Sunday, March 8, 2020

কাজী রাহনুমা নূর




ভালোবাসাহীন হয়েই ঝরবে
____________কাজী রাহনুমা নূর

হয়ত খুব সহজ চলে যাওয়া, তাই চলে গেলে
সব ভালো লাগা, খুনসুটি, চোখে চোখ রেখে
তারা গোনা, কিংবা খুব গভীর কন্ঠে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি ;
কত সহজে ভুলে যাও :
তুমি, তোমরা, তোমাদের তোমরা,
খেলার ছলে হাতে নিয়ে নেড়ে দেখলে;
আকর্ষন হারাতেই ছুঁড়ে ফেললে জলে,
যেন হঠাত সুখের পরশ পাওয়ার লোভে
কারো মনের দরজায় খুব টোকা;
তারপর স্বভাব বশত ভালোবাসা
ভালো লাগার কানামাছি খেলা:
আবার মনের খেয়ালে অন্য কারো
দরজা বা জানালায় টোকা।

আচ্ছা তোমরা কি কখনো ভাবো
যাদের মনের অলিতে গলিতে পচা বিষ ছূড়ে যাচ্ছো,
উপহাসের অট্টহাসিতে লুকাচ্ছো পাপ;
সেই পাপের চিহ্ন টেনে চলেছো
ঠিক জীবন রেখার সমান্তরালে?
যাকে খুব আবেগে বুকে জড়িয়ে
আবার নিছক অবহেলায় পায়ে মাড়ালে,
তার চোখের কোণের চিকচিক করা
জল ও ডাকতে পারে বান।
তুমি, তোমরা, তোমাদের তোমরা ভাবো
এভাবেই কাটবে দিন।
মিথ্যে প্রেমের বাসর সাজিয়ে,
দিনকি কাটে? সময় কি থাকে থেমে?
তোমার ভালোবাসার তীব্রতায় যেমন মাতাল হয়েছি,
স্রোতের মতন তোমার বুকের বেলাভূমিতে
আছড়ে পড়েছি,
আদরে আদরে রেশমের মতন গুটিয়েছি,
আজ তোমার অবহেলায় -
আরো আরো বেশী গুটিয়ে গেলাম যেন :
বুকের কোটরে ঝোলালাম তালা।
আবেগ, বিশ্বাস, ভালো মন্দ
হিম করা নিশ্বাস সবটুকু উবে গেলো
তোমার নির্জলা মিথ্যের প্রবল ফূ তে।
জানি ভালোবাসোনা, বাসোনি কোনদিন
তাতে কি?
আমার দু:খগুলো কখনো ছেড়ে যাবেনা তোমায়;
চাপা ওই কস্ট গুলো শ্যাওলা বিছিয়ে যাবে পথে পথে।
তাতে হোঁচট খেয়ে তুমি উঠে দাঁড়াবে
আবারো হোঁচট খাবে;
তারপর একদিন দেখবে আর উঠে দাঁড়াতে পারছোনা
দিনশেষে ভাদরের শেষ খেয়ায়
কোন প্রমোদিনী সংগ দেবে না তোমায়।
তুমি, তোমরা, তোমাদের তোমরা
ভালোবাসাহীন হয়েই ঝরবে।
ঝরা পাতার মতন..... টুপ।







মেয়ে ভ্রূণ বলছি

কাজী রাহনুমা নূর
------------------

একটি মেয়ে ভ্রুণ পৃথিবীর আলো দেখবে
তাই সৃষ্টিকর্তার অনুমতি চাইলো।
সৃষ্টিকর্তা তাঁর প্রতিটি সৃষ্টিকে দারুন ভালোবাসেন,
তাদের মন রক্ষাই তাঁর একমাত্র ব্রত।
মায়াভরা চোখে তাকিয়ে থাকা মেয়ে ভ্রুণ টির
জন্ম কুন্ডুলি নামানো হলো, কিন্তু সে কি?
কুন্ডুলির ঠিক মাঝ বরাবর দগদগে দশ ক্ষত।
কারণ জানতে এগিয়ে এলো ফেরেশতারা শত।
কি হয়েছে কিসের আঘাত?
নিষ্ঠুরতার সহস্র দাঁত ।
সৃষ্টিকর্তার আদেশ মতই চললো তদন্ত কাজ।
রিপোর্ট এলো, সকল নারীর কুন্ডুলিতেই
লাল কালো আর হলুদ রঙের ভাঁজ।
সে ভাঁজ খুলে মলম মাখাও যত
তবু
ফিনকি দিয়ে কষ্ট গুলো ছিটকে বেরোয় অবিরত।
স্রষ্টা তখন আদেশ করেন
সৃষ্টির ঠিক প্রথম থেকে সব নারীদের করো জড়ো
নানান দেশের, নানান বেশের নারী এলো
কারো আলোয় চাঁদটা রূপোর জোছনা পেলো
কারো চোখের মায়ায় ক্রোধরা স্বর্গে গেলো ।

কোমল স্বরে স্রষ্টা তাদের প্রশ্ন করেন -
'ভয় পেয়োনা সৃষ্টি আমার
একটা কথা ছিলো জানার।
কে খুঁড়ছে তোমার বুকে বিষন্নতার ক্ষত?'
নারীরা সব ঠোঁট কামড়ে করলো মাথা নত।
চারিদিকে নিস্তব্ধতার সাদা কালো ধুপ
স্রষ্টা দেখেন একই নারীর কত শত রুপ
কেউ মা, কেউ সেবাদাসী, বারবণিতা
প্রেমিকা কেউ, আবার কেউ বা স্বাধীনচেতা
তবু ও ওদের সবার বুকেই কষ্ট আঁকা
মনের ভেতর
সংশয় আর অবিশ্বাসের ঘুরছে চাকা।
কারণ টা তার খুঁজে পাওয়া নয়তো সোজা
সব নারীর ই হাতে পায়ে জীভের ডগায়
অদৃশ্য সব শেকল গোঁজা ।
ঠিক তখনই মেয়ে ভ্রুণ টি উঠলো বলে
'জন্ম থেকেই অমন যদি কাঁদতে হবে
বাড়তে হবে নয়ে ছয়ে সকল সয়ে
অযুত 'না' এর সংগে ভাবের চুক্তি বয়ে
জন্ম আমার না হোক তবে।'
স্রষ্টা বলেন, "আমার সেরা সৃষ্টি মানব
সে মানবের জন্ম দেয় কোন মহা মানব?
সে তুই নারী,
তোর বিরহে আকাশ ফেটে নামবে জোয়ার
তোর পায়েতেই সব মানবের স্বর্গ দুয়ার
নারীর জন্ম বন্ধ যদি করি তবে
আমার সেরা মানব জন্ম কেমনে লবে ?"
ভ্রূণটি বলে ভারী বুকে কষ্ট ধরি
স্রষ্টা তোমার মানবকে আজ প্রশ্ন করি ,
'ওরে মানব তোর বাহুতে শক্তি ধরিস
সেই গর্বে আমার বুকে বারুদ ভরিস ?
আমরা নারী , আমারাই মা
নিজের জীবন তুচ্ছ করে ধরছি
পেটে দানবের ছা
মা যদি তোর জন্ম নিতেই মারবি ওরে
জন্মাস তুই হায়না , কুকুর, গাভীর ঘরে।'





কেবল নারী
++++++++


শরীর জুড়ে সোঁদা মাটির গন্ধ মেখে স্নান সেরে
সাত পাকের অষ্টভোজে মনোরঞ্জনে ব্যস্ত নারী।
নিশ্বাসে তার আতংকরা বসছে নিবিড় খুঁটি গেড়ে
সাবধানে দুয়ার খোলা, উনুনে হাড়ি তবুও ওদের
সব কিছুতেই নজরদারী, অসন্তোষের বাড়াবাড়ি।
তুমি নারী, কেবল নারী, কামিজ কিংবা গজের শাড়ি
কথায় তোমার ধারটা বেশি। লবন, মরিচ, মশলা বাটা
হাতটা হলুদ খসখসে আর মুখটা খুবই সাদামাটা।
ওদের বাড়ির বউটি কেমন লক্ষি ঠান্ডা জলের ধারা
রুপে যে তার গোলাপ ফোটে, তোমার চোখে ধু সাহারা।
সবই আছে ঘরটা জুড়ে বাসন, কোসন, মোবাইল, টিভি
মোহ মায়ার সুতোয় বোনো সুখের ছায়ায় উঁইয়ের ঢিবি।
তুমি নারী কেবল নারী, কিনলো দিয়ে গয়না গাড়ি
ওদের হাসি,ওদের স্বপ্ন, তোমার প্রাপ্তি শ্বশুর বাড়ি।
কন্ঠে তোমার উঠতো কেঁপে পাশের বাড়ির শুভ্র, দয়াল
এ বাড়ি তে এসে কেমন কোকিল কন্ঠে পড়লো জোয়াল।
তবু ও তুমি আলতো হেসে ভোলাও মনের পায়রা গুলো
তুমি নারী, কেবল নারী, মাটির ঠান্ডা দেহের ভাঁজে
বিষাদ মাখা জমাট ধুলো।

কাজী রাহনুমা নূর






নরপিশাচ
+++++
কাজী রাহনুমা নূর


স্তব্ধতার নিজস্ব ভাষা আছে
অন্ধকারের ও আছে মন কেমন করা আলো
বেশ কিছুক্ষণ হলো সে আলোর স্নিগ্ধতা জড়িয়ে
নি:শব্দতার মচমচে ফিসফাস শুনছিলো ।
মেঝেতে ডান কাঁধ হয়ে শুয়ে ছিলো মেয়েটি,
কে জানে কতক্ষণ,
ঘাড়ের কাছটায় একটা অসহ্য চিনচিনে ব্যথা;
হঠাত ই ওর মনে হলো তাকে নিয়েই চলছে ফিসফাস
ভাবনাটা মাথায় আসতেই হাল্কা শব্দ করে হেসে উঠলো,
তার মতন এত্ত সাদামাটা মেয়েকে নিয়ে কথা বলে
শুধুই রবি ঠাকুর। সাধারণ মেয়ে কবিতাটি 

তাদের মতন মেয়েদের নিয়েই তো লেখা, 
মালতীর নরেশশুধুই স্বপ্নের ফেরী ওয়ালা,
মনের ঘরে ভাড়া ছাড়াই তাদের বসবাস ,
বাঁধনহীন তরী তীরে ভেড়ে না কখনো।

চারপাশ খাঁ খাঁ , দূরে শিয়ালের হুক্কা হুয়া শব্দে
আঁধারের গায়ে যেন বাজ পড়লো
সেই শব্দের তীক্ষতা কে ছাপিয়ে কানে এলো
প্রচন্ড ডানা ঝাপটানোর শব্দ।
সূর্যাস্তের রঙ মেখে জেগে উঠলো পূবের উঠোন।
সে আলোয় মেয়েটি দেখলো কয়েকটা
ছোট বড়ো নেকড়ে খুবলে খাচ্ছে কিছু একটা,
একটু ভালো করে দেখতেই বুঝলো
ওটা একটা নারী শরীর ,আপ্রাণ যুঝে যাচ্ছে শরীরটা,
তার কতটা প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে আর কতটা
নারীত্ব রক্ষায়, কে জানে?
আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ালো মেয়েটি,
পা চলছেনা তবু গায়ের সমস্ত শক্তি এক করে এগোলো।
বাঁচাতে হবে ওকে
নারী শরীর টা আর পেরে উঠছে না,
এতক্ষণ চেঁচাচ্ছিলো এখন সেটি ফোঁপানো তে নেমেছে,
সাথে বিড়বিড় করে কি যেন বলছে
কোন সুরা কি? আয়াতুল কুরসী?
পেছনে পায়ের শব্দ শুনতে পেয়ে
ঘুরে তাকালো জানোয়ার গুলো
মেয়েটা দেখলো নেকড়ের চেয়েও হিংস্র কিছু নরপিশাচ।
তাদের চোখের মণিতে জ্বলছে নগ্ন কামুকতা
নখের কোণে চিক চিকে তাজা রক্ত
রক্তের গন্ধে নয় মাংসের গন্ধে ওদের লালা ঝরে
বিষাক্ত ক্ষুধা লাথি দেয় তলপেটে,
নপুংশক নরপিশাচ গুলো দলবেঁধে চার পায়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে,
রক্তাক্ত হয় তরুণী, বৃদ্ধা, কন্যা; রক্তাক্ত হয় মানব জন্ম।
মেয়েটি সমস্ত শক্তি এক করে চেঁচিয়ে উঠলো
" ছেড়ে দে ওকে। এই নারী, তোর মা, বোন, শিশু,
এই নারী তোর আশ্রয় স্থল; হাসি, কান্না, ভালোবাসা
ওর শরীরেই বেড়ে উঠেছিস তুই, তোর অস্থি মজ্জা
 চামড়ায় মিশে আছে প্রসূতির গর্ভ বেদনা,।
ওকে খুবলে নিজকেই উলঙ্গ করছিস বারবার,
থাম তুই মাংশাসী পিশাচ। স্টপ!
কেউ শুনলো না ওকে, শিশু যেমন খেলা শেষে খেলনা
ধুলোয় ফেলে যায় সে ভাবেই ছুঁড়ে ফেললো নিথর শরীরটা,
চারপেয়ে পিশাচ গুলো দু পায়ে হেঁটে দূরে সরে যাচ্ছে,
ঘাড় বেঁকে পড়ে আছে মেয়েটা,
ওর স্নিগ্ধ শরীরের প্রতি বাঁকে মুখ লুকাচ্ছে
কুমারীর লজ্জ্বা।



 শেষ বিকেলের আলো
কাজী রাহ্‌নুমা নূর
----------------------

স্বপ্নে তো অনেক এলে
এবার ভোরের নরম আলোয় পাশ ফিরে চোখ খোল ,
দেখতে পাও আমায় ?
দারুন অবহেলায় যার পথ মাড়িয়ে ডিপার্ট্মেন্টের
দুর্দান্ত সুন্দরীর বাহুলগ্না হতে ।
রাতের ঘুম চাঁদের কাছে জমা ,
পাতার পর পাতা প্রেম কাব্য বইয়ের ভাঁজে
নিপুন দক্ষতায় গুঁজে ক্লান্তিহীন অপেক্ষা
এসবই সয়ে যেত একজোড়া চোখ।
মনে পড়ে ?
খুব সকালে তোমার এলার্ম ক্লক হয়ে ঘুম ভাঙানো ,
প্রিয় মানবীর জন্মদিনে গিফট আইডিয়া ,
দুপুরে হাতে বানানো পরোটা আর মাংশের সাথে
একাকার উথাল পাথাল মন,
আর পরীক্ষার ঠিক এক সপ্তাহ আগে
যার দরজায় প্রবল টোকার ঝড় ওঠাতে
সেই আমি গো , মনে পড়লো ?
পড়লো না বুঝি ?
অমন সাদা কালোয় আঁকা খেই হারানো চেহারাটা
কারই বা মনে থাকে ?
অথচ দেখ, কিছুই ভুলিনি আমি ।
তোমার প্রিয় রঙ , প্রিয় শার্ট , প্রিয় পারফিউম
গিটারে বেজে চলা 'শেষ বিকেলের আলো ' এখনো কানে বাজে ।
তোমার প্রথম প্রেম , প্রেম হারানোর কষ্ট
মাঝ রাতে ঘুম ভাঙিয়ে সে কষ্টের দিঘীতে আমায় ছুঁড়ে ফেলা
সব স্মৃতিই তোলা আছে মনের শেলফে
অবসরে ওদের ভাঁজ খুলে খুলে রোদে বিছিয়ে
এদিক ওদিক সরিয়ে আরাম দেই ,
কখনো আবার চোখের জলে স্নান করিয়ে খুব যত্নে গা মুছে
আলতো করে ক্রিম মেখে বুকে জড়িয়ে নেই ।
তোমার হাসি , কান্না , বিরহ, উচ্ছাস সব কেমন আমাতে মিশে আছে;
শুধু তুমিই ছায়াহীন ভবঘুরে ,
যাকে অনুভব করা যায়, ছোঁয়া যায় না ।
কেমন আছো ?






কষ্ট বোনা প্রহর
-------------++++
রাহনুমা নূর


বেশ কদিন ধরে খুঁজে খুঁজে কষ্টগুলোকে
এক উঠোনে জড়ো করছি
জড়ো করছি না বলে করার চেষ্টা করছি বলাটা বরং ঠিক হবে।
প্রিয় বন্ধুর ভুল বুঝে দূরে সরে যাওয়ার কষ্টটাকে
কোন রকম উঠোনে দাঁড় করালাম....
ওমনি দেখি ডানে দাঁড়িয়ে ঝিমোতে থাকা
পরীক্ষা ফেলের কষ্ট টা কোন ফাঁকে সরে পড়েছে।
সারাদিন কাজে যাওয়ার ফাঁকে, তরকারীতে লবন চাখার ফাঁকে
মনের এ কোন, ওকোন সব কোন থেকে
দুমড়ে যাওয়া, অতি ব্যবহারে গুড়ো হয়ে যাওয়া,
অব্যবহারে গায়ে শ্যাওলা পড়া,
এমন নানান আকারের কষ্ট গুলোকে খুব যত্নে
হাতের তালুতে তুলে তুলে এক করেছি।

কিছু কষ্ট তো হঠাত এমন অযাচিত মনোযোগ আর আদর পেয়ে
কেঁদেই বুক ভাসালো।আবার কিছু আছে ভীষন অভিমানী।
আদর করে ওদের আনা গেলো না।
শেষ মেষ টেনে হিঁচড়ে উঠোনের মধ্যিখানে ছুঁড়ে ফেললাম।
মোটামুটি সব টা যখন শেষ হয়ে আসছে বলে মনে হলো
তখনই হঠাত হৃতপিণ্ডের ঠিক মাঝখানে
লাল টকটকে কিছু একটা জ্বলজ্বল করে উঠলো।
চমকে উঠলাম। দেখেই বোঝা যায় এর বয়স কম,
খুব তাজা কোন কষ্ট,
অথচএকদম চিনতে পারছি না।
নতুন কোন কষ্ট....! কি হতে পারে?
ভাবতে ভাবতে আনমনে ওর গায়ে আঙ্গুল ছোঁয়ালাম।
আর কি ভীষন এক ঝাঁকুনি দিয়ে শরীরটা অবশ হয়ে এলো।
ঠোঁট দুটো কেমন নীল হয়ে ছাই রঙ নিলো....
মূহুর্তে চিনলাম ওকে,
নিশ্বাসের আসা যাওয়ার মাঝেই যার বসবাস
তাকে ভুলি কি করে
কি করে ভুলি তোমায়.......?





অপচ্ছায়া
রাহনুমা নূর


শুনানী চলছে। বাদী বিবাদী দুপাশে
মুখোমুখি দাঁড়িয়ে দাঁত মুখ খিচাচ্ছে।
বের হয়ে আয় দেখাবো মজা।
আদালত কক্ষের এককোণে দাঁড়িয়ে শর্মিলা ভাবছে
সত্যি কি সুবিচার হবে? 

একটা প্রাণ কেড়ে নেয়ার বিপরীতে আরেকটা প্রাণ ঝরবে।
বিনাশ, প্রতিশোধ, ধ্বংস আর রক্তের বদলা
সেই সৃষ্টির আদি থেকে আজ পর্যন্ত
এর কোন বিবর্তন ঘটেনি।
ডাইনোসারের হাড় মিউজিয়ামের শোভা বর্ধক
নানান প্রজাতির প্রাণি এখন শুধুই ফসিলে মেলে
শুধু মানুষ রয়ে গেলো সেই একই রুপে,
নিসঠুরতার জ্বলজ্বলে মেডেল
তার গলা থেকে পা অবধি জড়ানো।
এক মাস আগে বাড়ি ফেরার পথে নিজ চোখে
সে কিরণ কে মারতে দেখেছে। অথচ খুনির উকিল
কি চমৎকার এলিবাই দাঁড় করালো।
ওর বয়ান কোন থই পেলো না। সেই থেকে
ভয়ে হাত পা পেটের ভেতর সেঁটে পড়বার দশা।
সে কি! ও পাশের লোকটা এভাবে চাইছে কেন?
শর্মিলার আল জিভটা শুকিয়ে খটখটে
সত্য না অসত্য কোনটার সাথে থাকলে বিপদ কমে
বলতে পারে কেউ? না লোকটা সত্যি ওকেই দেখছে।
কপালের শিরাগুলো দপদপ করে
বিপদের সাইরেন বাজাচ্ছে।
হায় মানুষ তুমি আর তোমার হিংস্রতার
ছায়া হয়েই কাটবে এ বেলা।
পেছনে ঘাড় ফেরাতেই দ্রুত সরে পড়লো
কোনো এক অপচ্ছায়া।







জীবন নদীর ওপারে
রাহনুমা নূর 


তাসের পাতার মতন সময়টা বদলাচ্ছে দ্রুত
ইচ্ছের ঘুড়ি নাটাই ছিঁড়ে পালিয়েছে
কোনো নাম না জানা রাজ্যে ;
লবন বা চিনির আলাদা স্বাদ অথবা গন্ধে
এখন কি বা এলো গেলো ।
এমন এক গোধূলি বেলায় কি মনে পড়ে
প্রেয়সীর গাঢ় চাহনি বা চুরির রিনিরিনি?
বহু পুরনো সময়ের ধুলো ঝেড়ে কি উঁকি দেয় কোন মুখ ?
খুঁজে ফেরো কারো অস্তিত্ব ?
খুব আদরে কাঁধে রাখা হাত ,
দরজার কপাটের আড়ালে লুকানো লালিমা
কল কাকলিতে মুখরিত বাড়ির আঙ্গিনায়
ঝলমলিয়ে ওঠা মিষ্টি রোদ ;
বেহালার গাঢ় করুন সুরে উদাস করা সন্ধ্যা ,
বুকে জোয়ার ভাটার টান;
ধোঁয়া ওঠা ভাতের ওমে খুঁজে ফেরো
গুম হওয়া ভালোবাসা আর আদর?
সময়ের হাতে হাত রেখে কতটা পথ পাড়ি দিলে তুমি -
আর কতটা পথ বাকি ?
দেখো, আকাশটা কে গিলে খাচ্ছে
কাল কেউটে মেঘের বখাটে ছেলেরা ।
উঠোন জুড়ে শুধু মুখোশ পরা হারিকেন নিজেই নিজের তাপ নিচ্ছে ।
জং ধরেছে মনের দরজার খিলে ,
অতীত আর বর্তমানের হিসেবের খাতায়
চলছে উঁই এর ঢিম তাল নৃত্য।
এক্ টু দূরে শুন্য খাঁচায় এক চিলতে চাঁদের আলো হঠাৎ এসে থমকে দাঁড়ায় ;
এ যেন দীর্ঘ রাত্রি শেষে ক্লান্তিতে খানিকক্ষন ঝিমিয়ে নেয়া
ক্যানভাসে গাঁথা মলিন হাসিটি ফিসফিস করে কি
বলে গেলো কিছু ...?
মৃত্যুর শিশিরে ভেজা চোখের পাতায়
আজ ধূসর হাহাকার ।








আমার মুক্তির আলোয় আলোয়
রাহ্‌নুমা নূর
=========================
আকাশের করিডোরে মেঘের হুটোপুটি
একদল মেঘ চি ই ই ই সুরে খেলছে বউ চুরি
আবার আরেক দল মেতেছে গোল্লাছুটে।
এক কোণে কিছু তরুন রোমিও গিরগিটির
মতন রঙ বদলে কিশোরী র মন রাঙাতে ব্যস্ত।

ধ্রুব বিশাল বটের শেকড়ে গা এলিয়ে
আনমনে কচি ঘাসের ডগা চিবুতে চিবুতে
আকাশ দেখছে।
সীমাহীন আকাশে মেঘেদের বাকবাকুম ছোটাছুটি
আর নানান ফিতেতে চুল বেঁধে
মেঘ বালিকাদের লাস্যময় ঢেউ তুলে ঘুরে বেড়ানো
এ সবই তার বড় চেনা, খুব আপনার।
মানুষ কি কখনো মেঘের মতন
বাধাহীন হতে পারে?
কোথায় যেন অদৃশ্য সব সুতোর টান
মাঝে মাঝে নিজকে হাজার সুতোয় ঝোলানো
পাপেট মনে হয়।
হাঁটছে, খেলছে, গাইছে , সইছে
সবই যেন কারো আঙুলের ইশারায়।
সবটাতেই নিয়ন্ত্রন, সবটাতেই নিষেধের কাঁটাতার
শুধু ওই আকাশেই আছে মুক্তি,
ধ্রুব চোখ বুজে মনের আকাশে মেঘের ডানায় ভেসে
খুঁজে ফিরছে স্বাধীনতা।






কাঁচ ভাঙ্গানো দিন 
  রাহ্‌নুমা নূর

অবশেষে দূরের কালো পাহাড়ের গায়ে সূর্য উদিত হলো ,
জংলী ফুলের মৌ মৌ গন্ধ ভরা বাতাসে মাতাল প্রকৃতি।
সূর্যাস্তের লালিমায় রাঙা বৌয়ের রঙে সাজা আকাশটাকে ,
তুমুল চুম্বনের ঝড় তুলে হরণ করছে কোন দুরন্ত প্রেমিক ।
শিশির ভেজা ঘাসের ডগাটি খোলা তলোয়ারের মতন
মুখিয়ে আছে শেষ বিরহের সুতো কাটতে ।
হৃদি ক্লান্ত পায়ে ঘোর লাগা চোখে হেঁটে চলেছে ,
রংধনুর সাতটি রঙ্গে রাঙানো তার আভরণ।
গাছের উঁচু ডালটি মাথা নুইয়ে যেন অভিবাদন জানালো ।
নিঃশব্দে বয়ে যাওয়া নদীটি ফিসফিস করে
করুণ লয়ে গাইছে পাড় ভাঙ্গার গান ।
কি পেলো , কি হারালো , কার চোখের কাজল হতে গিয়ে
শুধুই আঁচল পেতে সুখের মোড়কে দুঃখ কুড়ালো।
মেহেদীর লাল রঙে কার গেরস্থালীর ভাড়ার পুড়লো ;
কে খবর রাখে তার ? কে আর দিনের আলোয়
পরম মমতায় কুয়াশা মাখা শিশির কুড়োয় ।
চারপাশে ছড়িয়ে আছে সারি সারি ঘর , কিছু জানালা বিহীন
আবার কোনোটায় শুধুই হা করা গরাদটানা জানালা ।
সেই গরাদের ফাঁক গলে এক টুকরো রোদের জিলাপী
এদিক ওদিক ছুটতে গিয়ে শুন্য ঘরেই হোঁচট খেলো ।
সু্রের ঢেউয়ে জড়িয়ে পড়া আর্ত চিৎকার গুলোকে
পেছনে মাড়িয়ে শুধুই ভেসে চলার দিন আজ ।
বিপুল প্রানের আলিঙ্গনে ওম ওম সুখ
গায়ে জড়িয়ে পাড়া বেড়ানোর দিন।
আজ হৃদির নতুন ভোরের নরম আলোতে লতিয়ে ওঠার দিন ।







সেই তুমি
রাহ্নুমা নূর

আমায় না বলে কিচ্ছু করা হয়ে উঠতোনা তোমার।
সকালে উঠেই শুভ সকাল দিয়ে দিন শুরু হতো
শেষ হতো চুমুতে। এত বাধ্যগত , শান্ত, সৌম্য ছিলে তুমি
যে খুব ভয় হত কেউ যদি ঠকিয়ে দেয় তোমায়।
অন্যদিকে,সাধারণ আমি, দুবেনী আর কপালে টিপ ছিলো সর্বোচ্চ সাজ।

 তাই মনে মনে ভাবতাম এত কি পুণ্য করেছি
যে তোমায় পেয়েছি ; সব কিছু হাল্কা করে নেয়াতে তোমার জুড়ি ছিলোনা
হঠাৎ পকেট ফাঁকা জেনেও রিক্সা ধরিয়ে বেড়াতে
যাওয়া থেকে শুরু করে আমার বাবার রক্ত রাঙ্গা চোখের সামনে পড়ে
কোন রকম না ঘাবড়িয়ে নোট দিতে আসার অভিনয় , 

আমাকে মোহ মুগ্ধ করত। 
মুগ্ধ হতাম তোমার কণ্ঠে , তোমার ঠোঁট টেপা হাসিতে
মিথ্যে লুকোনোর ব্যর্থ চেষ্টার পর নত চোরা চাহনীতে ,
এমনকি তোমার হাই দেয়াটা পর্যন্ত ছিলো আশ্চর্য সুন্দর।
আমার সব কিছুতেই ছিলো তোমার পূর্ণ মনোযোগ ।
সকালে কি খেলাম, রাতে ঘুম হয়েছিলো কিনা,
মুখের ব্রণ টা টাটায় কিনা আরো কত কি !
তুমি বলতে, আর বাড়ি এসে আমি ভাবতাম,

 কি পুণ্যে তোমায় পেলাম।
অথচ আজ কতটা দিন ,মাস, বছর পেরোলো আমায় খুঁজলেনা তুমি।
সেই তুমি, যে আমায় ছাড়া পুরো একটা সিঙ্গারা
খেতে চাইতে না । কখনো যদি কলেজে না আসা হতো
অস্থির হয়ে পায়চারী করতে বাড়ির সামনের রাস্তায়,
অপেক্ষা করতে কখন বারান্দায় এসে দাঁড়াই ।
সেই তুমি, যে আমার জ্বর হয়েছিলো বলে
সারাদিন না খেয়ে কাটিয়েছিলে,
আমি খারাপ রেজাল্ট করায় নিজের সার্টিফিকেট
ছিঁড়ে কুটিকুটি করেছিলে।
আজ সেই তুমি স্যূট টাই পরে নিপাট ভদ্রলোকের মতন 

নয়টা পাঁচটা অফিস করো। 
অবসর সময়ে গোলাপের মতন ফুটে থাকা বউ নিয়ে
সিনেমা দেখো বা শপিং করো। কোথাও হঠাত মুখোমুখি হলে
আমাকে চেনা আর হয়ে ওঠেনা তোমার।
আর আমি, অবাক বিস্ময়ে ভাবি হয়ত ও তুমি
নও, তোমার মতন আর কেউ, আর কোন পুরুষ।
কিংবা নিপুন সুতোয় প্রেম বুনে যাওয়া
আর কোন প্রেমের কারিগর।
সে কিছুতেই তুমি নও । তুমি নও ।

No comments:

Post a Comment

প্রেমের কবিতা

আমাকে ভালোবাসার পর – হুমায়ুন আজাদ আমাকে ভালবাসার পর আর কিছুই আগের মত থাকবে না তোমার, যেমন হিরোশিমার পর আর কিছুই আগের মতো ন...