ্ড ক্ষুধা,
সামনে থরে থরে ঝোলানো মুখরোচক কতো খাবার,
পকেট ভর্তি টাকা;
অথচ কিছু কিনতে পারছি না।
কোলাহল মুখর এ জনপদ
এখন যেন এক মৃত্যুপুরী।
কি সুনসান নিরবতা বয়ে যাচ্ছে ।
19-03-2020 (12:00pm)
একি আশ্চর্য দিন পার করছি।
পেটে প্রচণ্ড ক্ষুধা,
সামনে থরে থরে ঝোলানো মুখরোচক কতো খাবার,
পকেট ভর্তি টাকা;
অথচ কিছু কিনতে পারছি না।
কোলাহল মুখর এ জনপদ
এখন যেন এক মৃত্যুপুরী।
কি সুনসান নিরবতা বয়ে যাচ্ছে ।
একটা দুটো গণপরিবহন চললেও
যাত্রী বলতে চালক আর হেলপার।
ক'দিন আগেও যে স্কুল ছোট ছোট
ক'দিন আগেও যে স্কুল ছোট ছোট
শিশুদের কলতানে মুখর থাকতো;
আজ তার মূল ফটক বন্ধ।
দুটো বেওয়ারিশ নেড়ি কুকুর যেন দখল করেছে এ শহর।
ফুটপাথ, গলি, চৌরাস্তা, চায়ের দোকান, রেল, বাস স্ট্যান্ড
সবখানেই যেন আতঙ্ক আর আতঙ্ক।
এই বুঝি কার বিয়োগের খবর এলো কানে।
অফিসগামী পুরুষটি এখন স্ত্রীর সাথে রান্নায় ব্যস্ত।
আজ তার মূল ফটক বন্ধ।
দুটো বেওয়ারিশ নেড়ি কুকুর যেন দখল করেছে এ শহর।
ফুটপাথ, গলি, চৌরাস্তা, চায়ের দোকান, রেল, বাস স্ট্যান্ড
সবখানেই যেন আতঙ্ক আর আতঙ্ক।
এই বুঝি কার বিয়োগের খবর এলো কানে।
অফিসগামী পুরুষটি এখন স্ত্রীর সাথে রান্নায় ব্যস্ত।
তরকারি তে ঝাল বেশি হলে কোন অভিযোগ করছেনা।
কলের শ্রমিক, খেতের মজুর লোহা মাটি ছেড়ে ফিরেছে নীড়ে।
বিড়ি ফুঁকাতে ফুঁকাতে কেউ তার
কলের শ্রমিক, খেতের মজুর লোহা মাটি ছেড়ে ফিরেছে নীড়ে।
বিড়ি ফুঁকাতে ফুঁকাতে কেউ তার
পথের সঙ্গীর সাথে কোন কথা বলেনা আর।
বিচারলয় বন্ধ তাই আইনজীবীর
বিচারলয় বন্ধ তাই আইনজীবীর
কালো কোটে নেই সত্য মিথ্যার লড়াই।
যে ছেলেটিকে এবার এ বসন্তেই প্রথম প্রেমে পরেছে;
নেই আবদার তারও সদ্য প্রেমিকার আঙ্গুল ছোঁয়ার।
চুম্বনে আতঙ্ক জাগে মনে।
রিকশার খোলা হুকে প্রেম পলাতক যোযন যোযন দূরে।
যে ছেলেটিকে এবার এ বসন্তেই প্রথম প্রেমে পরেছে;
নেই আবদার তারও সদ্য প্রেমিকার আঙ্গুল ছোঁয়ার।
চুম্বনে আতঙ্ক জাগে মনে।
রিকশার খোলা হুকে প্রেম পলাতক যোযন যোযন দূরে।
13-01-2020
তুমি নেই ভাবলেই কেমন জানি
বুকের ভেতর খাঁ খাঁ করে;
লু- হাওয়া বয়ে যায়,
আমার ভিতর, বাহির।
শ্মশানের চিতার চেয়েও গভীর দগ্ধ করে এ শূণ্যতা...।
তুমি তো কোন কালেই ছিলেনা;
তবে কেন এ প্রতীক্ষা ?
সরিষার বনে এখন হলুদের বসবাস;
বুকের খাঁচায় গাঢ় অন্ধকার।
দূরত্ব মানেই কি অতীত ?
এখন বধুর সাজে সেজেছে হিমালয়;
শুভ্রতা তার বুকে....
উত্তাল যৌবনা তটিনীর বুকে
জেগেছে চর;
ছিন্নমূল পেলো ঠাঁই....
আমার কি এক টুকরো ও জায়গা নেই ?
নেই কাউকে স্পর্শ করার অধিকার।
একদিন নারীকে আমি নদী বলে জানতাম;
এখন তার বুকে ঢেউয়ের উৎসব।
আমি তীরের নাবিকের মতো
দাঁড় টানি;
নোঙরে ভঙ্গুর হয় যাত্রা।
রঙের রাত্রিগুলো এখন জ্বেলেছে নিয়ন আলো....
শরাবের আসরে আমি এক অচেনা অতিথি,
নেশার বদলে ঘুম পায় ভীষণ।
তুমি নেই ভাবলেই কেমন জানি বুকের ভেতর খাঁ খাঁ করে;
লু হাওয়া বয়ে যায়
আমার ভিতর, বাহির।
তুমি নেই ভাবলেই কেমন জানি
বুকের ভেতর খাঁ খাঁ করে;
লু- হাওয়া বয়ে যায়,
আমার ভিতর, বাহির।
শ্মশানের চিতার চেয়েও গভীর দগ্ধ করে এ শূণ্যতা...।
তুমি তো কোন কালেই ছিলেনা;
তবে কেন এ প্রতীক্ষা ?
সরিষার বনে এখন হলুদের বসবাস;
বুকের খাঁচায় গাঢ় অন্ধকার।
দূরত্ব মানেই কি অতীত ?
এখন বধুর সাজে সেজেছে হিমালয়;
শুভ্রতা তার বুকে....
উত্তাল যৌবনা তটিনীর বুকে
জেগেছে চর;
ছিন্নমূল পেলো ঠাঁই....
আমার কি এক টুকরো ও জায়গা নেই ?
নেই কাউকে স্পর্শ করার অধিকার।
একদিন নারীকে আমি নদী বলে জানতাম;
এখন তার বুকে ঢেউয়ের উৎসব।
আমি তীরের নাবিকের মতো
দাঁড় টানি;
নোঙরে ভঙ্গুর হয় যাত্রা।
রঙের রাত্রিগুলো এখন জ্বেলেছে নিয়ন আলো....
শরাবের আসরে আমি এক অচেনা অতিথি,
নেশার বদলে ঘুম পায় ভীষণ।
তুমি নেই ভাবলেই কেমন জানি বুকের ভেতর খাঁ খাঁ করে;
লু হাওয়া বয়ে যায়
আমার ভিতর, বাহির।
20-03-2020 (10:15am)
আমি এখনো রোজ প্রত্যুষে ভোরে ঘুম ভাঙ্গা বন্ধ চোখে
পাশফিরে দু'হাত বাড়িয়ে চশমা খোঁজার মিথ্যে অজুহাতে তোমাকেই খুঁজি।
প্রিয়তম,
প্রতিরাতের যে স্বপ্নে তুমি থাকো;
মনে হয় সেই রাতটা আমার উজ্জ্বল সূর্যের দিন।
আজকাল ঘুম থেকে উঠতে তাই বড্ড ভয় হয়।
ঘুম ভাঙ্গা চোখে চেয়ে যদি তুমি হারিয়ে যাও...!
ওরা মিছেমিছি মিথ্যে বলে আমায়।
মানুষ মরে গেলে দূর গগনের নক্ষত্র হয়;
কই, না তো !
তুমি তো প্রতিরাত কি গভীর মমতায় জড়িয়ে রাখছো আমায়।
ওষ্ঠের উপর ওষ্ঠ রেখে কি উষ্ণ নিঃশ্বাস !
মনে হয়, এই পৌষের হিমরাত
তুমি বসন্ত ঋতু, প্রখর চৈত্র।
আমি মেঘ হয়ে ঝরে পড়ি
বৃষ্টি হই, জল হই।
আঙ্গুলের স্পর্শে যদি ভোর আসে;
তবে তাই হোক....
আমি মৃত্যুকে করবো আলিঙ্গন।
________/অতীত\_______
একদিন সব নদীর কোলাহল ফুরিয়ে গেলে তখন
সন্ধ্যার কাকেরা ফেরে ঘরে;
একদিন একটা চিল
গোধূলির আবছা আলোর পরে
ডানা মেলে একাকি আকাশে ঊড়ে।
একদিন সেই সব দিন ছিলো,
হাতের মুঠোয় লাটাই ছিলো,
মাথার উপর মস্তবড় ঘুড়ি ছিলো,
আর তুমি।
একদিন মনে পড়ে সেই সব দিন;
চৈত্রের শেষ রোদের মতো সমস্ত আকাশটা লাল হলে
নিভে যায় স্বপন,
নিদ্রাবিহীন;
কেটে যায় নক্ষত্র বছর পর।
একদিন জোসনার আকাশে তারারাও
ছুটে চলে অবিরত জোনাকির মতো,
তবু আশা জাগে;
বসন্ত ফুরিয়েছি, ফুরিয়ে যায় সময় ।
05-01-2020
আজকাল মানুষের চেয়ে কবিতাকেই বেশি ভালোবেসে ফেলেছি ...
বলছি না, মানুষগুলো অসুন্দর...
কিন্তু কবিতার চেয়ে তো সুন্দর নয়।
এই যে, পড়ছি,
মনে মনে আঁকছি
কতো রূপ তার রং।
এখানে সমুদ্রের জল নেই;
অথচ আমি প্রতিদিনই তো করছি অবগাহন।
পাড় ভাঙ্গছে, পাড় গড়ছে আবার;
একটা দু'টো পাখি ঊড়ছে,
ঠোঁটে তার রক্তিম সূর্য সবার।
প্রতিদিনই তো আমি ভিজছি,
ভিজে যাচ্ছে আমার ভিতর বাহির...
ভাসছি সে জলে;
প্রশান্তির।
আজকাল মানুষের চেয়ে কবিতাকেই বেশি ভালোবেসে ফেলেছি....
এখানে নেই কোন বড় হওয়ার অসীম প্রতিযোগিতা,
নিষিদ্ধ ভক্ষণ করে আধুনিকতা,
কিংবা নাই এখানে বিত্তের বড়াই...
এখানে নিঃশ্বাসে শব্দ ভাসে,
সুর আসে ছন্দের তালে,
উপমায় অলঙ্কৃত হয় দেহ,
যমক, অনুপ্রাসের রুদ্ধশ্বাসে শক্তি পায় মন;
এখন শ্লেষে ক্লেশ ছাড়াই বাঁচি
উৎপ্রেক্ষা উপেক্ষা করে
অযাচিত স্বপন।
21-03-2020 (সন্ধ্যা)
মধুমিতা,
এই মাতাল বসন্তের দিনেও আজ তুমি কতো দূরে।
যান্ত্রিক সভ্যতার এ যুগে
আমার শহরে কোন ডাকপিয়ন নেই;
আমি কার কাছে গিয়ে শুধাই
তুমি এখন কেমন আছো,
কি করছো...?
ঠিকানাটা হারিয়ে ফেলেছি। গেলো শীতে লঞ্চের সেকেন্ড
সীটে বসে পত্রিকার শেষ পৃষ্ঠায় খবর পেলাম, এবার ঝড় হবে বেশ।
আমার বৃষ্টি বিলাসের স্বাদ আজও অপূর্ণই রইলো।
মেঘনার খোলা জল টলমল করে,
উদাসী বাতাসে তন্দ্রা আসে।
আমি একাকী এ শহরে একাকীত্ব বুকে নিয়ে চুপিচুপি হেঁটে চলি..
আবার এক বসন্তের আসায়।
তোমার কি একটিবার সময় হবে...?
চিঠি দিও....
বহুকাল হলুদ খামের গন্ধ শুকিনী নাকে !
মধুমিতা,
এই মাতাল বসন্তের দিনেও আজ তুমি কতো দূরে।
20-01-2020
প্রচণ্ড ভালোবাসাহীনতায় কেটে যাচ্ছে এখন আমার দিন,
রাত; আমার প্রতিটি ক্ষণ।
সত্যি বলছি,
এর আগে কখনোই এমন ক্ষুধার্ত ছিলামনা আমি;
বুকের মাঝে এমন শূণ্যতা কখনোই অনুভব করিনি।
মনে হয়,
হাজার বছরের অভুক্ত কোন শকুন আমি;
দিগন্তে ঊড়ে চলি রক্তের, মাংসের নেশায়।
আমার এখন আকাশ আর পাতাল সমান বিচরণ।
থরে থরে সাজানো এতো খাদ্যের ভিড়ে অভুক্ত আমি ;
হা-হা-হা....
কি ভয়ানক সুন্দর !
কি নিদারুণ পরিহাস !
এমন দূর্বার শীতেও কি করে ফোটে এতো ফুল....?
কি করে পাখি পাখামেলে
গান গায়... ?
এ প্রেমহীন শহরে কেন এতো রঙের ছটা....?
কেন এতো ডেকে যায় উষ্ণতার ভোর।
প্রচণ্ড ভালোবাসাহীনতায় কেটে যাচ্ছে আমার দিন, রাত;
আমার প্রতিটি ক্ষণ।
সত্যি বলছি,
এর আগে কখনোই এমন ক্ষুধার্ত ছিলামনা আমি;
বুকের মাঝে এমন শূণ্যতা কখনো অনুভব করিনি।
17-03-2020
কোলাহল মুখর ব্যস্ত এই শহরে আমার
পদার্পণ নেহাত বেঁচে থাকার তাগিদেই।
সত্যি বলছি,
এ শহরে আমি প্রেম খুঁজতে আসিনি।
তুমুল বর্ষায় একা কাকের মতো ভিজলে
কেউ ছাতা হাতে পাশে এসে দাঁড়াবে,
এ ভাবনাও কখনো আমাকে আচ্ছন্ন করতে পারেনি।
রোজ বৈকালিক আড্ডায় কেউ
ছোলাবাদাম হাতে এগিয়ে বলুক, কি ভাবছো, খাচ্ছোনা কেন ?
এমন আশাও করিনি।
আমি মৃত মানুষের মতো দূর থেকে
জনতার আসরে লাশের মিছিল দেখি...
কেউ ১৬ তে মরেছে, কেউ ১৭, ১৮, ১৯।
কেউ ২০ এ মরেছে বিষপান করে।
এঁরা কেউই আমাকে চেনেনা;
কি আশ্চর্য !
আমি প্রত্যেকের নাম ধরে চিনি।
ঐ যে, দেখছো...
টী শার্ট গায়ে, কাঁধে ঝোলানো ব্যাগ;
বক্তৃতার মঞ্চে যে ছেলেটা গলা চেঁচিয়ে জীবনের জয়ধ্বনি করে;
গত বছর পহেলা ফাল্গুনে ও মরেছে।
ওর নাম শিমুল;
বেদনার রক্তাক্ত অসংখ্য ক্ষত বুকে নিয়ে
বিষাদের কাঁটা গায়ে মেখে ও আজ বসন্ত হয়েছে।
এই যে, এদিকে তাকাও !
নীল পাঞ্জাবি গায়ে যে ছেলেটাকে দেখছো,
প্লেকার্ড হাতে নিয়ে লিখে যাচ্ছে অসংখ্য মানুষের মুক্তির শ্লোগান;
ওর মৃত্যু কতোইনা বীভৎস ছিলো।
ও জন্মেছিলো মস্ত এক পুকুর পাড়ে,
খোলা উঠনের পশ্চিম ধারের কাঁঠাল তলার ঘরটায়।
দক্ষিণ জানালা দিয়ে যতদূর দেখা যায়.. সবুজ ধানখেত।
আঙ্গিনায় সোনাল ফুলের বাহার,
বাতাসে বুনো ফুলের গন্ধ মৌ-মৌ করে।
ও ব্যারিস্টার হতে চেয়েছিলো;
আজ পথনাটক করছে।
হা-হা-হা, হাসছো কেন ?
জীবনের নাটকে ছেলেটা আজ মস্ত বড় অভিনেতা।
সত্যি বলছি,
এ শহরে আমি প্রেম খুঁজতে আসিনি।
গলির মোড়ে, টংগে, চা' দোকানে, লোক চক্ষুর আড়ালে
যে ছেলেটিকে রোজ সিগারেট ফুঁকাতে দেখো..
তার বুকে জ্বলছে অভিশপ্ত ট্রয়
অথবা ভিসুভিয়াস ।
তুমি চমকে যাবে শুনে;
এতোটা আগুন বুকে নিয়ে মানুষ কিভাবে বাঁচে ?
ওর সদ্য খোলা সিগারেট জানেনা...
দৃশ্য দহনের চেয়ে অন্তর্দহন কতোটা কষ্টের।
সত্যি বলছি,
এ শহরে আমি প্রেম খুঁজতে আসিনি ।
22-02-2020
''-----''''-----''''''-----''
তুমি বারবার নিয়তির দোহাই দিয়ে দূরে গিয়ে ভুলে যেতেই পারো;
ক্ষমা করো, আমি পারিনা।
প্রত্যুষে ভোরে জেগে যদি একটি নাম জপে
থাকি পার্থিব কামনায়; সে তুমি।
দেহের মাঝে যখন হাজারটা অসুখ প্রতিটি দিন
তিল-তিল করে খেয়ে ফেলছে আমার সমস্ত শরীর;
সত্যি বলছি, নিশ্চিত আসন্ন মৃত্যু জেনেও
কখনো এতোটা অসহায় বোধ করিনি।
কতোটা বোকা আমি---
তোমার আবির্ভাবে এই নষ্ট দেহে লাগলো বসন্তের হাওয়া;
বিকশিত তরুপল্লবের ন্যায়
অঙ্কুরিত হলো কুঁড়ি...
আমি ভুলেই গিয়েছিলাম আমার দৈন্যতা;
স্পর্শের অপেক্ষায় এই মাঘের আস্ত চাঁদটা পু
রো রাত জেগে জেগে এক চুমুকে পান করতাম,
ভোরের শিশির মেখে সজীব হতাম,
প্রথম সূর্যের পরশে; সত্যিই বলছি...
তোমাকেই খুঁজতাম।
কবে যে নিভে যাওয়া জীবনের সব স্বপ্নগুলো তোমার
ইথারের শব্দে প্রাণের দেখা পেয়েছিলো; বুঝতেই পারিনি।
যে আমি সব কোলাহল ছেড়ে একাকীত্বকে বরণ করে স্বেচ্ছায়
নির্বাসন নিয়েছিলাম তোমাদের রঙিন শহর থেকে;
হঠাৎ করে কি ভাবে প্রকৃতির সাথে মিলে গেলো বসন্ত;
কি করে এলো এতোটা রং !
আজ যখন জানলাম;
তোমার মাঝে এক বিন্দুও আমি নেই; সব মরীচিকা ।
তখন এ প্রান্তরের সব আয়োজন
কতোটা যে বিষাদের,
কতোটা যে ভেঙেছে আমার ভিতর বাহির,
বোধ করি তা আষ্ঠে-পৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকা
অসুখের চেয়ে কোন অংশেই কম না।
কিন্তু কি আশ্চর্য !
প্রতিনিয়তই ভোরের সূর্য উঠবে,
পাখি গান গাইতে গাইতে ঊড়ে যাবে দিগন্তের শেষ রেখা বরাবর।
ক্ষেতের মজুর ঘাম ঝরে ফলাবে তার সোনালী ফসল...
শহুরে রাস্তা ঠিক আগের মতোই ব্যস্ত থাকবে,
অফিসগামী মানুষ সকাল ০৯ টায় অফিসে যাবে,
রিকশার টুংটাং আওয়াজে ফুটপাথ ছোট হয়ে যাবে।
তুমি তখন অন্য কারো !
সত্যিই কি অন্য কারো ?
সেখানে আমি নেই,
এক বিন্দুও আমি নেই।
কি আশ্চর্য !
আমি তোমার এক বিন্দুও আমি ছিলামনা।
অপরিচিতা
04-01-2020
যে আমাকে এতোটা কাছে ডেকে আকাশ দেখালো,
মৌনতা ভেঙ্গে শোনালো ভোরের গান;
আমি তার নাম জানি না।
মেয়ে ! নামটাই থাক; মরমে।
একদিন যে মেঘে ঊড়েছে
শরতের সাদা বক,
নেমে আসুক সে আজ বৃষ্টি হয়ে।
জানালার ওপারে খোলা চোঁখে
ঘোলা হয় জল;
বসন্ত বিদায় নিলে নামে শ্রাবণেরই ঢল।
যে আমাকে এতো কাছে টেনে আকাশ দেখালো,
মৌনতা ভেঙ্গে শোনালো ভোরের গান;
আমি তার নাম জানি না।
নক্ষত্রের মতো তার রং
ফুটেছে আকাশে ফুল;
আমি মালি,
মিছে গন্ধ মেখে
ছুঁয়েছি স্বপ্নে শুধু
ভেজা তার চুল।
যে আমাকে এতো কাছে টেনে আকাশ দেখালো,
মৌনতা ভেঙ্গে শোনালো ভোরের গান;
আমি তার নাম জানি না।
পাখির মতো তার স্বর,
ঝর্ণার মতো ঝরছে অঝোর;
আহা ! ও ধ্বনি...
বাজিছে আজও কানে,
মরি মরি শুনি।
কি অমৃত, কি সরাব পিয়েছি সুরে;
এ নেশা কাটেনা আমার,
নিয়ে যায় এতোটা দূরে....
যে আমাকে এতো কাছে ডেকে আকাশ দেখালো,
মৌনতা ভেঙ্গে শোনালো ভোরের গান;
আমি তার নাম জানি না।
হৈ ম
এক কল্পিত অধ্যায়
=============
হৈম,
ফেরার পথ কি এতোটাই কঠিন ?
নাকি ভুলে গেছো...
জানি, ইচ্ছে নেই তোমার ফেরার।
সত্যিই কি ইচ্ছে নেই ?
আমি এটা মানিনা এবং বিশ্বাসও করিনা।
এই যে তুমি রোজ মধ্যরাত অব্দি জাগছো,
বিরহের গান শুনে শুনে চোখের কোণে জল আঁকছো।
আমি কি বুঝিনা ?
অনিদ্রা কোন ফ্যাশন নয়;
অনিন্দ্রা দীর্ঘতম এক বিরহের নাম।
হৈম,
একাকী আঁধারে রোজ নিঃশব্দতা বুকে নিয়ে
গভীর নিঃশ্বাসের রাত্রি কেবলই হতাশার জন্ম দেয়;
একথা তোমারও জানা।
স্মৃতিকে কখনো এড়িয়ে যাওয়া যায়না।
ভুলে থাকা যদি সহজ ব্যাপার হতো,
মানুষের দুঃখবোধ থাকতোনা এতটুকু।
হৈম,
মিথ্যার চেয়েও বড় মিথ্যা, ভুলে থাকা।
এখনও সকাল হয়, দুপুর হয়..
নবীন সূর্য প্রবীণ হয়ে নিভে যায় সন্ধ্যারাগে।
সকালের শুভ্রতা ভুলে গিয়ে বৃন্তচ্যুত হয় ফুল।
বলতে পারো,
প্রদীপের সীমাবদ্ধতা কতটুকু ?
জীবন প্রদীপ না; জীবন দিব্যলোকের মতো সত্য।
এর ব্যপ্তিও তাই অসীম।
হৈম,
শুনেছি, আজকাল তুমি গুটিয়ে নিয়েছো নিজেকে।
যাঁরা নিজেকেই নিজের শত্রু মনে করে
মহাকালের আলোক শিখা তাঁদেরকে ভুলে যায়।
জীবন উপভোগ্যতার বৈপরীত্য আছে,
তাই কেউ কর্মের মানুষ, কেউ কলমের মানুষ,
কেউ কন্ঠের মানুষ।
তুমি হয় ভাবছো,
এতোদিন পল এসব তোমাকে বলছি কেনো ?
ঐ যে, বললাম না; মিথ্যার চেয়েও বড় মিথ্যা ভুলে থাকা।
ভুলতে পারিনি ...
তাই হয়তো এখনো কোনকিছু লিখতে গিয়ে তোমাকেই লিখেফেলি; তোমাকেই আঁকি অক্ষরে।
হৈম,
এখন আমার লেখা বলতেই তুমি।
আমার সুখ বা দুঃখের সাথে একটাই নাম জড়িয়ে
সেটাও তুমি।
আমার যতটুকু ভালোলাগা, ভালোবাসা; তাও তুমি।
মহাভারতে সূপর্ণখাকে ভীষণ মনে পড়ছে
ভীষণ, ভীষণ।
লঙ্কা আয় ফিরে আয়, ফিরে আয়।
এই শুষ্ক প্রান্ত ভিজুক
বক্ষের রক্তে ভিজুক
তবু ফিরে আয়।
হৈম,
বিধাতার বিধান নত হয়ে মেনে নেওয়াই ভালো।
ভাগ্যের প্রতি মানুষের হাত নেই।
তাই এখন রোজ দুঃখের চিতার উপর বসে
খণ্ডিত মস্তক হাতে নিয়ে ভৈরবী নৃত্য দেখি।
খায়ের

01-01-2021
ত্রিনিতা
======
ঋতু চক্রের পালা বদলে অসংখ্যবার
বসন্ত এসেছে,
পাতার ফাঁকে রোজ চুপটি করে কুঁড়ি থেকে ফুটেছে ফুল ,
গন্ধ মেখে বসেছে প্রজাতির মেলা;
কিশোরীর আঙ্গুলের ডগায়, গলায়, খোঁপায় শোভিত হয়েছে।
আমি নির্বাক পথিকের মতো
পাখির কিচিরমিচির শব্দে দক্ষিণা সমীরণে হাওয়া মেখেছি গানে।
ব্যস্ত, অতটুকুই !
একদিন হেমন্ত বাবু কাছে টেনে ডেকে বলেছিলো,
সুভাষ,
দিন এমনি করেই ফুরিয়ে যায়।
জীবনের মধ্যাহ্নে এসে বুঝেছি,
ওসবের মধ্যে আমাদের কোন হাত নেই;
যা আছে তা অসীম প্রতীক্ষা আর অনন্ত প্রত্যাশা।
জীবনের বোধ বড়ই আশ্চর্য !
ভালো কেউ থাকেনা, ভালো থাকতে হয়।
একবার কলেজের সহপাঠিনী ত্রিনিতা
গভীর নেত্র চেয়ে উষ্ণতার দু'খানা আঙ্গুল
আমার চোখে চেপে বলেছিলো, বোকা !
আমি ক্ষণে লজ্জা লাল হয়ে ভয়ে আতকে উঠেছিলাম।
আজ অবধি সেই আমার রমণীর প্রথম স্পর্শের স্মৃতি।
ত্রিনিতাকে আমি ভালোবেসেছিলাম কি না
তা আলোচনা সাপেক্ষ।
আমার গৈরিক জীবনে ত্রিনিতা যে এক খণ্ড সংসার ছিলো,
দীর্ঘ ১৪ বছর পর আমার অলস মস্তিষ্ক তার স্বভাবগত উত্তর দিয়েছে।
কলেজের ফাংশনে, সেমিনারে, ক্লাসে বা আড্ডায় ত্রিনিতা বরাবরই স্বতন্ত্র ছিলো।
ওর কাজল আঁকা ডাগর নয়ন, ম্যাচিং ড্রেস, কোকড়ানো চুল
আমাকে বারবার নেশার উদ্রেক করতো।
আমি দূর থেকে মাঘী পূর্ণিমার মতো জ্যোৎস্না জলে একাকী অবগাহন করতাম।
ত্রিনিতা আমাকে ভালোবাসেছিলো কি না,
এর উত্তর বন্ধু মহলে বেশ উচ্চারিত।
আমরা যে শুধুই বন্ধু ছিলামনা;
এটা আমাদের জড়তা, আমাদের এ বিষয়ে মুখোমুখি না বলা কথা দিনদিন আরও কাছে এনেছিলো।
আমি আজন্ম মূক; নির্বাক নির্লিপ্তই আমার ভাষা।
সব অনুভূতি বুকে নিয়ে তাই পাহাড় হতে চেয়েছিলাম।
কিন্তু সেই অহমিকার পাহাড় যে একদিন ব্যথার পাহাড়ে পরিণত হবে;
তা আমার কল্পনাতীত।
এখন আমার স্বপ্নের ভূ-ভাগে জ্বালাময়তার ধোঁয়া ঊড়ে,
স্মৃতিরা রোজ মধ্যরাতে ফানুস হয়ে জীবনের সাথে উপহাসের অট্টহাসি হাসে।
অনেক দিন ত্রিনিতাকে দেখিনি, শুনিনি।
জেনেছি সে সুখে আছে...
সংসারে এসেছে নতুন অতিথি; ব্যস্ততা তাই বেশি।
ব্যস্ততা আমারও এখন
সংসারের না; কর্মের।
তবুও ভালো থাক ভালোবাসার মানুষ গুলো।
__খায়ের
২৯-১২-২০২০
বহুকাল পর দেখা
২৮-১২-১৯
বহুকাল পর দেখা হলো..।
দেহের রেখায় ছাপ পড়েছে সময়ের;
বসন্তের খোঁপায় লেগেছে শিশিরের শুভ্রতা।
তারার মতো খসেছে নক্ষত্রের ভ্রু।
মরে যাওয়া স্বপ্নের নাম অতীত।
ইচ্ছে থাকলেও শব্দেরা আজও মূক,
আজও বন্দী ওষ্ঠের নির্লিপ্ততায়।
আজও অব্যক্তই রইলো পুরাতন কিছু না বলা কথা।
ব্যস্ততা গ্রাস করেছে সময়কে...
চলে যাবার ক্ষণ গণনা করে বৃথা আলাপন।
কি লাভ তাতে ?
ভালোই তো যাচ্ছিলো;
তবে কেন দেখা হলো !
ক্লান্ত পথচারী উৎকচ ভেবে হেঁটে যায় পথ।
চলমান রিকশা ব্রেক কষে ভৎসনা করে যায়;
'ঐ মিয়া, সাইডে দাঁড়ান।'
আমি ভেবে পাইনে....
কোনটি আমার সাইড।
বাম দিকের দেওয়াল জুড়ে রাজনৈতিক পোস্টার;
অমুক ভাই জিন্দাবাদ, ফুলের মতো চরিত্র, রক্তের আশ্চর্য দাগ,
কোথাও নারীমুক্তির শ্লোগান;
ডানদিকে স্মৃতি ....।
সম্বিৎ ফিরে চেয়ে দেখি,
পিছনে দীর্ঘ অপেক্ষমান গাড়ীর সারি।
কেউ কেউ তেড়ে আসছে তির্যক ভঙ্গিতে।
তবে; আমিও তো অপেক্ষমান ছিলাম !
আমার কি সামান্যতমও অধিকার নেই ?
বহুদিন পর দেখা হলো...
শিমুলের ডালে এখন শুভ্রতা ঊড়ে;
কাকেরা ফিরে পেয়েছে অধিকার।
নিজ বাসায় খড়কুটো ছাড়া অবশিষ্ট কিছু নেই আর।
সারাদিন প্রচণ্ড বেগে তাপ দেওয়া ক্লান্ত সূর্যটাকে বেশ অসহায় দেখাচ্ছে।
মরে যাচ্ছে দিন..
নিয়ন আলোতে বধুর মতো সেজেছে শহর;
ফুটপাত গুলো জমে উঠেছে ভ্রাম্যমান পসরাতে..
কেউ জোড় গলায় হেকে যাচ্ছে নানা কসরতে...
এই নেবে...নেবে...?
ইচ্ছে হচ্ছিলো, আমি পসরা দেই;
আমার দুঃখের ।
এ তল্লাটে আমি এক আগন্তুক;
বিক্রেতা ও ক্রেতা আমিই...
স্মৃতির বদলে কষ্ট ফেরি করি নিজেরই কাছে।
_খায়ের

মনে কি রবে
27-03-2020
যদি হুট করে এ শহরের কোলাহল ছেড়ে
একেবারেই ছুটি নিয়ে চলে যাই দূরে;
মনে কি রবে...?
পুরো আকাশ ভরা তারা;
এক ফাগুনের রাত..
আর এক চাঁদ !
তুমি দক্ষিণ জানালা খুলে
বাড়িয়ে দু'হাত;
অদূরে দুলছে আমের শাখা;
মনে কি রবে... ?
ঝুমঝুম বৃষ্টি হচ্ছে ,
ভিজে যাচ্ছে উঠোন;
তুমি খোলা হাতে সে জল আঙ্গুলের ফাঁকে;
আমি তখন যোযন যোযন দূরে;
মনে কি রবে ...?
আবার বসন্ত এসেছে,
উৎসবের রঙ্গে ব্যস্ত সবাই;
কৃষ্ণচূড়ার ডালে লাল রং,
তোমার খোঁপায় হলুদ গাঁধা ফুল;
মনে কি রবে...?
যদি হুট করে এ শহরের কোলাহল ছেড়ে
একেবারেই ছুটি নিয়ে চলে যাই দূরে;
মনে কি রবে...?
_____খায়ের____
বৈশাখের কচড়া
14-04-2020
জানিস নগেন,
পৃথিবীর আজ বড্ড বড় ব্যামো হয়েছে।
কানাইঘাটের ননীগোপাল কি বলে জানিস,
আমাদের আয়ু নাকি আর অল্প কিছু দিনের;
তারপরেই নাকি ঠুস।
শ্মশানের পাশে যে জমিটা নিয়ে হারুকাকাদের তিন পুরুষের দ্বন্দ্ব ছিলো;
গতকাল দুপুরে হারুকাকা নাকি কাকিমাকে
না জানিয়েই দান করেছে মন্দিরের নামে।
বিন্তি বৌদি সারাদিন মনখারাপ করে বসে থাকে।
এ মাসেই অতীশ দাদার বাড়ি ফেরার কথা ছিলো।
বৌদি তাই পুরোটা সময় ধরে জানালা খুলে রাখে।
অতীশ দাদা নাকি গতরাতে ফোন করেছিলো।
বলেছে, লকডাউন শেষ হলে
যে দিন গাড়ি চলাচল শুরু হবে; সেদিন ভোরেই রওনা দিবে।
এতেই বৌদির মন খারাপ।
কে যেন বলেছে,
এ সংকট শেষ হবার নয়।
এখন বৌদিকে দেখলেই কেমন জানি মায়া লাগে।
রঙ্গিন সাজের মাঝে যেন আপাদমস্তক বিধবা।
সকালে বিমল জেঠু শহর থেকে পাক্কা ছ'ক্রোশ হেঁটে এসেছে।
হাঁপাতে হাঁপাতে বললো,
সুভাষ,
এবার মনে হয় আর বাঁচা গেলো না।
ঝড় হোক, বৃষ্টি হোক, বন্যা হোক;
তার একটা নির্দিষ্ট ক্ষণ আছে। এর কিছুই নাইরে !
ঢাকার রাস্তা ফাঁকা;
ট্রেন ইস্টিশন, বাস ইস্টিশন, লঞ্চ টার্মিনাল কোথাও কেউ নেই।
বেওয়ারিশ নেড়ি কুকুর কেমন জানি চর্মস্য হয়ে গেছে।
দিন দিন বাড়ছে ক্ষুধা। আক্রান্তের তালিকার চেয়ে
ক্ষুধার্তের তালিকা বড় হচ্ছে দিন দিন ।
রিকশা, ভ্যান, বাস ছিটিয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে পুরো শহর জুড়ে।
হঠাৎই মনে হয়, এ যেন জল রঙ্গের জীবন্ত ক্যানভাস।
হিন্দু-মুসলিম, বৌদ্ধ-খৃষ্টান সব ধর্মাশালাগুলোতে শূণ্যতা খাঁ খাঁ করছে !
তমিজ চাচাকে জিজ্ঞেস করলে বলে,
বাপু, আল্লাহ্ কে ডাকো।
নিতেশ, চারু, যোগেন এখন উৎসবে মেতেছে।
সেই যে কবে ওদের পাঠশালা বন্ধ হয়েছে, কবে খুলবে তার নাম গন্ধ নেই।
গোলার ধান ফুরিয়ে আসছে।
আচ্ছা নগেন,
রোগে ভূগে মরা ভালো;
নাকি না খেয়ে মরা ?
আজ মঙ্গলবার, পহেলা বৈশাখ, ১৪২৭ বঙ্গাব্দ।
বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন।
প্রতিবছর এ দিন মেতে ওঠে রমনার বটমূল।
ছায়ানটে ধ্বনিত হয় সমবেত গানের সুর।
লাল-নীল, হলুদ-সাদা শাড়িতে কিশোরী তরুণী হয়;
গালে আঁকে আল্পনা।
খোঁপার ভাজে বেলী ফুল দোলে।
খাপছাড়া বাউণ্ডুলে ছেলেটি উস্কো চুলে চিরুনী কেটে সাদা
পাঞ্জাবী জড়িয়ে কাঙ্খিত প্রিয়ার পথে অপেক্ষা করে।
টি এস সি থেকে সে স্রোত ভাসে গ্রামের মাঠে ঘাটে ।
মেলায় নাগরদোলা করকর শব্দ করে,
গ্রামের বালিকা এলোকেশে জড়ায় রঙ্গিন ফিতে;
কাঁচের চুড়ি হাতে ঝনঝন করে। কৃষানীর পাতে শুকনো মরিচ।
অথচ এবার এর কিছুই নেই;
কিচ্ছু হচ্ছে না।
জানিস নগেন,
পৃথিবীর আজ বড্ড বড় ব্যামো হয়েছে।
খায়ের
বন্ধুবর মিহির।
অনেক দিন থেকেই তোকে একটা চিঠি লেখার ইচ্ছে ছিলো।
কিন্তু কি করবো বল ?
সময়ের যুগল স্রোতে আমিও আজ ভাসমান জীব।
ইচ্ছে থাকলেও তাই তোকে লিখা হয়নি।
আজ যখন লিখতে বসেছি
তখন অজস্র শব্দের মাঝে শব্দ নির্বাচন করতে বারবার ভুলে যাচ্ছি।
কি লিখবো,
লিখেই বা কিভাবে পাঠাবো;
ভেবে পাইনা।
এই যান্ত্রিক সভ্যতার যুগে হয়তো চিঠি লেখার কথা ভাবাটা এখন বেশ হাস্যকর।
প্রতিটি পোস্টবক্স যেন অতীত ইতিহাস।
কিন্তু তুই তো জানিস,
অত্যাধুনিক এই ইলেকট্রিক মুঠো বার্তা
আমার কাছে বেশ অস্বস্তিকর লাগে।
মনে হয়, নিজেরই অজান্তে নিজেকে লুকাচ্ছি।
তিল তিল করে হত্যা করছি আমার আমিকে, স্বপ্নকে।
অপরের কথা নিজের ভাষায় পড়ার মাঝে কি যে আনন্দ,
তোকে বলে বা লিখে বোঝাতে পারবোনা ।
মনে হয়, প্রতিটি শব্দের মাঝেই ব্যক্তিটির বসবাস।
যান্ত্রিক সভ্যতা আমাদের দৈনন্দিন কাজকে সহজ করেছে সত্য;
কিন্তু এটাও তো ঠিক যে,
এর বদলে ছিনিয়ে নিয়েছে আমাদের কল্পনার জগতকে।
আমরা যেনো নির্ভর হয়ে পড়ছি অদৃশ্য কোনো এক শক্তির কাছে।
শোন,
আজ বিকেলে দারুণ একটা সময় উপভোগ করলাম।
তোর সাথে অনেক দিন থেকেই কথা হয়না, দেখাও হয়না।
তোর কি মনে আছে ?
এরকম এক অগ্রহায়ণের বিকেলের কথা।
আমাদের উঠোনের সেই কালের গর্ভে শুকিয়ে যাওয়া ছোট্ট নদীটির কথা।
আমরা প্রতিদিন বিকেলে ঘুরতে যেতাম;
পার ভেঙে জেগে ওঠা উত্তরের এক পতিত মাঠে।
সেখানে সারাবেলা বন্য মোরগফুল সৌরভ ছড়াতো।
লাল, নীল, হলুদ, কালো, বেগুনী, সাদা,
কতো রকমের প্রজাপতি বসতো ফুলে ফুলে।
আমরা পুরো বিকেল ধরে খেলার ছলে ছুটতাম
সে চঞ্চল প্রজাপতির পিছে।
তারপর সন্ধ্যা নামলে অনেক কষ্টে দলছুট দুষ্টু প্রজাপতির
ডানা ধরে বাড়িতে এনে রেখে দিতাম গ্লাসের আলমারিতে।
বন্দী প্রজাপতি তখন মুক্তির নেশায় ছোটাছুটি করতো
একপাশ থেকে অন্য পাশে। ক্লান্ত হলে ফুলের বদলে
বেছে নিতো কড়ির কাপ বা জগের ডগা।
জানিস,
আজ অনেকদিন পর আবার সেই গ্রাম্য পথ; কর্মের পথ।
আজ তোদের থেকে অনেক অনেক দূরে।
কিছুদিন আগেই যে রাস্তায় ঘোলা জল টলমল করতো,
সেই মাটির রাস্তা বদলে হয়েছে পিচ ঢালা পথ।
সামনে খোলা মাঠ।
কুয়াশা আচ্ছন্ন সূর্য যখন নিভে যেতে বসছে..
ঠিক তখনই অদূরে চোখে পড়লো একঝাক বুনো কচুরিপানার ফুল।
গোলাপি রঙের মাঝে বেগুনীর আচ্ছাদন।
যেন কোন চিত্রকর এঁকেছেন নিপুন মৌনতায়।
একটা দুটো প্রজাপতি তার গন্ধ মেখে ঊড়ছে ফুলে ফুলে।
ইচ্ছে হচ্ছিলো.. বার বার
নেমে গিয়ে ছুঁয়ে দেখি
আমার হারানো শৈশব।
ব্যস্ততার ছুটি দিয়ে মন কিছুটা আনমনা হয়ে
দু' ফোঁটা জল এনেছে চোখে।
সত্যিই কি আর ফিরে যাওয়ার পথ নেই ?
বড্ড মনে পড়ে রে...
কচুরিপানা আর প্রজাপতির স্মৃতি।
খায়ের
23-11-2019
প্রতিমূর্তি




বহুদিন থেকেই ইচ্ছা ছিলো;
তোমার একটা প্রতিমূর্তি গড়ার।
কুমারের মতো নিবিড় স্পর্শে আলোড়িত হবো;
আলোড়িত হবে শিহরণের সব দরজা।
কিন্তু কি করবো বলো ?
আমি তো আর মৃৎশিল্পী নই !
সে অভিলাষ, সে ইচ্ছা আজো তাই অপূর্ণই রইলো।
তারপর কেটে গেলো কতো শত বসন্ত।
ভেবেছিলাম, একবার আঁকবো তোমায়;
রংধনুর সব রং মিলে মিশে।
মেঘ থেকে হবে মিশমিশে কালো কেশ!
ভ্রু হবে ঝর্ণার;
এরপর অধর চিবুক ঠোঁট।
ঊড়বে বসন্তের দক্ষিণ বাতাস।
আমি তো চিত্রকর নই;
আঁকা হলোনা !
রয়ে গেলো স্মৃতির পটে।
আজ যখন ভাবছি ...
ভীষণ রকম ভাবছি তোমায়;
আমি তখন এক শব্দচাষী।
কি করে গড়বো তোমায়; বলো ?
এখন আমার পুরো উঠোন জুড়ে বুনো কলমিলতার মাঁচা;
তুমি ফোটা এক বুনো ভেটফুল।
আমার আঊশের ক্ষেতে
শিশির ভেজা তোমার নগ্ন পা;
এখন শরিষার হলুদ বনে তুমি এক কিশোরী বিকেল।
শীতের নদীর মতোই তুমি
টিপ টিপ করে বয়ে চলা এক ঊর্বশী ঢেউ।
কিন্তু আমি তো তোমার প্রতিমূর্তি গড়তে চেয়েছিলাম।
খায়ের
10-11-19/20
তোমাকে ভুলে থাকার জন্য
কতো চেষ্টাই তো করলাম।
এক এক করে প্রতিটি চেষ্টা যখন ব্যর্থ;
তখন অগত্যা দ্বারস্থ হয়েছি নিকোটিনের।
লোক লজ্জা ছেড়ে রোজ ভিক্ষুকের মতো হাত পাতি গলির দোকানীর কাছে।
কি অদ্ভূত তিনি !
টাকা দিয়েও আমাকে নিকোটিন দিতে বেশ কার্পণ্য দেখায়।
জেনেও না জানার ভান করে; হাতে ধরিয়ে দেয়
ঝাল চানাচুর বা মিষ্টি বিস্কুটের প্যাকেট।
নিকোটিনের ধোঁয়া আমি যে সহ্য করতে পারিনা;
এটা সম্ভবত তার জানা।
আজকাল উৎসুক দৃষ্টি দিয়ে আমার পুড়ে যাওয়া ঠোঁটে
জলন্ত সিগারেট দেখে প্রশ্ন করে,
"হঠাৎ করে সিগারেট কেনো ?"
আমি বোকার মতো চুপ করে চেয়ে থাকি।
ইতিহাস এমনি !
সকালের যে মাঠে ভারতবর্ষের স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হলো;
কি আশ্চর্য !
বিকেলেই সে মাঠে রাখাল মনের সুখে বাঁশরীতে সুর তোলে।
সে সুর দূরের গাঁয়ের নববধূকে
আনমনা করে দেয়।
সারাদিন সাথে থাকা অফিসের সহকর্মী বা পাড়ার সমবয়সী;
কে জানে কার মনের কথা।
আমি ব্যস্ততার অজুহাতে ঘনো জমায়েত থেকে স্বেচ্ছায় সঠকে পরি।
ভুলে থাকার চেষ্টা করি;
পারিনা।
আমি নিকোটিনের চেয়েও এখন বড় কিছু চাই;
আমি স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই;
হে সংবিধান !
তুমি আমাকে দাও
তাকে ভুলে থাকার সমস্ত অধিকার।
খায়ের
06-11-2020
রোজ রাতে জং ধরা বালিশে মুখ গুঁজে
আমি কেবলই স্বপ্ন দেখি।
দেখি একটা খরস্রোতা নদী।
দু'কুলে ভূই ফুরে জেগে আছে
কলমিলতা।
দূরে গ্রাম;
মাথার উপর খোলা আকাশ।
এলোমেলো কিছু মেঘ ঊড়ে যাচ্ছে উত্তরের কোনো দেশে।
ঝোপে থোঁকা থোঁকা ফোটা সোনাল ফুল।
যেনো হলুদ শাড়ি পরে সবুজ গাছটা
কিশোরী থেকে যৌবনে দিয়েছে পা।
শিশির মেখে আশ্বিনের রূপালী চাঁদ
সারারাত দোল খায় জলে।
নিভুনিভু করে জ্বলে আর নিভে জোনাকির দল।
উঠোনের বাগানে এ বছরই প্রথম ফুটেছে গন্ধরাজ।
মাতাল করা তার সৌরভ ছড়াচ্ছে দশদিক।
জানালার পর্দা সরিয়ে আকাশ দেখতে গিয়ে;
নাকে গন্ধ শুকি।
উষ্ণতার খোঁজে দু'হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়;
সামান্য দমকা বাতাসেই কুকড়ে উঠি।
প্রতীক্ষারা তবু দুমরে মোচরে উঠে।
কে এলো..?
আবার কে এলো মধ্যরাতে
এমন নিরবতা ভেঙ্গে।
চোখ মেলি,
অস্পষ্ট ছায়া ভাসে;
কারো হেঁটে যাওয়ার শব্দ পাই।
আলো আসে চোখে;
প্রখর সে আলো।
আবার চোখ বুজি!
আশ্বিনা রূপালী চাঁদ একাকী জেগে আলো দেয়।
সে আলো বারান্দায় লুটোপুটি করে;
ভীষণ অন্ধকার ঘর।
কেউ নেই !
একা.. শুধু একা;
কেবলই শূণ্যতা চোখে।
খায়ের
6-11-2020
কবিতা,
তুমি এবার মানুষ হও;
প্রেমিক হও।
প্রেমিক হয়ে বিরহের অনিদ্রার রাতে
জাগাও সুখের ঝর্ণাধারা।
কবিতা,
তুমি এবার মানুষ হও;
প্রেমিক হও।
শিল্পের লালিত্য শব্দ মূর্ছনার মতো
হৃদয়ের দু'কুল উছলিয়ে দাও।
কবিতা,
তুমি এবার মানুষ হও,
প্রেমিক হও।
প্রেমিক হয়ে
বিরহের অনিদ্রার রাতে
জাগাও সুখের ঝর্ণাধারা।
কবিতা,
উর্বশীর নূপুরের নৃত্য ধ্বনির মতো
প্রকম্পিত করো ভূমি।
উপমা অলঙ্কারে সাজোও দেহ।
কবিতা,
তুমি এবার মানুষ হও,
প্রেমিক হও।
প্রেমিক হয়ে বিরহের অনিদ্রার রাতে
জাগাও সুখের ঝর্ণাধারা।
খায়ের

31-10-2020
তোমাকে নিয়ে
**********
তোমাকে নিয়ে ভাবতে ভাবতেই
আমি ভুলে গেছি আমার আমিকে।
ভুলে গেছি,
রোজ সকালে একটি সূর্যের উদয় হয়;
আঁধার কেটে দিন আসে,
জাগে দশ দিক।
ভুলে গেছি রোজ রাতে একটি চাঁদ ওঠে;
জ্যোৎস্নায় মেতে ওঠে নিশাচর ক্রুঞ্চের দল।
ভুলে গেছি
চৈত্রের প্রখরতা মেখেও
সামান্য বৃষ্টি হলে ফোটে কদম;
শীর্ণ তটিনী হয়ে ওঠে ষোড়শী নারী।
ভুলে গেছি
বিলের স্রোত থেমে গেলে
পদ্মে পদ্মে ভরে ওঠে ঝিল;
জলব্যাঙ উন্মুখ মিলনে অবিরত ডেকে যায়
পাতায় পাতায়।
তোমাকে নিয়ে ভাবতে ভাবতেই
আমি ভুলে গেছি আমার আমিকে।
ভুলে গেছি বসন্ত আসলে প্রকৃতির উৎসব হয়;
সবুজের বুকে লাল হয়, নীল হয়
সাদা হয় হলুদ হয়।
ভুলে গেছি
কুকিলের কালো রং মলিন হয়
তার সুরে।
ভুলে গেছি শরতের কথা;
বালি তটে কি নরম কোমল কাশফুল ফোটে।
তোমাকে নিয়ে ভাবতে ভাবতেই
আমি ভুলে গেছি আমার আমিকে।
ভুলে গেছি আঁকা বাঁকা মেঠো পথ
ছবির মতো গ্রাম;
নাটাইয়ের মাথায় স্বপ্নের ঘুড়ি
বালকের অবাক চাহনি,
বালিকার হাতে কাঁচের চুড়ি
পায়ে নূপুরের ঝুনঝন ধ্বনি।
খায়ের
28-10-2020
অমানুষ
=======
আমি মানুষ খুঁজতে গিয়ে আজকাল অমানুষ হয়ে যাচ্ছি।
প্রতিনিয়তই নকল মানুষ সেজে অভিনয় করছি মানুষেরই সাথে।
নির্ঘাত সত্য জেনেও পক্ষ নিচ্ছি
মিথ্যার;
বিবেক ভুলে গিয়ে
আবেগের সাথে করছি বসবাস।
অসভ্য ও নোংরামিকে আধুনিকতার নামে বরণ করছি নির্দিধায়।
আমি মানুষ খুঁজতে গিয়ে আজকাল অমানুষ হয়ে যাচ্ছি।
আপন ভাষায় আজকাল আমার ভীষণ এলার্জি।
বাংলা ছেড়ে তাই প্রতিটি শব্দে প্রতিটি কথায় ইংরেজি ব্যবহার করছি।
আপন সংস্কৃতি ভুলে ধার করে গান গাই।
শর্ট স্কার্ট, কোট টাইয়ে স্বচ্ছন্দ বোধ করি।
আমি মানুষ খুঁজতে গিয়ে আজকাল অমানুষ হয়ে যাচ্ছি।
আমি আজকাল এতোটাই ব্যস্ত যে,
ইলেকট্রিক বাতির আভায় ভুলে গেছি দিন রাত্রির ব্যবধান।
ভুলে গেছি আমার আপন অস্তিত্ব, আমার শেকড়।
গ্রাম্য বলে প্রতিদিন অবজ্ঞা করছি আমার প্রতিবেশ।
আত্ম অহমিকায় আমি এতোটাই বড় হয়েছি যে,
পাহাড় চূড়ায় মেঘ ছুঁয়ে দেখি।
ভুলে গেছি আকাশের মেঘেরা
বৃষ্টি হলে, ঝর্ণা হলে
নদী হয়ে যায়;
নদী হয়ে বয়ে চলে অসীম সমুদ্রে।
আমি মানুষ খুঁজতে গিয়ে আজকাল অমানুষ হয়ে যাচ্ছি।
আমি স্বাধীনতা বলতে এখন স্বার্থপরতাকে বুঝি।
যেটা আমার না;
তাকে ছুড়ে ফেলতে কক্ষনই দ্বিতীয়বার ভাবিনা।
প্রেম বলতে আমি এখন নারীমাংসকেই বুঝি।
কামুকতার রন্ধ্রে রন্ধ্রে হিংস্রতা;
খুবলে খাই তাই প্রেমিক নামের দেহ।
আমি মানুষ খুঁজতে গিয়ে আজকাল অমানুষ হয়ে যাচ্ছি।
খায়ের
24-10-2020
শহুরে সময়
==========
শহুরে নির্দিষ্ট কোন ঋতু নেই;
নেই নিয়ম মেনে সন গণনার রেওয়াজ।
এখানে দিন বলতে থার্টিফাস্ট নাইট;
এখানে জানুয়ারি বলতে কেবল ঐ একটা রাত্রিকেই বোঝায়।
এরপর ১৪ ই ফেব্রুয়ারি,
২১ শে ফেব্রুয়ারি।
তারপর বরাবরের মতোই আসে
২৬ শে মার্চ।
ভুলের ফুলে ধোকা দিতে আসে এপ্রিল।
খেটে খাওয়া শ্রমিক না জানুক;
আলোচনার টেবিলে শোভিত ফুলে আসে ১ মে।
এখানে জুন, জুলাই বলতে কেবলি প্রখর রৌদ্র।
কালো কাপড় বুকে গেঁথে
আগষ্ট আসে ঘটা করে।
সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, নভেম্বর কেবলি একেকটা মাস।
শহুরে মানুষ কোন ঋতু চেনেনা;
তারা কেবলি সাজতে জানে,
মাখতে জানে রং।
ওরা প্রকৃতি বলতে ফানুস ঊড়ার আকাশ বোঝে;
ওদের দিন নেই, রাত নেই।
শহুরে নির্দিষ্ট কোন ঋতু নেই;
নেই নিয়ম মেনে সন গণনার রেওয়াজ।
এরপর ডিসেম্বর আসে
আসে দম ফুরাবার দিন;
শহুরে মানুষেরা জানেনা
তারা কতোটা সঙ্গিহীন।
খায়ের
21-10-2020
"শহুরে গোলাপ"
===========
শহুরে গোলাপ শুধু জানালার কার্ণিশকে চেনে;
ও কখনো আকাশ দেখেনি।
ভোরের সূর্যের রং কেমন হয়,
ওরা জানেনা;
জানে না রাতের তারার কথা।
একটা পূর্ণিমার চাঁদ কতোটা আলো ছড়াতে পারে।
ফুয়ারার জলে ভিজে অকারণে ধূলো ঝরেছে শুধু;
ও জানেনা, বৃষ্টি কতো সুন্দর হতে পারে।
ও আকাশ দেখার ছলে
উঁকি দেয় কাঁচের দেওয়ালে,
নিজের প্রতিবিম্ব দেখে ওরা উচ্ছ্বাস করে;
ওরা জানেনা পৃথিবীর রূপ।
ও কখনো আকাশ দেখেনি।
রমণীর খোঁপায় গুজে স্বাধীনতা খোঁজে।
শহুরে গোলাপ শুধু জানালার কার্ণিশকে চেনে;
ও কখনো আকাশ দেখেনি।
একদিন এক দমকা হাওয়ায়
ও দুলেছিলো,
সে কি আনন্দ চারদিক।
ও জানেনা,
দক্ষিণা সমীরণ বসন্ত আনে;
ভোমর আর প্রজাপতি খেলা করে ছুঁয়ে।
শহুরে গোলাপ শুধু জানালার কার্ণিশকে চেনে;
ও কখনো আকাশ দেখেনি।
খায়ের
20-10-20
"মৃত্যুর ভাবনা"
একদিন ভোরে নিঃশ্বাস থেমে যাবে।
মসজিদের মাইকে জানিয়ে দেওয়া হবে
একটা শোক সংবাদ;
আমার চিরবিদায়ের খবর।
প্রতিবেশীরা ব্যস্ত হয়ে পড়বে অন্তিম শয্যা নিয়ে।
দু'চার জন ঝাড়ে যাবে
খুঁজে নিবে শক্ত বাঁশ।
নরম মাটি কেঁটে নিখুঁত ভাবে
কবর খোড়া হবে অদূরের বনে।
যদিও জানিনা আমি
আমার চলে যাবার নির্দিষ্ট ক্ষণ।
নিকট আত্মীয়ের কান্নার শব্দে তখন উঠোনের
কাঁঠাল গাছে বাসকরা এক জোড়া শালিক শঙ্কিত হবে।
আমি নিশ্চিত না;
আমার অন্তিম যাত্রার শবদেহ কার কাঁধে নিধর হয়ে রবে।
আমি জানিনা এর কিছুই।
জীবনের আয়োজনে ব্যস্ত যখন বন্দি জীবন;
এতো উৎসব, কোলাহল, নগরায়ন;
আমি তখন আঁধারে একা।
আমি জানিনা আর কিছুই;
কেউ জানেনা আর;
আমার অন্তিম যাত্রা আর চিরন্তন প্রতীক্ষার।
খায়ের
11-10-2020
"ঘরে ফেরা"
বহুদিন ফেরা হয়নি ঘরে।
নিরবতার সুযোগ নিয়ে
ভূই ফুরে জেগে উঠেছে
ধুরন্ধর দূর্বা।
পুরো স্যাঁতসেতে মেঝেতে
ঘরের মধ্যে ঘর বেঁধেছো কুনো ব্যাঙ, আর কেচো।
আমার ঘরে ফেরা হয়না....
উনুনের নেভা ছাঁইয়ে ফনা তুলে
বাসকরে গোখরা।
বিছানা আরশোলা আর ছারপোকার দখলে।
শূণ্য ঘর কখনো শূণ্য থাকেনা;
সুযোগ বুঝেই বসতি গড়ে কেউ।
আমার ঘরে ফেরা হয়না....
নতুনের ডাকে সারা দিয়ে সবুজ হয়েছে প্রাচীন বৃক্ষ।
কে না আদরের কাঙাল !
অনাদরে মরে যাওয়ার চেয়ে ভালোবাসা বিলিয়ে দেওয়াই ভালো।
উঠোনের ভগ্ন কাঁঠাল গাছে এবার এসেছে অজস্র মোচা;
শুনেছি পাড়ার প্রবীণ গত হয়েছেন গত বছর।
আমি এর জানিনা কিছুই।
একদিন ভালোবেসে যাকে কুট্টি বউ বলে ডাকতাম;
সেই অবনি এখন দু'সন্তানের মা।
শুনেছি শাশুড়িহীন সংসারে রাজত্ব পেয়েছে সে।
হ্যাংলা ল্যাকলেকে তমাল এখন
ফলবতী বৃক্ষের মতো এক মাংসের পাহাড়।
বাউণ্ডুলে বলে যে রুপুকে এতোকাল সংসারের বোঝা বলা হতো;
পিতার মৃত্যুর পর সেই এখন ধরেছে সংসারের হাল।
প্রশস্ত প্রাচীন তন্বী নদীটি এখন মানুষের দখলে;
সাপের মতো সরু হয়েছে।
আমার অবর্তমানে থেমে থাকেনি কিছুই।
মূলত কারো অবর্তমানে কিছুই থেমে থাকেনা।
আমার ঘরে ফেরা হয়না...
খায়ের
11-10-2020
"চলমান ও সাম্প্রতিক"
উত্তপ্ত শহর !
প্রতিটি অলিতে গলিতে হাজার হাজার জনতার সমাবেশ।
মিছিল হচ্ছে !
শ্লোগানে শ্লোগানে বারবার প্রকম্পিত হচ্ছে ইটের প্রকোষ্ঠ দালান;
আবার প্রতিধ্বনিত হয়ে ভেসে আসছে কানে।
শাহবাগ থেকে মতিঝিল,
যাত্রাবাড়ী থেকে সদর ঘাট, শহর থেকে নগর,
বাজার থেকে গ্রাম;
মানব বন্ধনের দীর্ঘ সারি।
সে সারিতে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ-খৃষ্টান।
সে সারিতে শিশু, কিশোর, তরুণ, যুবক, বৃদ্ধ।
কামার, কুমোর, জেলে, তাতি;
কলকারখানার শ্রমিক, চালক থেকে কৃষক,
ছাত্র থেকে পেশাজীবি; বনিক থেকে বেকার;
সবারই একটাই দাবী....
বিচার চাই, বিচার চাই।
মহাকালের সদর দরজা বন্ধ করে হাসছেন ভগবান;
দেবতারা আলোচনায় ব্যস্ত।
টিভি চ্যানেলে ব্রেকিং নিউজে বারবার স্ক্রোলিং হচ্ছে সে বীভৎসতার চিত্র;
দেশের প্রতিটি সংবাদ পত্রের প্রথম পৃষ্ঠায় লাল অক্ষরে ছাপা হয়েছে।
টক শো থেকে শুরু করে
টং-এর চা' দোকানে, আড্ডায়;
সবখানেই ঘটনার আলোচনা।
পরিচয়হীন অচেনা যুবকটি ও
প্রতিবাদে টগবগিয়ে লাল।
জনতার আসরে নেতা আসলেন।
মিছিল থেমে গেলো;
বরাবরের মতোই শোনালেন মুখস্থ বাণী।
নেতার সঙ্গী সমেত বাহবা দিলেন;
সে বাহাবার ধ্বনি
প্রতিবাদের ধ্বনিকে উপেক্ষা করে
শহরের সুউচ্চ দালানের ছাদে পানশালায় ব্যস্ত
মদ্যপায়ীদের হতচকিত করলো।
একটু পর প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এলেন হুইসেল বাজিয়ে।
অধস্তনরা বাঁশি ফুঁকিয়ে, লাঠিচার্জ করে,
প্রতিবাদী জনতাকে কিছুটা দূরে সরিয়ে দিলেন।
বীর দর্পে নামলেন তিনি।
কালো বুট পায়ে শব্দ করে সজোরে হেঁটে আসলেন।
নেতা তাঁকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়ে আলিঙ্গন করলেন।
স্তব্ধ জনতা;
চুপিচুপি একজন, দু'জন
অন্য জনের সঙ্গে কানাকানি।
জনতার আসরে একটা শোরগোল।
এবার কি বিচার পাবো ?
নাকি বরাবরের মতোই তদন্তের নামে ঘটনার ধামাচাপা;
নতুন ঘটনার অবতারণা।
জনতা যখন রাস্তায় বিচার প্রত্যাশি;
ভুক্তভোগী তখন শঙ্কিত !
আবারও কি বিচারের নামে আদালতে বস্ত্রহরণের,
ধর্ষণের বীভৎস বর্ণনা ?
আবারও কি মুচলেকা দিয়ে,
নাম মাত্র কিছুদিন সাজা পেয়ে আদালতের প্রধান
ফটোকে পৈশাচিক হাসি হেসে উন্নত শিরে হেঁটে যাবে ধর্ষক ?
জনতা জানেনা এর কিছুই।
নির্লিপ্ত শাসক;
বন্দী সবাই স্বার্থের বেড়াজালে।
খায়ের
07-10-2020
দ্বায়িত্ববোধ"
আমার কোন ব্যক্তিগত ইচ্ছা নেই;
যা আছে পুরোটাই দায়িত্ববোধ।
আমি খোলা আকাশের নীচে দাঁড়িয়ে আকাশ দেখি,
জলের উপর বসে ছুঁয়ে দেখি উদ্বেলিত জল।
স্রোতের মতো স্বপ্নগুলো ডিঙ্গি নৌকায় ভাসিয়েছি দক্ষিণ গাঙ্গে।
একদিন পাখি হতে চেয়ে আকাশে ঊড়াল দিয়ে দেখি
ও আকাশ আমার নয়;
আমি ফিরে এসেছি নীড়ে।
অবশেষে জেনেছি..
খড়কুটোই আমার প্রসাদ।
আমি অরণ্যে ফুল হয়ে ফুটেছিলাম;
জানতে চেয়েছিলাম আমার প্রয়োজনীয়তা কতটুকু !
একটা ভোমরও আসেনি আমার কাছে।
রং হীন সৌরভ হীন ফুল এ পৃথিবীতে বড়ই বেমানান।
ভোমরেরাও জানে,
আহারে তৃপ্ততার চেয়ে মন কোন অংশেই কম নয়।
আমাকে ছুঁয়েছিলো বসন্ত,
দক্ষিণা সমীরণ ;
তখন পুষ্পমঞ্জীর ভারে অবনত দেহ।
অগনিত পথিক হেঁটে চলে গেছে কোল ঘেঁষে;
আমি বারবার আহ্বান করেছি,
প্রতীক্ষায় থেকেছি,
কেউ আসেনি কাছে।
কান্ত দেহে ছায়া তলে জুড়িয়েছে পথিক দেহ;
ফিরেও তাকায়নি।
আমার কোন ব্যক্তিগত ইচ্ছা নেই;
যা আছে পুরোটাই দায়িত্ববোধ।
খায়ের
04-10-2020
স্মৃতিরা সুখে থাক
30-09-19
স্মৃতিরা সুখে থাক;
আমি আধাঁরেই জাগিবো রাতি
এক আকাশ কষ্ট নিয়ে এ নক্ষত্রের রাত।
এ হেমন্তের মেঘের দুপুর
না হয় একটু বৃষ্টি ঝড়ুক;
একটু কালো হোক আকাশ।
আমি বহুকাল পুষেছি
পুড়েছি অনলে শুধু;
এবার না হয় ভিজুক হৃদয়
আঁখির সে জলে।
তবু স্মৃতিরা সুখে থাক;
আমি না হয় আবার অপেক্ষা করবো ফাগুনের জন্য,
আরেক বসন্তের জন্য,
আরেক পূর্ণিমার জন্য ।
এ অবসাদের পৃথিবী নিভে যাক;
তবু স্মৃতিরা সুখে থাক।
মরে যাক দূর্বার ডগায় জেগে থাকা এক ফোঁটা শিশিরের জল।
আমিতো বেঁধেছি স্বপন অকারণে শুধু;
মেঘ আসে ঊড়ে যায়
একঝাক বকের দল।
তবু স্মৃতিরা সুখে থাক ।
সুখে থাক আমার নির্ঘুমতা
আমার নিরবতার সাথী
এক একটা অন্ধকার রাত।
তবু স্মৃতিরা সুখে থাক....
খায়ের
তবুও ভালো থেকো"
দীর্ঘ তিন মাস পর আজ ধোঁয়ার স্বাদ নিলাম।
ভুল স্বপ্নে বিভোর মস্তিষ্ক।
আমারই তল্লাটে যেনো আমি এখন অযাচিত কেউ।
পরিচিত সব রাস্তাঘাট ভীষণ অচেনা মনে হচ্ছে।
একান্ত নিজস্ব দু'খানি পা'ও এখন নিয়ন্ত্রণহীন।
বিদ্যুত বিহীন শহরের প্রতিটি গলি
গিলে ফেলেছে ঘুটঘুটে গাঢ় অন্ধকার।
ঘরফেরা পথযাত্রীরা যুদ্ধ ফেরত ক্লান্ত সৈনিকের মতোই
ধীর পায়ে সারিবদ্ধ ভাবে হেঁটে চলছে কাঙ্খিত আপন নীড়ে।
এখানে কে জয়ী, কে বিজয়ী;
নির্বাক নির্লিপ্ত চোখে তার নেই কোন সামান্য স্বাক্ষর।
ভালো লাগছেনা কিছুই....।
মাথাটা প্রচণ্ড ব্যথা করছে।
দিকভ্রান্তর উন্মাদের মতো বিকট শব্দে চিৎকার করতে ইচ্ছে করছে।
অজস্র মানুষের ভিড়ে নিঃসঙ্গতা বুকে নিয়ে নিঃশব্দে
নিজেরই সাথে বৃথা আলাপন আর ভালো লাগছেনা।
মাঝে মাঝে খেই হারিয়ে ফেলছি।
কিছুই মনে করতে পারছিনা।
বিকেলের বৃষ্টির জল এখন ব্যস্ত রাস্তার কাঁদায় লুটোপুটি খাচ্ছে।
যান্ত্রিক রিকশার পিত-পিত হুইসেল বিরক্তির অপর এক নাম।
হঠাৎই আলোর ঝলকানি।
বিদ্যুত এলো।
প্রতিবার বিদ্যুত আসার ক্ষণ বড়ই মনোহর।
ফুটপাতের দোকানীরা সারি সারি পসরা সাজিয়ে
বসে আছে হরেক রকমের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে।
আলোর সাথে মানব মনের গূঢ় একটা সম্পর্ক আছে।
চাইলেই এখানে সব কিছু গোপন করা যায়না।
তাই হয়তো মানুষের নিজস্ব গোপনীয়তা আঁধারেই উদ্ভাসিত হয়।
সন্ধ্যার এই আবছা গোধূলি ক্ষণ।
স্মৃতিরা আলোর স্পর্শ পেয়ে সজীব হতে শুরু করছে।
দূর গগনের মেঘে ঢাকা ঘোলা চাঁদের মতো
মনে পড়ছে এখন অনেক কিছুই।
মনে পড়ছে, একদিন কারো নগ্ন ফর্সা দু'খানি
হাত কাছে আসার আমন্ত্রণ করেছিলো।
একদিন ঝর্ণার জলের মতো দীর্ঘ এলোমেলো
কেশ ছুঁয়ে ছিলো তাঁর উরুর রেখা।
মনে পড়ছে,
মায়াময় শান্ত কোমল ডাগর এক জোড়া
চোখ দিয়েছিলো অভয়ের বাণী।
মনে পড়ছে,
আহ্লাদের আবদারে রাত্রির নির্ঘুমতা।
মনে পড়ছে,
অভিমানের সুরে কারো ভালোবাসার কর্কশ শাসন।
মনে পড়ছে,
একদিন একরাশ অভিযোগে ডালা হাতে কেউ প্রশ্ন করেছিলো,
ছেড়ে যাবেনা তো ?
অসংখ্য প্রশ্ন করে উত্তর পাইনি কারো।
তবুও ভালো থাক ভালোবাসার মানুষ গুলো।
খায়ের

২৪-০৯-২০২০ (সন্ধ্যা)
স্বপ্ন ভঙ্গের কচড়া
মেহের নিগার,
সে কথা জানিতে তুমি !
আর কেউ জানেনাতো আর;
এই যে আমার অবিরত লিখে চলা
শব্দের স্ব-করুণ আর্ত চিৎকার।
তখন পৌষ মাস,
তখন শীতকাল;
তখন সকালের শিশির মেখে দিন রৌদ্রজ্বল।
তুমি এলে,
এলো যেন এক মহাধূমকেতু;
আমি কি যোগ্যতা রাখি
বাঁধিতে তারে...
আছে কোনো হেতু।
তখন কেবল শূণ্য শাখায় নতুনের আহ্বান;
তখন কুঁড়িরা জাগেনি..
গায়নি কোন পাখি গান।
তখন সরিষার বনে মৌ মৌ রব;
তখন বসন্তের শুভেচ্ছা বাণী
বদলাচ্ছে সৌরভ।
একদিন এক ভরা পূর্ণিমায়
বাহিরে রূপালী চাঁদ;
আঁধার ঘরে একা আমি
অন্তরে অমরত্বের স্বাদ।
তুমি শুধালে কুশল
আমি ভূতল
চমকিত মোর হিয়া;
এ যেন চিরকাল কামনার জল
অসীম তৃষ্ণা নিয়া।
জাগিলো পাখি খুলিলো আঁখি
খুললো সকল দুয়ার;
ঘুম ভেঙ্গে দেখি
আমি; একি ?
শুকনো নদীতে জোয়ার।
মেহের নিগার,
সে কথা জানিতে তুমি !
আর কেউ জানেনাতো আর;
এই যে আমার অবিরত লিখে চলা
শব্দের স্ব-করুণ আর্ত চিৎকার।
খায়ের

11-09-2020
"ফিরে এসো"
গোধূলির এ নিরবতা ভেঙ্গে
তুমি ফিরে এসো।
ফিরে এসো শূণ্য উঠোনে,
শূণ্য ঘরে, শূণ্য বক্ষে।
গোধূলির এ নিরবতা ভেঙ্গে
তুমি ফিরে এসো।
এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে টেবিলে বই, খাতা, কলম।
বিছানাতে চাদর নেই,
কলসিতে জল নেই,
উনুনেতে আগুন নেই,
গল্পের মানুষ নেই,
আঁধারে আলো নেই।
গোধূলির এ নিরবতা ভেঙ্গে
তুমি ফিরে এসো।
ফিরে এসো শূণ্য উঠোনে,
শূণ্য ঘরে, শূণ্য বক্ষে।
তুমি ফিরে আসলেই আবার মুখরিত হবে দশ দিক;
শূণ্য উঠোন, ঘর ভরে যাবে তোমার পদচারণায়;
শূণ্য বক্ষ ফিরে পাবে
প্রাণ স্পন্দন।
তুমি ফিরে আসলেই টেবিল
শোভিত হবে ফুলে ফুলে;
বিছানায় থরে থরে ফুটবে গোলাপ।
কলসির কানায় দুলবে জল;
উনুনে ফিনকি দিয়ে জ্বলবে আগুন।
তুমি ফিরে আসলেই আবার
গল্পের আসর জমবে মধ্যরাত অব্দি;
আঁধারে আলো জ্বেলে নাচবে জোনাকি।
গোধূলির এ নিরবতা ভেঙ্গে তুমি ফিরে এসো;
ফিরে এসো শূণ্য উঠোনে,
শূণ্য ঘরে, শূণ্য বক্ষে।
খায়ের

05-09-2020
"জানতে চাই "
অনিন্দিতা,
এখন কেমন আছো,
কি করছো ?
আশাকরি নিশ্চয় অনেক ভালো আছো।
যাঁরা ভালো থাকার জন্য চলে যায়;
তারা তো দিন শেষে ভালো থাকবেই।
তাই না ?
দুঃখিত ...
প্রশ্ন করেছিলাম।
দেখো, কি রকম বোকা আমি।
যাঁরা ভালো থাকবেই বলে প্রতিজ্ঞা করে;
তাঁদের কাছে কি আর জানতে হয়;
কেমন আছে।
অনিন্দিতা,
মন আজকাল কেনো জানি প্রকৃতির মতোই সত্য হয়ে উঠেছে।
বর্ষা আসলেই বুকের মাঝে কদম ফোটে,
অস্থির নদী হয়ে ছুটে যায় নারীর কাছে।
মেঘের গর্জনে মতো
মন খারাপে আকাশ প্রকম্পিত হয় বারেবারে।
উন্মাদ হয় তোমাকে দেখার নেশায়।
অনিন্দিতা,
এখন ক্লান্তির রাত্রি গভীর হলে
স্মৃতির আকাশে একটাই চাঁদ ওঠে;
সে কেবলই তুমি।
অনিন্দিতা,
যে চোখেরা ঘুম ভুলে যায়;
ভুলে গিয়ে রচনা করে তন্দ্রার বাসর।
সে কি আমার সত্যি চোঁখ।
কেনো শীতের শুষ্ক বৃক্ষের মতো অপেক্ষায়
থাকি আরেক বসন্তের আশায় ?
অনিন্দিতা,
এখন নিজের প্রশ্নেই নিজে উত্তর খোঁজার চেষ্টা করি।
যাঁরা ভালো থাকার জন্য চলে যায়;
দিন শেষে তারা কি সত্যিই ভালো থাকে ?
তবুও তুমি ভালো থেকো।
খায়ের

04-09-2020
"ভালো থেকো"
রোজ উৎসবের আয়োজনে তুমি ভালো থেকো।
ভালো থেকো প্রিয়তমা,
গ্রীষ্মের মাতাল হাওয়ার মতো,
গনগনে সূর্যালোকের মতো
ভালো থেকো।
ভালো থেকো প্রিয়তমা
বর্ষায় ভেজা লাজুক কদমের মতো;
উত্তাল যৌবনা তটিনীর মতো
ভালো থেকো।
ভালো থেকো প্রিয়তমা,
শরতের শুভ্র মেঘের মতো;
নরম কাশফুলের মতো।
ভালো থেকো পালে হাওয়া লাগা নৌকার মতো
ভালো থেকো।
ভালো থেকো প্রিয়তমা,
হেমন্তের সোনালী ধানের মতো,
কিশোরীর খোলা চুলে
এক্কা-দোক্কার মতো,
ভালো থেকো,
কিশোরের স্বপ্নের ঘুড়ির মতো
ভালো থেকো।
ভালো থেকো প্রিয়তমা,
শীতের শান্ত নদীর মতো,
কুয়াশায় ভেজা দূর্বার মতো,
শিউলি অথবা শরিষা ফুলের মতো ভালো থেকো;
ভালো থেকো।
ভালো থেকো প্রিয়তমা,
বসন্তের কুকিলের মতো,
শিমুল বা পলাশের মতো
ভালো থেকো।
রোজ উৎসবের আয়োজনে তুমি ভালো থেকো;
ভালো থেকো।
02-09-2020
খায়ের

02-09-2020
"খোলা চিঠি"
একটা ঠিকানা চাই !
কোন ফিরতি চিঠি পাবার আশায় নয়;
শুধু তাকে জানাতে চাই,
তাকে ছাড়া আমি ভালো নেই ।
তাকে জানাতে চাই,
এখন আমার দিনগুলো কতোটা মলিনতায় কাটে,
এখন আমার রাত গুলো
কেমন বিনিদ্রায় কাটে।
তাকে জানাতে চাই,
তাকে ছাড়া আমার ভীষণ একলা লাগে।
কোন ফিরতি চিঠি পাবার আশায় নয়;
তাকে জানাতে চাই,
এই শহরে তুমুল ব্যস্ততার ফাঁকে এখন কেউ আর প্রতীক্ষায় থাকেনা;
কেউ তাড়াও দেয়না
বাড়ি ফেরার।
অমন দৃষ্টি দিয়ে কেউ আর তাকায় না;
বলেনা কেউ..
বড্ড শুকিয়ে গেছো।
বলেনা কেউ..
খেয়েছো কখন ?
মুখটা এমন শুকনো লাগছে কেনো।
কোন ফিরতি চিঠি পাবার আশায় না;
একটা ঠিকানা চাই,
শুধু তাকে জানাতে চাই
তাকে ছাড়া আমি ভালো নেই..
আমি ভালো নেই।
খায়ের

29-08-2020
"প্রেম বলিনা"
একসাথে কিছুটা পথ না হাটলে
আমি তাকে প্রেমিক বা প্রেম বলিনা।
দূরাকাশের নক্ষত্রের পানে চেয়ে হয়তো একটা রাত কাটানো যায়;
এক জীবনের জন্য জাগতে হলে অন্তত প্রেম থাকা চাই।
যে দূরত্ব স্বপ্ন দেখায়,
ভাবনার আকাশে ফানুস ঊড়ায়;
সেখানে মিলনের আদিখ্যেতা নেই।
জীবন অনন্তকালের না;
তবে কেন অনন্ত পথ চেয়ে কারো জন্য অপেক্ষা ?
মুখোমুখি চেয়ে চেঁচিয়ে ভালোবাসি বলাটাই প্রেম।
নিরবে নিরবতার অজুহাতে পাণ্ডুলিপি
সাজিয়ে হয়তো কবি বা সাহিত্যিক হওয়া যায়; প্রেমিক না ।
প্রেমিক হতে চাইলে নেমে আসো ফুটপাতে, উদ্দাম খোলা আকাশে;
গলিতে, ক্যান্টিনে, ক্যামপাসে
বটতলার শানবাঁধা ঘাটে,
অথবা শান্ত সবুজের দেশে।
মোবাইলের স্ক্রিনে লিখে
Love you বলাটা প্রেম না।
যে নিন্দুকের রোষানলে পড়ে পোড়েনা;
আমি তাকে প্রেমিক বা প্রেম বলিনা।
হেমন্তের পাতাঝরা বাতাসে বসন্তের ছোঁয়ায়
দোল খাওয়া কৃষ্ণচূড়ার শাখায় ফুলকে প্রেমিকার খোঁপায় গুজিয়ে
তার ঘ্রাণ কে অগ্রহায়ণের ধান ভাবতেই পারি; প্রেম না।
যদি না ঊড়ে তার আঁচল
তবে বসন্তের শেষে মরে যাবে দিন।
আমি প্রেম ও প্রেমিকের কথা বলছি..
এক শ্রাবণে বৃষ্টি না হতেই পারে;
অন্তত কিছু মেঘ জমুক আকাশে.....
দু'হাত বাড়ালে না ভিজুক
সে আঙ্গুল;
ছুঁয়ে যাক না কারো মন....
অন্তত একসাথে কিছুটা পথ চলুক;
এ খোলা আকাশ কিছুটা স্বপ্নে ভাসুক।
আমি বিজয়ের স্বাধীনতায় উদ্ভাসিত হয়ে
হেসে কুটি কুটি হয়ে কুটি বছর কাটিয়ে দিতে চাই না;
এক শীতের রাতের মতো
নরম চাদরের মতো
আবছা কুয়াশার মতো
একটু উষ্ণতা আসুক;
নিঃশ্বাসের উষ্ণতা, আঙ্গুলের উষ্ণতা, আলিঙ্গনের উষ্ণতা ..
তবু একসাথে কিছুটা পথ চলুক।
আমি তো তাকে প্রেম বা প্রেমিক বলতে পারি না ।
খায়ের

20-08-2019
যবনিকা
=========
চির বিদায়ের ঘন্টা বাজিছে আজিকে
আঁধার এসেছে ঘনে;
ভোরের রবি অস্ত গেছে
দূর সে ঘন বনে।
এতকাল যাহা নিজের ছিলো
ছিলো প্রাণের চেয়েও আপন;
আজ বুঝেছি
তা অতিথি অতীত
মিছে; মরিচিকার স্বপন।
কতো যে কথা, কতো যে মায়া, কতো যে সাধের স্মৃতি;
আজ দু'জনে দুই প্রান্তে
থমকে গেছে গতি।
নব পল্লবে জাগিলো কদম
মেঘ গুরু গুর ডাকি;
শ্রাবণ ধারা ঝরিছে অঝোরে
তটিনী হয়েছে আঁখি।
কালের ধেনু হাঁকিছে একাকী
মহাকালের পথ;
আমিও পথিক তুমিও তো তাই
সময় হয়েছে রথ।
নিশিথের পাখি করে ডাকাডাকি
কোন সে ভোরের টানে;
আয় ফিরে আয়, আয়রে আবার
শূণ্য বক্ষ পানে।
বসন্ত গেছে রিক্ত হস্তে
গাঁথিনি একটিও মালা;
কারে যে জানাবো এ ব্যথার কথা
কিভাবে জুড়াবো জ্বালা।
শূণ্য ঘরে শূণ্য প্রদীপ
নাইকো আলোর শিখা;
কি জানি হায় কোন অপরাধে
বিধি; ভাগ্যে এমন লিখা।
খায়ের

11-09-2020
দীর্ঘশ্বাসের কবিতা"
তুমি নিবে!
একরাশ দীর্ঘশ্বাসের কবিতা।
তবে এসো...
নির্ঘুম মধ্যরাতের বাতায়নে।
আমি কালো অক্ষরে অন্ধকারে
বেদনার নীল সুর শুনি।
এখানে আকাশ কলো;
মেঘ কালো, রাত্রি কালো।
এখানে ধূসর বকের মতো
চাঁদ ওঠেনা;
ঝিঝি পোকাও ডাকেনা নিয়ম করে সন্ধ্যায় পদ্মপুকুরে।
পানকৌড়িরা জ্যোৎস্না মেখে খেলা করেনা গভীর জলে।
এখানে বধূরা সিঁথিতে আঁকেনা রক্ত সিঁদুর;
কালো টিপ আর কাজল পড়ে।
এখানে খোলা পা আলতায় রাঙ্গা হয়না;
এর বদলে কাদাজলে ঘোলা হয়।
তুমি নিবে !
একরাশ দীর্ঘশ্বাসের কবিতা।
তবে এসো...
যে প্রেমিক একদিন এসেছিলো কাছে;
তার কাছে জমেছে অজস্র ঋণ।
হিসাবের খাতায় বন্দি স্মৃতি,
বন্দি স্বপন।
সে শিশু রোজ বই কাঁধে স্কুলে যাবার কথা ছিলো;
তার গায়ে ঘামের জল টপ টপ করে;
কচি হাতে কলমের বদলে হাতুড়ি।
যে কিশোরী উঠোনে
এক্কা-দোক্কা খেলার কথা ছিলো;
সে এখন পাশবিক অত্যাচারে ক্ষতবিক্ষত।
তুমি নিবে !
একরাশ দীর্ঘশ্বাসের কবিতা।
তবে এসো...
যে যুবক পরিবারের সম্বল হওয়ার কথা ছিলো;
তার ঠোঁটে ধোঁয়ার গন্ধ।
দিন দিন শহর বাড়ছে, গড়ছে;
গ্রাম উজাড় হচ্ছে
সে স্রোতে রাজাই রাজা।
তুমি নিবে !
একরাশ দীর্ঘশ্বাসের কবিতা।
তবে এসো...।
খায়ের
05-08-2020
"মেহের নিগার"
মেহের নিগার,
ক্ষমা করো;
আজও ভুলতে পারিনি তোমায়।
স্মৃতি যে এতোটা শক্তিশালী,
এতোটা জীবন্ত হতে পারে;
আমি তা ঘুণাক্ষরেও কখনো কল্পনা করতে পারিনি।
মনে হয়,
জীবিত ও মৃত্যুর মাঝেও এতোটা বিস্তর ফারাক নেই ।
তুমি না থেকেও আজ আমার না থাকা জুড়ে।
প্রতিবার খেতে বসলেই মনে পড়ে,
তুমি যেন বলছো,
আজ কি দিয়ে খেলে ?
পেট পুড়ে খেয়েছো তো ?
পানি বেশি করে খাও, ইত্যাদি।
আমার ভুলো মন।
তুমি প্রায়সই মনে করিয়ে দিতে,
ছোলাবুট ভিজিয়েছো কি না ?
আজ ডিম খেয়েছো কি ?
রেগুলার কলা খাবে কিন্তু;
কলা খুবই উপকারী ফল।
একদিন জানলাম,
ফলের মধ্যে কলা তোমার ভীষণ প্রিয় খাবার।
খোলা আকাশ, অবারিত সবুজ প্রান্তর, আঁকা বাঁকা
গ্রাম্য মেঠো পথ, হাটু জলের নদী, পূর্ণিমা রাত, ঝিঝি পোকার ডাক;
প্রিয় তোমার অনেক কিছুই।
সে সময়ে আমিও তোমার প্রিয় ছিলাম।
কিন্তু হায় !
তা যে এতোটা ক্ষণিকের, এতোটা যে ঠুনকো;
বোধকরি তা আমার এই ক্ষুদ্র জ্ঞানের অজ্ঞতার আঁধারেই ঢাকা ছিলো।
মেহের নিগার,
তোমার গভীর নিঃশ্বাসে
যে উষ্ণতা এনেছিলো রোজ মধ্যরাতে;
আজ তা পৌষের রাত্রির মতো হারিয়ে গেছে সুদূরে।
আমি কালের সাক্ষী হয়ে বেদনাকে বুকে নিয়ে এখন দীর্ঘশ্বাসের রাত্রি কাটাই।
মেহের নিগার,
বিশ্বাস থেকেই প্রেমের বীজ বপন হয়।
অবিশ্বাস বরাবরই জাগতিক সুখকে পণ্ড করে দেয়।
যে প্রেম মোহ থেকে প্রস্ফুটিত হয়,
তার ফল কাটায় মোড়া;
ভক্ষণেই মরণ।
মেহের নিগার,
একাকী বাদী ও বিচারক সেজে
কি সুখ পেয়েছো বলো ?
ভুল ধারণা বুকে নিয়ে অনিদ্রার অনন্ত রাত্রি দিলে শুধু ।
ভার্চুয়াল জগতের কল্যাণে গতকাল তোমার কিছু লিখা দেখলাম।
মধ্যরাতের পোষ্ট।
তুমি লিখেছো, ঘুম আসছেনা।
তোমাকেও কি পেয়ে বসেছে পরিচিত অনিদ্রা ?
মেহের নিগার,
এখন রোজ ঘুম কামনা করে কাটাও আরেকটা দীর্ঘ অনিদ্রার রাত।
এখন রোজ দু'জন দু প্রান্তর থেকে চার চোখে অন্ধকার দেখি।
সে চোখে আলো নেই, স্বপ্ন নেই; শুধুই শূণ্যতা।
এখন অন্ধকারকেই আলিঙ্গন করে ভোরের প্রতীক্ষা করি।
মেহের নিগার,
বলতে পারো,
সব সূর্যই কি ভোর আনে ?
আলোতেই যদি ভোর হয় তবে নিয়নের স্নিগ্ধতাকে কেনো দিন বলিনা ?
মেহের নিগার,
ক্ষমা করো।
আজও ভুলতে পারিনি তোমায়।
No comments:
Post a Comment