Wednesday, January 29, 2020

সুবোধ সরকার



একজন টেররিস্টের চিঠি – সুবোধ সরকার
 
প্রিয়তমাসু
আমি তিনদিন খাইনি। কেউ কোনও খাবার দিয়ে যায়নি।
কী করে দেবে? গুহার বাইরে প্রচন্ড বরফ পড়ছে।
যে কোনও দিন আমি গুলিতে মারা যাব। যে কোনও দিন
তুমি টিভির পর্দায় আমার মুখ দেখতে পাবে।আমি
গুহার ভেতর সারারাত কম্পিউটরের সামনে বসে। কতদিন
আমি বকুল ফুলের গন্ধ পাইনি। কতদিন আমি গরম রুটি
খাইনি। কতদিন আমি তোমার ঘাসে হাত দিইনি।
কালো ঘাস। আঃ! ভাবলেই চে গুয়েভারা ছুটে বেড়ায়
শরীরে। স্টালিনকে হাতের মুঠোয় ধরে বসে থাকি।
তার মুখ দিয়ে গরম বেরিয়ে আসে। আঃ, গরম।
আমার স্টালিন ভালো আছে। তোমার সাইবেরিয়া?
হা,হা,হা… এখানে কেউ আমার জন্মদিন কবে
জানে না।
আমি পড়াশুনায় ভাল ছিলাম। অধ্যাপক বাবার ছেলে।
কম্পিউটরে আমার চাইতে কেউ ভাল ছিলনা। আজ আমি
গুহায় বসে আছি।কিন্তু কেন? প্রিয়তমাসু,মাই লাভ,তুমি
এর উত্তর পাবে যদি অত্যাচারের ইতিহাস পড়ো। কত হাজার
কোটি ডলার খরচ করে ওরা গরিবকে আরও গরিব
করে চলেছে। ১১ বছরের একটি
বালককে একটি পাউরুটি কিনে দিয়ে আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম,
তোর কি হয়েছে রে? সে গোগ্রাসে পাউরুটি কামড়
দিয়ে বলেছিলঃ আমার বাবা-মাকে ওরা পুড়িয়ে
দিয়েছে,জ্যান্ত। ছেলেটা খেতে খেতে কর গুনছিল,
বাবা-মা, দুই ভাই, তিন বোন…এক,দুই,তিন,চার,পাঁচ…
হ্যাঁ, এগারো জন। ছেলেটার নাম বলব না। কে খোঁজো। আজীবন
খুঁজে যাও।
প্রিয়তমা, আমাকে আর বেশি দিন ওরা বাঁচিয়ে রাখবেনা।
তার আগেই আমি ওদের দু’দুটো ঘাঁটি উড়িয়ে দেব।
ওদেরতো পুরোপুরি উড়িয়ে দেয়া যায়না, ওরা
আবার জন্মায়, আবার গনতন্ত্র বানায়, আবার পার্লামেন্টে
যায়।আবার প্রেস মিট করে। একটা সত্যি কথা লিখি,
ওরা গনতন্ত্র দিয়ে যা করায়, আমরাও AK-47 কে,
দিয়ে তাই তাই করাই। ওদেরটা দোষ নয়, আমাদেরটা দোষ।
আমি মারা যাব। তার আগে একবার, যদি
একবার তোমাকে দেখতে পেতাম। তোমার হাত ধরতে
পারতাম।যদি একবার তোমার ভেতরে ঢুকতে পারতাম, যেভাবে
বরফ ঢোকে গুহায়,যেভাবে শিকড় ঢোকে পাথরে,যেভাবে
ভাইরাস ঢোকে কম্পিউটরে।
আজ আমি একজন টেররিস্ট। হয়তো এটাই আমার শেষ চিঠি।
বলতো,কেন আমার মত ছেলে টেররিস্ট হবে?
কেন আমি ঘর-বাড়ি ছেড়ে,মায়ের হাতের খাবার ছেড়ে,
ভাল চাকরী ছেড়ে;গুহার জীবন,জঙ্গলের জীবন,
বরফের জীবন বেছে নিলাম?
আমি মাতাল হতে পারতাম।লম্পট হতে পারতাম। একজন
মাতালকে মেনে নেয় সমাজ। একজন লম্পটকে মেনে নেয় রাষ্ট্র।
একজন মাফিয়া বিধায়ককে মেনে নেয় এসেম্বলি। কিন্তু
একজন টেররিস্টকে মেনে নেয়া যায়না।
কতদিন তোমার স্নান করা চুলের গন্ধ পাইনি।
চোখ ভরে আসে জলে। পাউরুটি খাওয়া শেষ করে
১১ বছরের ছেলেটি বলেছিল,আর আছে? আমি আর
একটা পাউরুটি কিনে দিয়ে বলেছিলাম; শোন্ তুই বড় হয়ে
কী করবি? সে বলেছিলঃ বদলা নেব।
ছেলেটার মুখ ভেসে ওঠে যেই মনে হয় আমার সামনে
অনেক অনেক কাজ। অনেকগুলো খারাপ কাজ। ভুল
বললাম,অনেক,অনেক,ভালো কাজ।
আমাকে ক্ষমা করো। মা’কে একবার দেখে এসো। বোকা মেয়েটা
আমার মা হয়ে কোনও অন্যায় করেনি।
ইতি-
কোন নাম নেই
পুনশ্চঃ আমি মরে গেলে, আমাকে তুমি ‘আকাশ’ বলে ডেকো।



ঘুষ – কবি সুবোধ সরকার

রবীন্দ্ররচনাবলীর নবম খন্ড দিয়ে চাপা দেওয়া সুইসাইড নোট,
ছেলেকে লেখা  | লিখে, হাতে ব্লেড নিয়ে
বাথরুমে ঢুকেছিলেন মাস্টারমশাই
দুপুরবেলা কাজের লোক দরজার তলা দিয়ে
রক্ত আসছে দেখে চিত্কার করে ওঠে |
ছেলেকে লেখা এই তার প্রথম এবং শেষ চিঠি :
‘অরণি,
আমি বিশ্বাস করি সন্তান পবিত্র জলের মতো
যদিও তোমার সঙ্গে আমার সম্পর্ক ভালো নয়
তবু তোমাকেই লিখে রেখে যাই
গত দু’বছর তোমার মায়ের চিকিত্সাবাবদ
আমার যত্সামান্য সঞ্চয় আপাতত নিঃশেষিত
চিকিত্সার ব্যয়ভার আমি আর নিতে পারছিলাম না |
জীবনে তোমার টাকা ছুঁইনি, মরেও ছোঁব না  |
আমি আজীবন ছাত্র পড়িয়েছি, জ্ঞানত কোনও অন্যায় করিনি |
গত মাসে আমার স্কুলে এক অভিভাবক এসে
ঝুলোঝুলি করেন তাঁর ছেলেকে নেবার জন্য
আমি প্রথম দিন ফিরিয়ে দিই
দ্বিতীয় দিন ফিরিয়ে দিই
তৃতীয় দিন পারিনি | তিনি আমাকে একটা বড় খামে
তিরিশ হাজার টাকা দিয়ে চলে যান |
সেই টাকায় এই মাসে তোমার মায়ের চিকিত্সা চলছে
জানি না তিনি বাড়ি ফিরবেন কি না কোনও দিন
ফিরলে বোলো, পৃথিবীতে আমার বেঁচে থাকার অধিকার চলে গেছে |
ইতি বাবা’
যখন সারাটা দেশ দাঁড়িয়ে আছে টাকার ওপর
তখন রবীন্দ্ররচনাবলী দিয়ে চাপা দেওয়া একটা সুইসাইড নোট |
হাসপাতালে গাছের তলায় গা ছমছম করছিল
এগিয়ে গেলাম সাদা কাপড়ে ঢাকা মাস্টারমশাইয়ের দিকে
একটু বেরিয়ে থাকা পা দুটোর দিকে——
ওই একটু বেরিয়ে থাকা পা দুটি যেন ভারতবর্ষের শেষ মাটি |










শাড়ি – 

সুবোধ সরকার

বিয়েতে একান্নটা শাড়ি পেয়েছিল মেয়েটা
অষ্টমঙ্গলায় ফিরে এসে আরো ছটা
এতো শাড়ি একসঙ্গে সে জীবনে দেখেনি।
আলমারির প্রথম থাকে সে রাখলো সব নীল শাড়িদের
হালকা নীল একটা কে জড়িয়ে ধরে বলল, তুই আমার আকাশ
দ্বিতীয় থাকে রাখল সব গোলাপীদের
একটা গোলাপীকে জড়িয়ে সে বলল, ‘ তোর নাম অভিমান’
তৃতীয় থাকে তিনটি ময়ূর, যেন তিন দিক থেকে ছুটে আসা সুখ
তেজপাতা রং যে শাড়িটার, তার নাম দিল বিষাদ ।
সারা বছর সে শুধু শাড়ি উপহার পেল
এত শাড়ি সে কি করে এক জীবনে পরবে  ?
কিন্তু বছর যেতে না যেতেই ঘটে গেল সেই ঘটনাটা
সন্ধের মুখে মেয়েটি বেরিয়েছিল স্বামীর সঙ্গে, চাইনিজ খেতে ।
কাপড়ে মুখ বাঁধা তিনটি ছেলে এসে দাঁড়ালো
স্বামীর তলপেটে ঢুকে গেল বারো ইঞ্চি
ওপর থেকে নীচে। নীচে নেমে ডান দিকে ।
যাকে বলে এল ।
পড়ে রইলো খাবার, চিলি ফিস থেকে তখনও ধোঁয়া উড়ছে ।
-এর নাম রাজনীতি, -বলেছিল পাড়ার লোকেরা ।
বিয়েতে একান্নটা শাড়ি পেয়েছিল মেয়েটা
অষ্টমঙ্গলায় ফিরে এসে আরো ছটা
একদিন দুপুরে শাশুড়ি ঘুমিয়ে, সমস্ত শাড়ি বের করে
ছতলার বারান্দা থেকে উড়িয়ে দিল নীচের পৃথিবীতে ।
শাশুড়ি পড়িয়ে দিয়েছেন তাকে সাদা থান
উনিশ বছরের একটা মেয়ে সে একা ।


কিন্তু সেই থানও এক ঝটকায় খুলে নিল তিনজন, পাড়ার মোড়ে
একটি সদ্য নগ্ন বিধবা মেয়ে দৌড়াচ্ছে আর চিৎকার করছে, ‘বাঁচাও’
পেছনে তিনজন, সে কি উল্লাস, নির্বাক পাড়ার লোকেরা ।
বিয়েতে একান্নটা শাড়ি পেয়েছিল মেয়েটা
অষ্টমঙ্গলায় ফিরে এসে আরো ছটা….








পলাশপুর – 

কবি সুবোধ সরকার

পলাশপুর থেকে পড়তে আসা ছেলেটির গলায় তুলসীর মালা
প্রথম ক্লাসের পর জিনস্ পরা একটি মেয়ের সে কী হাসি !
রাত্রে ছেলেটি চিঠি লিখল, শ্রীচরণেষু মা,
আমি ভালোভাবে হোস্টেলে উঠিলাম, কিন্তু
তুলসীর মালা খুলিয়া রাখিয়াছি  |
এক সপ্তাহ বাদে জিনস্ পরা মেয়েটি
ছেলেটির চারটে বোতাম একটানে ছিঁড়ে দিয়ে বলল,
এ যে গত শতাব্দীর জামা | আবার সেই হাসি
রাত্রে লিখল, শ্রীচরণেষু মা, কিছু টাকা প্রয়োজন
নতুন জামা কিনিতে হইবে |
অফ্ পিরিয়ডে ত্রৈলোক্যনাথের ডমরু চরিত পড়ছিল
ওটা কেড়ে নিয়ে একটা পেপারব্যাক ধরিয়ে
মেয়েটি হাসতে হাসতে চলে গেল  |
পলাশপুরের ছেলেটি এই প্রথম মেয়েটিকে দেখল
একটি মেয়ের চলে যাওয়া দেখল  |
রাত্রে চিঠি, শ্রীচরণেষু মা, আমি হ্যারল্ড রবিন্স পড়িতেছি
পলাশপুরে কি বৃষ্টি আসিতেছে ?
কতদিন বকফুল ভাজা খাই নাই  |
জিনস্ পরা, শাড়িপরা, স্কার্টপরা, সালোয়ার পরা চারজন
একদিন ওকে জোর করে নিয়ে এল একটা বাড়িতে
খুব সুন্দর একটা বাড়িতে
স্টিরিওতে বেজে উঠল গমগমে জ্যাজ, আফ্রিকান ড্রাম
পাশের বাড়ি থেকে চার জন নর্থ স্টার এসে দাঁড়াল
অন্ধকার করে শুরু হল নাচ
এবার সবাইকে নগ্ন হতে হতে, পলাশপুর, পলাশপুর
কাম অন, আমি, আমি, টাচ মি হিয়ার !
অন্ধকারে একটা চাপা কান্না শোনা গেল
সুইচ অন, দেয়ালে পিঠ দিয়ে
নগ্ন পলাশপুর কাঁদছে
তার পুরুষত্ব পান করছে সালোয়ার কামিজ
যেন প্রাচীন গ্রিসের কোনও ছবি |
সেদিন রাত্রে সে লিখল, শ্রীচরণেষু মা, কেমন আছ ?
আমি আজ তোমার জন্য কাঁদিতেছিলাম, গ্রীষ্মের ছুটিতে
বাড়ি যাইব না, অনেক গ্রন্থ এখনো পড়া হয় নাই |
পলাশপুর, আমিও তোমার মতো গ্রামের ছেলে
তুমি পড়তে এসেছ, আমি পড়াতে
তোমার মতো আমিও আমার মাকে লিখি
শ্রীচরণেষু মা, টাকা পাঠাইলাম, ঠিকমতো ওষুধ কিনিও
গ্রীষ্মের ছুটিতে বাড়ি ফেরা সম্ভব নয়
এখনো অনেক গ্রন্থ পড়া হয় নাই |







রূপম – 

সুবোধ সরকার

রূপমকে একটা চাকরি দিন—এম. এ পাস, বাবা নেই
আছে প্রেমিকা সে আর দু’-এক মাস দেখবে, তারপর
নদীর এপার থেকে নদীর ওপারে গিয়ে বলবে, রূপম
আজ চলি
তোমাকে মনে থাকবে চিরদিন
রূপমকে একটা চাকরি দিন, যে কোন কাজ
পিওনের কাজ হলেও চলবে |
তমালবাবু ফোন তুললেন, ফোনের অন্য প্রান্তে
যারা কথা বলেন
তাদের যেহেতু দেখা যায় না, সুতরাং তারা দুর্জ্ঞেয় |
তমালবাবু মামাকে বললেন কূপমের একটা চাকরি দরকার
মামা বললেন কাকাকে, কাকা বললেন জ্যাঠাকে,
জ্যাঠা বললেন
বাতাসকে |
মানুষ জানলে একরকম, কিন্তু বাতাস জানলে
প্রথমেই ছুটে যাবে দক্ষিণে, সে বলবে দক্ষিণের অরণ্যকে
অরণ্য বলবে আগুনকে, আগুন গেল আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে
আলিমুদ্দিন ছুটল নদীকে বলার জন্য
নদী এসে আছড়ে পড়ল
উপকূলে, আসমুদ্র হিমাচল বলে উঠল
রূপমকে একটা চাকরি দাও, এম. এ. পাশ করে বসে আছে ছেলেটা |
কয়েক মাস বাদের ঘটনা, আমি বাড়িফিরছিলাম সন্ধেবেলায়
গলির মোড়ে সাত-আটজনের জটলা দেখে থমকে দাঁড়ালাম
জল থেকে সদ্য তুলে আনা রূপমের ডেডবডি
সারা গায়ে ঘাস, খরকুটো, হাতের মুঠোয়
ধরে থাকা একটা এক টাকার কয়েন |
পাবলিক বুথ থেকে কাউকে ফোন করতে চেয়েছিল, রূপম?
ভারত সরকারের এক টাকা কয়েনের দিকে আমার চোখ |
সারা গায়ে সবুজ ঘাস, ঘাস নয়, অক্ষর
এম. এ. পাস করতে একটা ছেলেকে যত অক্ষর পড়তে হয়
সেই সমস্ত ব্যর্থ অক্ষর ওর গায়ে লেগে আছে |
একটা ছেলেকে কেন আপনারা এম. এ. পড়ান, কোন আহ্লাদে আটখানা
বিশ্ববিদ্যালয় বানিয়েছেন? তুলে দিন
এই কথাগুলো বলব বলে ফোন তুললাম পবিত্র সরকারের
ফোন বেজে উঠল, ফোন বেজে চলল, ফোন বেজেই চলল
২০ বছর ধরে ওই ফোন বেজে চলেছে, আরো কুড়ি বছর বাজবে |
বাতাস বলছে অরণ্যকে, অরণ্য চলেছে নদীর দিকে
নদী উপকূল থেকে আছড়ে পড়ে বলল :
রূপমকে একটা চাকরি দিন |
কে রূপম?
রূপম আচার্য, বয়স ২৬, এম. এ. পাস
বাঁ দিকের গালে একটা কাটা দাগ আছে |







আমি ফিরোজা, 

একটি ভারতীয় মেয়ে – 

সুবোধ সরকার

হিন্দু ভারত, জৈন ভারত, বৌদ্ধ ভারত, খ্রিস্টান ভারত,
এতগুলো ভারতের মাঝে দাঁড়িয়ে
আমি ফিরোজা একটি ভারতীয় মেয়ে ।

আপনারা বলতে পারেন, আমি কি দোষ করেছি ?
পৃথিবীর যে কোন দেশের
যে কোন একটি মেয়ের মতো আমি একজনকে
ভালবেসেছিলাম ।
প্রথম যেদিন ওর চোখে চোখ পড়েছিল আমার
আমি জানতাম না ও কে
বিকেল বেলার কলেজ ক্যাম্পাসে যে আলো এসে পড়েছিল
ওর চুলে, তার কোথাও লেখা ছিল ওর ধর্ম ।

হিন্দু ভারত, জৈন ভারত, বৌদ্ধ ভারত, খ্রিস্টান ভারত
আপনারা বলতে পারেন আমি কি দোষ করেছি ?
আমি যেদিন হাতে মোমবাতি নিয়ে উঠে দাঁড়ালাম
আমি যেদিন বলে ফেললাম, আমি শরিয়ৎ মানি না
আমি যেদিন বুঝিয়ে দিলাম ভারতবর্ষের মাটিকে
মা বলে জানি, ভারতবর্ষের আকাশকে আকাশ
সেদিন থেকেই শুরু হল অত্যাচার ।
হিন্দু ভারত, জৈন ভারত, বৌদ্ধ ভারত, খ্রিস্টান ভারত
আপনারা বলতে পারেন, আমি কি দোষ করেছি
ছেলেটাতো আপনাদের
সে কি দোষ করল ?
আমাকে ভালবাসাই তার দোষ ?
ছেলেটার বাড়িতে আপনারা ঢিল ছুঁড়লেন
পার্সেল করে ছেঁড়া চটি পাঠালেন
ওকে হাতে মেরে, ভাতে মেরে
বাড়ির দেয়ালে বড় বড় করে লিখে দিলেন,
‘এসব চলবে না।’
লজ্জা করে না আপনাদের, আপনারা এগিয়ে থাকা মানুষ
এম এ পাশ, বি এ পাশ, ডাক্তার, এঞ্জিনিয়র
আমলা, মাস্টার, আপনারাই গণতন্ত্র নিয়ে ভাষণ দেন
আর প্রয়োজন মতো
গণতন্ত্রের টুঁটি টিপে ধরেন ।
ধিক আপনাদের !
আমি কি ছোটবেলায় ভোরের আলোয় সরস্বতী পুজোর ফল
  কাটিনি ?
আমি কি স্কুলের বারান্দায় বসে
রাত জেগে আলপনা দিইনি ?
আমি কি পাশের বাড়ির হিন্দু বাবার জন্য রক্ত দিইনি ?
ওদের বাড়ির উঠোনে বসে ওদের ছেলেদের অ আ ক খ
  শেখাইনি ?
আমি আরবি শিখিনি, ফারসি শিখিনি, উর্দু শিখিনি
বাংলাই আমার ভাষা, এই ভাষা আমার ভাত, আমার রুটি
আমার চোখের কাজল, আমার পায়ের ঘুঙুর ।
এই ভাষা আমার গোপন চিঠি, যার অক্ষরে অক্ষরে লেগে আছে
আমার চোখের জল ।
আমরা যেদিন বিয়ে করি
সেদিন কফিহাউস গিয়েছিলাম, ও সেদিন
আমাকে ঝোলা ভর্তি করে রবীন্দ্রনাথ কিনে দিয়েছিল
হাওড়া স্টেশনে পৌঁছে কানে কানে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন
ফিরোজা, তুমি আমার মৃন্ময়ী, তুমি আমার লাবণ্য
তুমি আমার সুচরিতা ।
সেদিন রাত্রে কি হয়েছিল জানি না
কি ঘটেছিল ওদের বাড়িতে, কি ঘটেছিল ওদের পাড়ায়,
 কি করেছিল ওদের
বাবাকাকা – সেটা আজও আমি জানি না
কিন্তু তার পরের দিন ওকে আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি
ও কোথায় চলে গেল আমি জানতে পারিনি ।
এই আপনাদের ভারতবর্ষ ?
এই আমাদের ভারতবর্ষ ?
আমি একজন সাধারণ মেয়ে
অথচ বাড়িতে পাড়ায় অফিসে পুজোর প্যান্ডেলে
বিয়ে বাড়িতে অন্নপ্রাশনে এখনো আমাকে নিয়ে ফিসফাস
ডাক্তারের কাছে যাই – ফিসফাস
কলেজে ঢুকি – ফিসফাস
বাজারে যাই – ফিসফাস
যে হাউসিং –এ থাকি সেখানেও চলতে থাকে অবিরাম লুকোচুরি ।
ওটা লুকোচুরি নয়, ওটা ফিসফাস নয়
ওটা আপনাদের গভীরে লুকিয়ে থাকা এক-একটা সুপ্ত গুজরাট ।
যদি আপনাদের হৃদয়
বড় না করেন
আকাশের দিকে আপনারা যদি না তাকান
এই পোড়া দেশে আরও, আরও, আরও
অনেকগুলো পোড়া গুজরাট তৈরি হবে ।










এক কন্সটেবলের চিঠি – 

সুবোধ সরকার

থানার বড়বাবু আমায় বলতো পাঁঠা
ছােটবাবু পেছনে লাথি মেরে বলতাে, যা তাে সিগারেট নিয়ে আয়
যেদিন মাইনে পেতাম, আমার দাদা এসে
সব টাকা কেড়ে নিয়ে যেত
আর তুমি, তােমার সঙ্গে আমার ১৫ বছর বয়সে বিয়ে হল
একদিনও আমাকে ভালােবাসলে না, আদর করলে না।।
গােলাপ টোলাপ না, আমার রাইফেল দেখতে খুব ভালাে লাগত
কী লম্বা, মুখটা ছুঁচলাে, গুডুম গুডুম
ভয় লাগত, ভালােও লাগত।
বড়বাবু যখন কোমর থেকে রিভলবার খুলে টেবিলে রাখত
আমি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতাম, কী সুন্দর দেখতে!
কিন্তু কী যে হল সেদিন সন্ধেবেলায়, কী করে ফেললাম।
কোথা থেকে কে যেন একটা মেয়েছেলেকে ধরে আনল
বড়বাবু আমাকে দিয়ে মদ আনাল
ছােটবাবু আমাকে বলল যা মেয়েছেলেটার ঘরে যা
আমি গেলাম, সত্যি বলছি তােমাকে, তুমি আমার বউ
মেয়েছেলেটার গায়ে কী জোর, আমি পারছিলাম না
তারপর বড়বাবু এল, মেয়েছেলেটার ঘাড়ে মারল
অজ্ঞান হয়ে শুয়ে পড়ল, তারপর আমি ওর কাপড় খুললাম।
পরের পরের দিন কাগজে কাগজে আমার ছবি
মেয়েছেলেটা আমাকেই দেখিয়ে দিল।
তুমি বিশ্বাস কর, তুমি আমার কতদিনের বউ
মাইরি বলছি, আমার মনে মনে ইচ্ছে হয়েছিল
উঠেও বসেছিলাম মেয়ে ছেলেটার বুকের উপর।
হঠাৎ তার মুখটা দেখে কষ্ট হল
একবার চোখ খুলে মেয়েলােকটা আমাকে দেখল
কি চোখে বাবা, আমার গা গুলিয়ে উঠল।
তারপর বড় বাবু আর ছােট বাবু আমাকে সরিয়ে দিয়ে
বলল, তুই একটা ছাগল, যা, গেটে গিয়ে দাড়া
আমি এক ঘন্টা, দুঘণ্টা গেটে দাঁড়িয়ে ছিলাম
আমি দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে বসে পড়েছিলাম টুলে
টুলে বসে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।
তারপর তুমি সব শুনেছ, কাগজে আমার ছবি দেখেছ।
লোকে বলে আমার চাকরি চলে গেছে।
জেল হবে।
কতদিন তোমাকে দেখতে পাবো না।
আমি খুব বোকা বলে তুমি আমাকে একদিনও আদর করনি।
আমি যখন জেলে থাকব, একদিন, অন্তত একদিন।
আমাকে দেখতে এসো।
একটু এঁচোড়ের তরকারি নিয়ে এসো, কত দিন ভালো কোন
খাবার খাইনি। বুড়ো মা-টাকে একটু দেখাবে।
তোমরা ভালো থেকো। তুমি ভালো থেকো।
ইতি
তোমার নিধিরাম




পৃথিবী সুন্দর
সুবোধ সরকার।


পৃথিবী সুন্দর, কিন্তু সব সময় নয়।
তিনদিন খাবার জোটেনি, দণ্ডিতের মতো যে মাতৃহারা বালক
বসে আছে নদীর ধারে, নদী তার কাছে অসহ্য।
পৃথিবী সুন্দর, কিন্তু সবসময় নয়।
গায়ের চামড়া কালো বলে যে বোনের বিয়ে হয়নি
সে একটা সূর্যমুখী ফুলের দিকে তাকিয়ে আছে, বোন, তোর ওই
শূন্য দৃষ্টি আমি চিনি, আমি জানি
তোর আর ফুল ভালো লাগে না।
তবু পৃথিবী সুন্দর, একজন কাঁদতে কাঁদতে বলল।
ভাই তার অন্ধ ভাইকে নিয়ে মাঝরাতের গয়া প্যাসেঞ্জারে বসে আছে
মাঝরাতের পৃথিবী আরো বেশি নিষ্ঠুর
ফিরে এসো, সকালের জন্য অপেক্ষা করো, গয়া তোমরা পৌঁছবেই
একদিন গয়া পৌঁছে তথাগত পায়ে হেঁটে পঞ্জাব গিয়েছিলেন
অথচ সেখানেই শুনি রক্ত আর রক্ত আর রক্ত।
পৃথিবী সুন্দর নয়, কে বলেছে পৃথিবী সুন্দর?
যে মাতৃহারা বালক দণ্ডিতের মতো বসে আছে নদীর ধারে
যদি কোনো নারী সোনার কুঠার নিয়ে উঠে এসে বলেন এটা তোমার?
সে বলবে, মা, সোনার কুঠার দিয়ে আমি কী করব, মা তুমি
আমার সঙ্গে ফিরে চলো, বাবা আজ চাল কিনে বাড়ি ফিরবে।
গরম ভাতের গন্ধ চারিদিকে, আঃ পৃথিবী, তুমি কী সুন্দর!



বেহালার ছেলেটা
সুবোধ সরকার
 
বেহালা কোনও গ্রাম নয়।
বেহালা কোনও উপত্যকা নয়।
বেহালা কোনও শহর নয়।
বেহালা কোনও আঙুরখেত নয়।
রাত সাড়ে দশটায় নক্ষত্রের আলোয় ট্রামভর্তি লোক।
রাত এগারোটায় খিদিরপুরের দিক থেকে পাঁচখানা ৩৭ নম্বর
ছুটে আসছে গোটা খিদিরপুর নিয়ে।
রাত বারোটায় ডায়মন্ডহারবার রোড চলতে শরু করল।
ডায়মন্ডহারবার রোড কীর্তিনাশার মতো ছড়িয়ে পড়ল ভারতবর্ষে।
কয়েক হাজার মাইল দূরে বেহালার ছেলেটা ব্যাট করছে এখন।
শান্ত কিন্তু রাগী
স্থির কিন্তু তেজী
সমাহিত কিন্তু ছটফটে
'মা, দেখ, কী সুন্দর দেখাচ্ছে আমাদের ছেলেটাকে'।
কে বলল কথাটা?
আমি
কে আমি? তারাতলায় থাকো।
না, আমি রাজারহাটে থাকি, আমি বারাসতে থাকি
আমি বহরমপুর, আমি বালুরঘাট, আমি কুচবিহার।
রাত্রি সাড়ে বারোটা। আকাশ থমথমে। ভারতবর্ষের আকাশ
চিরকালই থমথমে। জ্যোৎস্নায় ভরে গেছে ভারতবর্ষ
গরীবের ভারত, অভিজাতের ভারত, দলিত ভারত।
একটা দুরন্ত ছয় মারল ছেলেটা।
জ্যোৎস্না পার হয়ে বলটা গিয়ে পড়ল আসামের জঙ্গলে,
সেখানে তিনজন টেররিস্ট বসে আছে সাইনাইড খাবে বলে
তিনজনই লাফিয়ে উঠল, আঃ মৃত্যু! দাঁড়াও!
আর একটা ছয় দেখে যেতে চাই
জ্যোৎস্না পার হয়ে, পার হয়ে, বল এসে পড়ল এবার
বম্বের ধারাভিতে-এশিয়ার সবচেয়ে বড় বস্তি
তিনজন মারামারি করছিল রুটি তরকা নিয়ে,
থেমে গেল। জোয়ারের মত বেরিয়ে গেল গোটা ঝোপড়ি
খেতে-না-পাওয়া জ্যোৎস্নায় থমকে দাঁড়ানো ভারতবর্ষ।
জ্যোৎস্না পার হয়ে বল এসে পড়ল আহমেদাবাদে
বল জিজ্ঞেস করল, তোমরা কাকে পুড়িয়ে মারছ?
বল এসে পড়ল শ্রীনগরে,বল জিজ্ঞেস করল :
কী হয়েছে তোমাদের, এত বছর ধরে
একই ভুল করে চলেছ তোমরা?
মা, দেখ কী সুন্দর দেখাচ্ছে আমাদের ছেলেটাকে!
কে? কে বলল কথাটা?
আমি? আমি কে?
আমি ধর্ম, আমি অধর্ম, আমি ব্রাহ্মণ, আমি মেথর,
আমি রাস্তা ঝাঁট দিই, আমি ইটভাটায় ইট তুলি
আমি কলেজে পড়ি, আমি জেলখানায়
আমি মাঠে, আমি বস্তিতে, আমি বারোতলায় ...
আমাকে চিনলে না ?
আমি ভারতবর্ষ।
ট্রামলাইন চলে গেছে গরিবের ঘর ছুঁয়ে
অনন্ত নক্ষত্রে ঘেরা ওটাই বেহালা, ওটাই ওর পাড়া
বিদ্যুৎবেগে একটা বল ছুটে যাচ্ছে বাউন্ডারির বাইরে
গ্যালারি নয়, গোটা ভারত বর্ষ উঠে দাঁড়িয়েছে এত রাতে
ধর্ম ভুলে, জাতি ভুলে, দাঙ্গা ভুলে
বলটা কোথায় গিয়ে পড়ল একটু দেখবে বলে।
 
 


বস্তিঘরে হরিণ - সুবোধ সরকার
 
আমার মা বাসন মাজে, আমার বাবা থানায়
আমার মা কাঁদে না আর, রাত্রে ঠোঙা বানায়।
আমার মা খারাপ লোক, আমার বাবা মাতাল
আলো জ্বলে না পাতার ঘরে, ঘরটা কালো পাতাল।
আমার মায়ের বাবু আছে, বাবুটা কি যে করে
কাউকে ছেড়ে কথা বলে না, আমারও হাত ধরে।
বাবুর বাড়ি গিয়ে যখন, টিভিতে দেখি মেয়েরা
হাসছে আর নাচছে, ওরা কী জগৎ সেরা?
ওদেরই শুধু ইচ্ছে আছে, ওদেরই আছে ডানা
আমাদের কী আগুন নেই, আগুন হতে মানা?
আমারও আছে এক মাথা চুল, বস্ত্র আছে শরীরে
সাবান পেলে, শ্যাম্পু পেলে দেখিয়ে দিতাম হিরে।
দুমুঠো ভাত, একটু নুন, একটু বাঁচতে দিন
দেখিয়ে দেব আমরা পারি, আমরাও সব হরিণ।
যে রাজনীতি আমাদেরকে হরিণ বলে থাকে
যে রাজনীতি সন্ধ্যা হলে বাঘের ঘরে ডাকে।
আমরা কেউ হরিণ নই, হরিণ হতে চাই
কিন্তু মা ঠোঙা বানায়, আর বাবাটা থানায়।




স্তন - সুবোধ সরকার 
 
প্রথমবার তোমার স্তন দেখে আমার মনে হয়েছিল
আমি অন্ধ হয়ে যাব।
চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে আমার চোখ
খসে পড়বে আমার হাতে
গনগনে আঁচ,ও আমার জন্য নয়।
যদি মুখে নিই
বাকি জীবন আমি বোবা হয়ে থাকব
যদি হাতে ধরি
দশ আঙুল বেঁকে ছোট হয়ে যাবে
যদি বুকে চেপে ধরি
ফুসফুস থেকে ঘাস বেরিয়ে শরীরে ঢেকে ফেলবে
আমি পোকা হোয়ে বেঁচে থাকব পোকার ভেতরে।
মাত্র ছ’মাস আগে তোমার ফেটে পড়া স্তন দেখে
মনে হয়েছিল আমার কোন নাম নেই,তারিখ নেই,নম্বর নেই
আমি যেন একটি বিস্ফোরক
ভাল এবং খারাপের মধ্যে যোগাযোগ হলেই আমি ফেটে পড়ব।
আমি আর খালি চোখে তোমার স্তনের দিকে তাকাব না।
কিন্তু তাকালাম
বাঁদিকে স্তনে গাঢ় একটা ছায়া ,ঠিক আংটির মতো
ওই ছায়ার নাম-কর্কট
ওষুধের নল,আটকানো ফিতে,ইনজেকশনের দাগ
কাল তোমাকে নার্সিং হোমে যেতে হবে।
আমি অন্ধ হয়ে যাইনি,আমি দেখতে পেলাম
তোমার স্তনের মধ্যে পাপড়ির মধ্যে ঘুমিয়ে রয়েছে ক্যান্সার।
 
 
 
 
কলেজের এক ছাত্রীকে
সুবোধ সরকার 
 
আমার সাথে আমার বাবার সম্পর্ক খারাপ আপনার জন্য
কলেজের সেকেন্ড ইয়ারে উঠেই আমি বুঝতে পারি
জীবনটা মাধ্যমিক পরীক্ষা নয়
ঈশান থেকে এসপ্লানেড পর্যন্ত
একটা বিরাট আয়না
তাতে খাদ্য এবং খাদকের মুখ
কিন্তু দুজনের একজনও জানে না
কে খাবে আর কে খেতে দেবে
কলেজে ঢুকতেই একটি চমৎকার ছেলে এসে দাঁড়িয়েছিল আমার
চৌকাঠে
দুটো স্বপ্নের চোখ, এলোমেলো চুল
হাতে পেঙ্গুইন পেপারব্যাগ
ঠোঁটে সারাক্ষণ বগ্ম্যান, কুরোসোয়া, আইনস্টাইন
কিন্তু একটা ফিল্ম ফেস্টিভাল থেকে আরেকটি ফিল্ম ফেস্টিভালে
পৌঁছতেই বুঝতে পারলাম
আমি আধখাওয়া এক আপেল
এবং চমৎকার সেই ছেলেটি – আমার এক বছরের প্রেমিক
আরেকটি আধখাওয়া আপেলের সঙ্গে বকখালিতে ধরা পড়ল
থানা, পুলিশ, লোকাল কমিটি সব যথাযোগ্য মর্যাদায় পার হয়ে
একটি বৃষ্টির দুপুরে সে আমাকে বলল,
“হাই বেবি, আই রিয়েলি লাভ ইউ
চল্ , এবার আমরা তিনজন মিলে চাঁদিপুর যাব”
চড় কষাতে পারিনি সেদিন
ঘর বন্ধ করে কেঁদেছিলাম
চোখের জলে আপনার গীতবিতানের সাইত্রিশ নম্বর পৃষ্ঠাটা ভিজে গেল
ভিজে গিয়েছিল সেই গানটা
“তুমি যে চেয়ে আছ আকাশ ভরে”
এরপর আমার জিন্সের জ্যাকেট, টাইটান ঘড়ি, আমার ইকনমিক্স অনার্স
সমস্ত কিছুকেই আকাশ মনে হয়েছিল
আপনাকে আর আপনার আকাশকে এত ভালোলাগেনি এর আগে
রাত জেগে এরপর গীতবিতান পড়েছি
এত আকাশ আপনার গানে?
কি করেছেন আকাশ নিয়ে?
তবে কি সত্যিই আমার মুক্তি এই আকাশে?
ঠিক এই সময়টায় বাবার সঙ্গে আমার সব শেষ হয়ে গেল
বাবা বললেন,
মূর্খ – তুই মেয়ে না হয়ে ছেলে হলে
আমার ভয় ছিল না
এত গীতবিতান পড়ার কি আছে?
রাবিশ!
সেদিনই বাড়ি ছেড়ে চলে যাব ভেবেছিলাম – পারিনি
সেদিনই ঘুমের বড়ি খাব ভেবেছিলাম – পারিনি
তার বদলে বাবার মুখের ওপর দাঁড়িয়ে বললাম –
তুমি আমার বাবা নও
তুমি আমার বাবা নও
অন্য একজন কোথাও আছেন, তিনিই আমার বাবা
ওপরতলার রাজনীতি করা বাবার অহং সাঙ্ঘাতিক
ঠাস করে আমাকে চড় মেরে বললেন,
তোমার যা লাগবে টাকা পয়সা সব পাবে
তবে আজ থেকে তুমি আর আমাকে পাবে না
মনে রেখ।
সামনেই ফাইনাল
কি হবে জানিনা
কিন্তু ভালো আমাকে করতেই হবে –
নিজের পায়ে দাঁড়াতেই হবে
চোখের জলে ভিজে গেছিল সেদিন পৃষ্ঠাগুলো
সাইত্রিশ, আটান্ন, দুশো বারো, তিপ্পান্ন
পৃষ্ঠাগুলো যেন আমার ভেজা চোখের মতো
আমি হাত দিই ভেজা পাতায়
আর কে যেন হাত রাখে আমার পিঠে
কবে – কবে সেই হাত আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরবে?
হ্যাঁ আপনি – আপনিই সেই গীতবিতানের লেখক
আমার মতো অজস্র মেয়েকে আপনি আকাশ দিয়েছেন ,
হেমন্ত দিয়েছেন, শ্রাবন দিয়েছেন
কিন্তু আপনি যেমন দিয়েছেন নিয়েছেনও তেমনি
তবে নিন আরো নিন
আরো আরো
আপনি যত নেবেন আমি তত ভালো থাকব
আমাকে নিঙরে নিন।
আমাকে আমার বাবা বোঝেনি
আপনার আকাশ তাই আমার আকাশ
আচ্ছা আপনি কখনও আমায় ভুল বুঝবেন না তো!
 
 
 
 
 
ভালো জায়গাটা কোথায়
সুবোধ সরকার 
 
দুপুরে ঘুম থেকে উঠে আমার তিনবছরের ছেলে বলল
বাবা, আমাকে একটা ভালো জায়গায় নিয়ে যাবি?
আমি চমকে তাকালাম তিন বছরের দিকে
তিন বছরের চোখের দিকে, তিন বছরের ঠোঁটের দিকে
ফুটে ওঠা বিন্দু বিন্দু ঘামের দিকে
আমি বললাম, যা তো চিড়িয়াখানাটা নিয়ে আয়
সিংহটার খুব খিদে পেয়েছে, বাঘটা তাড়া করেছে হরিণকে
সে বলল, না, আমাকে একটা ভালো জায়গায় নিয়ে চল?
পাশের ঘরে গিয়ে একটু কাঁদল, বন্দুক চালাল, তারপর
কোথা থেকে কার্ল মার্কসের একটা ছেড়া ক্যালেন্ডার এনে বলল
এই দাদুটাকেও নিয়ে যাব, ট্রেনে করে, নৌকো করে
এই বাবা, বাবা, একটা ভালো জায়গায় যাবি?
ভিক্টোরিয়ায় নিয়ে এলাম, সে বলল, না এটা ভালো না
গঙ্গার ঘাটে নিয়ে এলাম, সে বলল, এটাতো একটা নদী
আইসক্রিম ধরিয়ে দিলাম, সে ঘ্যানঘ্যান করেই চলল
বিরক্ত হয়ে আটটা নাগাদ বাড়ি ফিরে দেখি, তখনও
মেঝেতে গড়াগড়ি খাচ্ছেন ছেড়া কার্ল মার্কস
ছেলেকে বললাম, শোন্, এই দাদুটাও
আমাদের একটা ভালো জায়গায় নিয়ে যাবে বলেছিল
সেই রবিবারে কোন ট্রেন ছিল না, নৌকো ছিল না।
মিনিট দুয়েক চুপ, কী ভাবল কে জানে, তারপর আবার ঘ্যানঘ্যান
বল দিলাম, রোবট দিলাম, জাহাজ দিলাম
চড় বসাব কি না ভাবছি , তখনই, পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন প্রশ্নটা
সে করল:
এই বাবা, কাল একটা ভালো জায়গায় নিয়ে যাবি তো, কাল?
 
 
 

ইতি দ্রৌপদী
সুবোধ সরকার 
 
আমি তোমাকে এত দিন বাদে
এতগুলো চৈত্রমাস বাদে
এতগুলো পতনের পরে
এতগুলো উত্থানের পরে
আমি তোমাকে আজ চিঠি লিখছি
এতগুলো একশো বছর বাদে
এতগুলো হাজার বছর বাদে
আমি তোমাকে আজ ই-মেল লিখছি …
আমি ইতিহাসে প্রথম
আমি ইতিহাসে প্রথম লজ্জা
আমি ইতিহাসে প্রথম লজ্জা রজঃস্বলা
আমি ইতিহাসে প্রথম লজ্জা রজঃস্বলা প্রথম শ্লীলতাহানি
এত দিন বাদে তোমাকে লিখছি
তোমার আর একটু সচেতন হওয়া উচিত ছিল
তুমি আমাকে লজ্জা থেকে বাঁচিয়েছিলে
কিন্তু তুমি আমাকে লজ্জা থেকে বাঁচাতেও পারিনি।
আমি সেদিন ঘরে ছিলাম
আমি সেদিন এক পাত্র জলে পাপড়ি ছড়িয়ে
পা ডুবিয়ে বসে ছিলাম
মাসে তিনদিন আমি পায়ে ফুল লাগাই
মাসে তিনদিন আমি পা ডুবিয়ে পা ডুবিয়ে
মানস সরোবরে চলে যাই
সাঁতার কেটে আমি এক অনন্ত দুই অনন্ত তিন অনন্ত
পার হয়ে বাবার কাছে ঘুরে
মায়ের কাছে ঘুরে আসি
ছোটবেলার উঠোনে গিয়ে শিউলি কুড়িয়ে আনি।
আমি সেদিন ঘরে ছিলাম, তোমরা আমাকে
রাজসভায় ডেকে আনলে
ওটাকে ডেকে আনা বলে না
ধরে আনা বলে
রাজসভায় ডেকে এনে পরিকল্পনা করে
একটা মেয়েকে তোমরা নগ্ন করে দেখতে চাইলে?
আমি বলেছিলাম আমার শরীর ভাল নেই
একটা সুন্দর সুস্থ মেয়ে যখন বলে
আমার শরীর ভাল নেই
তার মানে তোমরা জানো না?
কিন্তু আমি প্রতিটি চোখ দেখতে পাচ্ছিলাম
পুরুষের চোখ আমি চিনি
কোন চোখে ফাল্গুন
কোন চোখে বৈশাখ, সেটা সব চেয়ে ভাল বোঝে
একটা মেয়ে।
তুমি আমাকে রক্ষা করেছিলে
তুমি আমাকে ঠিক কতটা রক্ষা করেছিলে কৃষ্ণ?
সাগরের জলে ডুবতে ডুবতে জল খেতে খেতে
কেউ যখন পারে উঠে আসে
তখন তার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলেই হয় না
এতক্ষণ তুমি তার নাকানি-চোবানি দেখলে?
তোমার হাত কেন আর একটু আগে এগিয়ে এল না?
আমি যখন প্রায় বিবস্ত্র হয়ে এসেছি
তখন তুমি শাড়ি পাঠালে আমায়?
তোমার যখন এত শাড়ি এত লম্বা শাড়ি
যা দিয়ে একটা গোটা আকাশ ঢেকে দিতে পারো
সেটা তুমি অত দেরি করে আমাকে পাঠালে?
ততক্ষণে আমার যা হবার হয়ে গেছে
ততক্ষণে আমার লজ্জা
আমার অপমান হয়ে গেছে
পিতামহদের চোখের সামনে
সন্তান তুল্য বালকের সামনে আমার অসম্মান
ঘটে গেছে।
তুমি আমাকে ভালবেসেছিলে কৃষ্ণ
নাকি তুমি তোমার রাজনৈতিক ক্ষমতা দেখাতে চেয়েছিলে?
ক্ষমতা একটা নেশা
যে নেশা করে না তাকেও ধরাতে হয়?
ক্ষমতা একটা চড়
সেটা দুর্বলের গালেও মারতে হয়
বীরের গালেও মারতে হয়
ক্ষমতা একটা দড়ি
সেই দড়িতে অন্যের ছেলেকে জড়াতে হয়
নিজের ছেলেকেও জড়াতে হয়।
একশো বছর
এক হাজার বছর বাদে দু'হাজার বছর তিন হাজার বছর
আমি ঠিক ঐভাবে দাঁড়িয়ে আছি
আমার শরীরে কোন ও কাপড় নেই
কোনও সুতা নেই
কেন আমি ওই ভাবে দাঁড়িয়ে আছি
সবাই জানে
তবু এক্ষুনি একটা সিদ্ধান্ত হবে
আর একটি রাজসভায়
সেখানে বাবা- কাকারা সমবেত হবেন
গুরুজনেরা সমবেত হবেন
বুদ্ধিজীবীরা সমবেত হবেন
পুত্রসম বালকেরা সমবেত হবেন
সবার সামনে আবার আমাকে বিবস্ত্র করা হবে ।
 
 
 
 
 
বউ কীরকম হবে
- সুবোধ সরকার
__________________________
চিরহরিতের দেশে সে এক কাহিনি।
আমরা চেয়েছি
বউ হবে প্রজাপতি আঁকা
মাটির কলসি
যা উল্টে রাতারাতি পাপ ঢাকা যায়
বউ হবে বর্ষাজলে বেড়ে ওঠা তীব্র লাউডগা
কিন্তু সে কামুক দেখে এক ছুটে পালিয়ে আসবে।
ভাত বেড়ে দেবে
জামা কেচে দেবে
জুতো মুছে দেবে
আমরা চেয়েছি তবু তার কামপাতা যেন বেরিয়ে না পড়ে
সিঁদুর পড়বে
আলপনা দেবে
পায়েস বানাবে
মাতাল স্বামীর জন্য জানলার শিক ধরে দাঁড়িয়ে থাকবে।
চিরহরিতের দেশে সে এক কাহিনি
আমরা মাতাল
আমরা ধনুক
আমরা পাতক
বোতল ফাটিয়ে
হাতঘড়ি বেচে
পুলিশের বন্ধুর জিপে বাড়ি ফিরে আসি।
কিন্তু বাড়ি ফিরে যেন আলপনা দেখি
যেন দেখি
বউ ভাত বেড়ে একা বিয়ের রাতের মতো দাঁড়িয়ে রয়েছে।
 
 
 
মেয়েদের ন এবং ণ
- সুবোধ সরকার 
 
ভদ্র, শিক্ষিত মেয়েদের পুরুষরা খুব একটা পছন্দ করে না।
সিগারেট খাবে,বার বার আঁচল খসে পড়বে
সেইসব মেয়েদের দাম বেশি।
সারা জীবন কেউ তো কামু কাফকা শ্রীকৃষ্ণকীর্তন পড়ে না
মাঝে মাঝে কোকশাস্ত্র পড়তে হয়
এক বৈশাখে ডাঁটার চচ্চড়ি আর বিউলির ডাল খুব ভাল লাগে
কিন্তু সেটা ফাগুন মাসে আর কত খেতে পারি?
কচি পাঁঠা আর বৃদ্ধ মেষ কি পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাবে?
আমার ভুল হয়েছিল কোথায় সেটা বলি
বনবিহারী নাগ এবং বিন্দুবালা মুখার্জির মাঝখানে
যেটুকু গোধূলি অবশিষ্ট ছিল
তার উপদ্রুত উপনিবেশ থেকে হাতে ভদ্কার গ্লাস নিতে নিতে
একুশ বছর বয়সের মেয়েটি আমাকে একদিন চোখ মারল।
আমার ভুল হয়েছিল কোথায় সেটা বলি
আমি বাথরুমে ঢুকে চোখেমুখে জল দিলাম
মাথায় চাঁটি মেরে আয়নাকে জিজ্ঞাসা করলাম ঠিক দেখেছি?
মানুষ যে হাতে ভাত খায় সেই হাতেই যেহেতু মৈথুন করে
আমি বুঝতে পারছিলাম না কী করব হত দিয়ে
একটা বড় পেগ গলায় ঢেলে মেয়েটিকে বললাম
আপনার মোবাইল নম্বরটা পেতে পারি?
আমি টেবিলে কাগজ রেখে লিখছিলাম,মেয়েটি বললঃ
উঠুন কাগজটি আমার পিঠে রেখে লিখুন।
আমার ভুল হয়েছিল কোথায় সেটা বলি
আমি সারদা মাকে বলেছিলাম আমার দিকে তাকিয়ো না, মা
আমি তোমার দুষ্টু ছেলে ছিলাম না, হয়ে গেলাম
আমি মদ খেতাম না, খেতে শুরু করেছি
আমি বর্ষার রাতে বিভূতিভূষণ, ব্যাঙ আর ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক শুনে কাটাতাম
এখন সারারাত মাস্টার করেছি আর রামকৃষ্ণ পড়েছি।
স্পাইনাল রড দিয়ে প্রেম নেমে আসছে হু হু করে
বাঁশ ধরে যেমন নেমে আসে বাঁদর।
পেটের ভেতরে একটা চামচ ঘুরে বেড়াচ্ছে, কিছুতেই যাচ্ছে না
ভারত থেকে যেমন কিছতেই উপনিবেশ যেতে চাইছে না।
আমার ভুল হয়েছিল কোথায় সেটা বলি
আমি মেয়েটাকে বললাম তোমার চোখদুটো খুব সুন্দর, 
কুয়াশাময় কিন্তু তুমি হংকং যেতে চাইছ কেন?
আমার বয়স হয়েছে,মধূপূড় চলো
মেয়েটি সেগারেট ধরিয়ে যতটা সম্ভব ঝুঁকে জুজু দেখিয়ে
আমার মুখে ধোঁয়া ছেড়ে বলল : তুমি হরলিক্স খাও।
আমাকে এত অপমান? জিন্দেগিতে কেউ আমাকে হরলিক্স খেতে বলেনি
আমি মেফিস্টফিলিসকে মেনে নিতে পারি,
হিটলারকেও সহ্য করেছি
কিন্তু মেয়েদের লঙ্কা সহ্য করতে পারছি না।
ন আর ণ মুচকি হাসে,পৃথিবীটা সরষের তেল না হুইস্কি বুঝতে পারিনা।
আমার ভুল হয়েছিল কোথায় সেটা বলি
মেয়েটি মোটেও আমাকে চোখ মারেনি, সে চোখ মেরেছিল আমার নিয়তিকে।
সে দেখতে চেয়েছিল আমার নিয়তি ঘুমিয়ে পড়েছে,
না কালবাউসের মতো এখনও লাফায়।
নিয়তি, নেমেসিস আর লিবিডো- এরা তিন বোন
ঝড় হোক, বৃষ্টি হোক, মহামারি হোক, মানুষ মৈথুন করবেই।
আর বলিহারি দিই ওদের তিন বোনকে
হাতে ভদ্কার গ্লাস তুলে নিতে নিতে, অবশিষ্ট গোধূলি থেকে
ওরা তিন বোন তিন উপনিবেশ থেকে তিনজন পুরুষকে চোখ মারবেই।
এরপর পৃথিবীর মান চিত্রের ওপর দাঁড়িয়ে
কয়েকজোড়া পা ঠিক করবেঃ
পৃথিবীটা সরষের তেল নাকি হুইস্কি?
 
 
 
 
কাল্লু ~ সুবোধ সরকার 
 
নামাজ পড়া শেষ।
আকাশে আধখানা নিয়তির মতো চাঁদ
একটা সাদা এম্বাসেডর এসে দাঁড়াল কাল্লুর ঝুপড়িতে
‘জয় শ্রীরাম’
কাল্লু বলল- ‘জয় শ্রীরাম’।
ওরা তিনজন ছিল।
“কাল্লু মন দিয়ে শোন্,
কাল ভোরবেলা তোর অ্যাকশন
এই নে, এটা রাখ তোর কাছে”
বলেই একটা মোবাইল ধরিয়ে দিল।
এ তল্লাটে লোকে ডাকে ‘কাটা কাল্লু’
পাঁচ বছর আগে ওয়াগন ভাঙতে গিয়ে ডান হাতটা কাটা পড়েছিল কাল্লুর
সেই কাটা হাত মাটি থেকে তুলে নিয়ে দৌড়েছিল
‘জয় শ্রীরাম’
হাতে ত্রিশুল, খাকি হাফ প্যান্ট, কোমরে গেরুয়া, মাথায় গেরুয়া।
ভোর চারটেয় মোবাইল বাজল—
“উঠে পড় কাল্লু, সূর্য ওঠার আগে তোকে উঠতে হবে,
কাক ডাকার আগে তোকে উঠতে হবে,
তোর ছেলেদের ডাকতে হবে,
মুরগি ডাকার আগে তোকে বলতে হবে
‘জয় শ্রীরাম’।
শোন্, ভুলে যাস না
পাঁচ বছর আগে তোর হাত কেটে নিয়েছিল যে জিআরপি
তার নাম- ইকবাল
তোর অ্যাকশন শুরু আর এক ঘণ্টার মধ্যে
স্পটে গেলেই তুই সব পেয়ে যাবি
কেরোসিন, পেট্রোল, লোহার রড, আর একটু দূরেই দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশ
আর এক দূরে দাঁড়িয়ে থাকবে পার্টির ছেলেরা
পার্টির ছেলেদের থেকে আর একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকবে
প্রশাসন, জিপ, রেডলাইট এমবাসেডার
এসব দাঁড়িয়ে থাকার মানে তোকে বুঝতে হবে না
তুই এগিয়ে যা, আমরা আছি
তিন মাস ধরে আমরা এটা ছকে রেখেছি
যা এগিয়ে যা, আজ তোর দিন, হাত কেটে নে
তোর একটা হাত কেটেছিল যারা
তাদের একশোটা হাত কেটে নিয়ে লড়িতে তুলে দে, ঘর পুড়িয়ে দে
তুই তো খারাপ কাজ করছিস্ না, তুই করছিস্ দাঙ্গা
আবার বল ‘জয় শ্রীরাম’, ‘জয় শ্রীরাম’।
এরপর কাল্লু আর মানুষ ছিল না
এরপর কাল্লু আর কাল্লু ছিল না
এরপর কাল্লু আর কেউ ছিল না
কাল্লু পেট্রোল হয়ে গড়িয়ে গেল
কাল্লু লোহার রড হয়ে ঘুরে বেড়াল
এক ঘণ্টার মধ্যে গোটা একটা পাড়াকে নরক বানিয়ে
নরকের বাইরে বেরিয়ে এল কাল্লু।
তার দলের ছেলেরা তখন গলায় ঢালছে বোতল
একটা বোতল এগিয়ে দিল কাল্লুর দিকে
কাল্লু বলল, “তোরা তো জানিস‌্
অ্যাকশনের সময় আমি এসব ছুঁই না”।
কাল্লু চোখ ভরে দেখল একটা গোটা পাড়া জ্বলছে দাউ দাউ করে।
শিমুল গাছের নিচে এসে দাঁড়াল কাল্লু
“কে রে গাছের পেছনে, কে ওখানে? কে কাঁদছে?”
এক ঝটকায় ধরে ফেলল চুড়িপরা হাতটাকে
“কে তুই?”
একটা বারো তেরো বছরের মেয়ে
নতুন একটা ঘাগরা পরা
নতুন চুড়ি, চোখে চশমা, হাতে একটা হ্যারিপটারের বই।
কী সুন্দর দেখতে মেয়েটাকে!
—একটা গোটা মেয়ে।
কাল্লু চিৎকার করে উঠল— “তুই এখানে কেন?
এখানে তুই কী করছিস্? তুই কে?”
মেয়েটা বলল, “আমি রুকসানা”
“তুই কে?”
“আমি ক্লাস সেভেনে পড়ি”
“তুই কে?”
“আমার মা-বাবা ঐ আগুনের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে,
ওদেরকে একটু বের করে নিয়ে এসো না।”
“বলে কী মেয়েটা, এই শালা জানিস না — আমি মারতে পারি, বাঁচাতে পারি না”।
ততক্ষণে কাল্লুর ছেলেরা এসে কাল্লুর পাশে এসে দাঁড়িয়েছে
“গুরু, কী সুন্দর দেখতে মেয়েটাকে! একটা গোটা মেয়ে”
কাল্লু তাকাল তার দলের দিকে
প্রত্যেকটা মুখ আগুন
প্রত্যেকটা মুখ মদ
প্রত্যেকটা মুখ খুন
সবচেয়ে মদ খেয়েছে যে মুখটা সে বলল—
“গুরু, ফিফ্‌টি ফিফ্‌টি, তুমি একবার আমি একবার;
চলো, আজ একটাও রেপ করিনি, এবার করতে দাও”।
কাল্লু সপাটে একটা চড় মারল, বা হাতের চড়ে
ছেলেটা গড়িয়ে পড়ল মাটিতে
কাল্লু মেয়েটাকে আপাদমস্তক দেখল—
হাতে চুড়ি, নতুন ঘাঘরা, চোখে চশমা,
হাতে এক মিনিট আগেও ছিল হ্যারিপটার
ওর নিজের মেয়েটা বেঁচে থাকলে সেও ক্লাস সেভেনে পড়ত
তার হাতে এরকম একটা বই থাকত
তার হাতেও এমন চুড়ি থাকত
কাল্লু চিৎকার করে উঠল, “তুই এখনো বেঁচে আছিস কেনো?
তুই মরে যাসনি কেন মা?
পেছনে জ্বলছে ঘরবাড়ি
সামনের রাস্তায় জ্বলছে তিনটে মারুতি ভ্যান
একটা গাছের তলায় নতুন ঘাঘরা পরা এক কিশোরী।
কাল্লু কোলে তুলে নিল মেয়েটাকে
মেয়েটা চিৎকার করছে, দু’হাত দিয়ে মারছে কাল্লুকে
“মা কোথায়, মা কোথায়, আমার বাবা কোথায়?”
কাল্লু বলছে, “বেটি চুপ কর, চুপ কর, রো মাত”।
কাল্লুর দলের ছেলেরা হাঁ,
হচ্ছেটা কী বুঝতে পারছে না
ওরা ছ’জন ঘিরে ধরে কাল্লুকে, কাল্লু মাঝখানে
মার্‌ মার্‌, মার্‌ ওকে, মার্‌
কাল্লু ওদের মেরে মাটিতে ফেলে দেয়
কাল্লু দৌড় দেয়, মেয়েটিকে কোলে নিয়ে দৌড়োয়
পেছন থেকে তার দলের ছেলেরা তাকে বলে—
“গুরু, তুমি একাই খাবে? আমাদের দিয়ে খাবে না?”
কাল্লু পেছন ফিরে দাঁড়ায়, তারপর থুঃ করে থুথু দিয়ে দৌড়োতে থাকে
নদীর ধারে এসে দাঁড়ায়
নদী থেকে আজলা ভরে জল তুলে মেয়েটির চোখে মুখে দেয়।
মেয়েটি বলে, “আমার মা কোথায়? আমার বাবা কোথায়?”
মেয়েটি পালাতে থাকে
মেয়েটি কাল্লুর থেকে পালাতে থাকে
কাল্লু ধমকে ওঠে, “চুপ শালা!
আজ থেকে আমিই তোর বাবা, আমিই তোর মা”।
ঠিক তক্ষুণি বেজে ওঠে মোবাইল
“কী রে কাল্লু, কী করছিস্ মেয়েটাকে নিয়ে?
এখনো সময় আছে, নদীতে ছুঁড়ে ফেলে দে”।
কাল্লু মোবাইলটাকে এক কান থেকে আরেক কানে এগিয়ে বলে—
“আমি পারব না”।
“কী হচ্ছে কাল্লু, ওকে রেপ করে ছুঁড়ে ফেলে দে”।
কাল্লু কান থেকে মোবাইল ফোন নামিয়ে নদীতে ছুঁড়ে ফেলে দিল।
তারপর আবার দৌড়…
দৌড়, দৌড়, দৌড়, দৌড়, দৌড়, দৌড়…
কাল্লু কোথায় যাবে জানে না
কাল্লু কী খাবে জানে না
কাল্লু কী খাওয়াবে তাও জানে না
শুধু জানে তাকে দৌড়াতে হবে মেয়েটিকে নিয়ে
সে এতদিন মানুষ মেরেছে
আজ প্রথম সে কাউকে বাঁচাতে চাইছে
দৌড়, দৌড়, দৌড়, দৌড়, দৌড়, দৌড়…
একজনকে বাঁচানো এত আনন্দের!
কাল্লুর পেছনে জয় শ্রীরাম
কাল্লুর পেছনে পুলিশ
কাল্লুর পেছনে পার্টির লোক
কাল্লুর পেছনে প্রশাসন
কাল্লুর বাড়ি পুড়ছে
কাল্লুর বউ ঘরছাড়া
কাল্লুর নামে হুলিয়া
কাল্লু দৌড়োয়, নদী পেরোয়, ধানক্ষেত পেরোয়, জলা পেরোয়,
ন্যাশনাল হাইওয়ে, এক ট্রাক থেকে অন্য ট্রাকে
এক ট্রেন থেকে অন্য ট্রেন
কাল্লু জানে — সে গুজরাট ছাড়িয়ে, বিহার ছাড়িয়ে
একদিন কলকাতায় এসে দাঁড়াবে
চোখে চশমা, হাতে হ্যারিপটার, পিঠে স্কুলব্যাগ নিয়ে
হাতে জলের বোতল ঝুলিয়ে
একদিন মেয়েটাকে স্কুলবাসে তুলে দেবে।
আর সে হাজার হাজার ফুচকাওয়ালার মতো
ময়দানে লাল-নীল ফোয়ারার পেছনে
সপ্তষীমণ্ডলের নিচে দাঁড়িয়ে
ফুচকা বিক্রি করবে।
 
 
 
 
 
চোখের জল
সুবোধ সরকার
মানুষের চোখ থেকে গড়িয়ে পড়া চোখের জল
ভালো লাগে না আমার
সবচেয়ে বড় অপচয়ের নাম চোখের জল
অসহ্য, সরিয়ে নাও তোমার চোখ, আমি তাকাব না
খেতে দিতে না পেরে বাবা চলে গেলেন, মেঘলা আকাশ
মায়ের চোখ ফেটে সারাদিন শুধু জল নয়
যেন একজন নারী গলে গলে বেরিয়ে আসত ।
পাঁচ বছর বাদে ভাইকে তুলে নিয়ে গেছে পুলিশ
মা, আমার অসহ্য লাগে চোখের জল । চুপ করো।
চোখের জলে লাগল জোয়ার, কথাটা দারুণ
কিন্তু মানে কি ?
একটা মানুষ চোখের জল মুছে উঠে দাঁড়ায়
দেয়াল থেকে হাতে তুলে নেয় টাঙ্গি
তারপর তুলে ধরে আকাশের দিকে
আকাশে কে থাকে ? ভগবান ?
পরিষ্কার একটা কথা বলি শোনো : তুমি গরিব
তোমার জন্য কোন ভগবান নেই
শনি পুজো না করে সেই টাকায়
কনডোম্ কেনো রাসকেল । রাতারাতি ভারতবর্ষ পাল্টে যাবে।
চোখের জলে কিছু হয় না
একটা জাতি উঠে দাঁড়ায় তিনটি কারণে :
মাথার জোরে, গায়ের জোরে, মনের জোরে।
তোমরা যারা ভালো করে খেতে পাও না
তাঁদের চোখে এতো জল আসে কি করে ?
মাকেও দেখতাম যেটুকু খাবার জুটতো
ভাইবোনদের খাইয়ে নিজে চাঁচি মুখে দিয়ে
বাসন মাজতে মাজতে কাঁদতেন
গরিবের কি চোখের জল বেশি হয় ?
চোখ থেকে গড়িয়ে পড়া চোখের জল
সহ্য করতে পারি না আমি
বাইপাসের ধারে একটা নগ্ন মেয়ের চোখ থেকে
জল গড়িয়ে পড়ল গালে
গাল থেকে একটা বিন্দু গিয়ে পড়ল স্তনের বোঁটায়
আমি অবচেতনের ঐশ্বর্য লিখতে আসিনি
আমার জামাটা খুলে তাঁকে দিই, বলি ওঠো
একটা কুলাঙ্গার তোমাকে ভালবেসে ফেলে চলে গেছে
তার জন্য তোমার জীবন শেষ হয়ে যেতে পারে না।
একটা জাতি উঠে দাঁড়ায়
একটা মানুষ উঠে দাঁড়ায় পরিষ্কার তিনটি কারণে
দরকার যেকোনো একটা জোর
হয় গায়ের নয় মাথার নয় মনের ।
তাজ বেঙ্গলের উল্টোদিকে, মাঝরাত্রে, একটি বালক
হাঁটুতে মুখ গুঁজে কাঁদছে
এই শালা কাঁদছিস কেন রে ?
ছুটে গিয়ে ভেতরে ঢুকে কামড়ে দিতে পারছিস না ?
 
 
 
 

দুর্গার দশ হাত কখনো ছিলনা | 

সুবোধ সরকার

 আমার মা আমাকে একবার কানে কানে একটা কথা বলেছিল।
 ফিসফিস করে বলেছিল, যাতে কেউ শুনতে না পায়। 
আমার কানটাকে টেনে কাছে এনে মা বলেছিল, 
'কাউকে বলবি না তো?' আমি বললাম, 'কী?'

'আগে বল বলবি না।'

আমি বললাম, 'না বলব না।' মা বলল, 'দুর্গার ক'টা হাত?'

আমি বললাম, 'দশটা।' মা বলল, 'কোনও দিন দুর্গার দশটা হাত ছিল না।
 প্রথম দিন দুটো ছিল, তার পর তিনটে হল তার পর চারটে হল, 
এ ভাবে কি একটার পর একটা হাত গজায় কারও? 
তুই দুটো হাত নিয়ে পৃথিবীতে এসেছিস, তোর কি কোনও দিন চারটে হাত হবে?
 দুর্গার হাত প্রথমে দুটো ছিল, আজও দুটো আছে। একশো বছর পরেও দুটো থাকবে।'

মা যে দিন কথাটা ফিসফিসিয়ে বলেছিল, 
সেই ফিসফিসানোর বয়স একশো বছর না হলেও, পঞ্চাশ হল।
 মাকে কথা দিয়েছিলাম, কাউকে বলব না, বলিনি। আজ লিখলাম।
 আমার মা পাবনা থেকে পালিয়ে আসা একটি মেয়ে,
যে কি না সীমান্ত পেরোনোর সময় বাবার সঙ্গে বমাল ধরা পড়ে ত ত করে জিজ্ঞাসা করেছিল রাইফেলধারীকে- তোমরা এপারে তুলসি লাগাতে দেবে তো? 
সেটা ছিল কোজাগরীর আগে। দীপাবলিতে কোনও দ্বীপ জ্বলেনি সে বার।
 আমার মা স্কুল কলেজে যায়নি কোনও দিন।
 কিন্তু গীতার এক একটি অধ্যায় রোজ পুকুরে ডুব দিয়ে উঠে ভিজে কাপড়ে
 বলতে বলতে তুলসিগাছে জল দিত।
 পঞ্চাশ বছর আগে মায়ের কথাটা হুবহু মনে পড়ছে আজ, 
দুর্গার দশহাত ছিল না কখনও। আজও নেই। ফিসফিস করে নয়, 
এসপ্ল্যানেডে দাঁড়িয়ে মাইকে মাইকে বলতে ইচ্ছে করছে মায়ের কথাটা, 
দুর্গার দুটো হাত। তাকিয়ে দেখুন, দুটো হাত দিয়ে যে কাজ দুর্গা করেছিলেন, 
সেটা দশহাত থাকলেও অনেকে পারবে না। এখানেই 'মেটাফর'-এর জয়, রূপকের উদ্যাপন।
 যে মানুষটি কল্পনা করেছিল দশহাতের, তিনি একজন বড় মাপের কবি। বাল্মীকির সমান।

আমাদের পাড়ায় থাকতেন শিউলিদি। বউ হয়ে এসেছিলেন।
 কিন্তু সে বাড়িতে কোনও রোজগার নেই। 
বর পঙ্গু। পাড়ায় একটা চা বিস্কুটের দোকান দিলেন।
 সেই টাকায় বাজার করতেন, ছেলেকে পড়াতেন। 
মারতে মারতে স্কুলে নিয়ে যেতেন। বরের ওষুধ কিনে আনতেন।
 শাশুড়িকে স্নান করাতেন। দোকান বড় হল। এক ঘরের বাড়ি বানালেন।
 বর মারা গেল। ছেলে হায়ার সেকেন্ডারিতে স্টার পেল।
 ছেলেকে ডাক্তারি পড়ালেন। ছেলে এখন কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসক। 
এই শিউলিদির যদি দশ হাত না থাকে, তো কার দশ হাত আছে? 
এই শিউলিদিকে যদি আমি দুর্গা বলতে না পারি,
 তা হলে মাটির দুর্গাকে সারাজীবন প্রণাম করে কী হবে?
 আমার কাছে শিউলি মানে শরৎ নয়, 
আমার কাছে শিউলি মানে চা বিস্কুটের দোকান চালানো শিউলিদি।
 যে মেয়েটি কাঁখে ছেলে নিয়ে মাথায় আটটা ইট নিয়ে
 প্রোমোটারের বাড়ি বানাচ্ছে সে কি দুর্গা নয়?
যে মেয়েটি গ্রাম থেকে উড়ে গেল সেদিন ওয়াশিংটন ডিসি,
 নাসায় বিজ্ঞানী হিসেবে যোগ দিতে, 
সে যখন দু'দিন বাদে গ্রামের বাড়িতে ফিরবে ছুটি নিয়ে, 
তাকে দেখার জন্য বেশি ভিড় হবে, সে কি দুর্গা নয় বলে? 
নাকি দুর্গা বলে? কল্পনা চাওলা যখন মহাকাশ থেকে ছাই হয়ে ঝরে পড়েছিল, 
তখন কি মনে হয়নি, আহা রে একটা দুর্গা ছাই হয়ে গেল! তার পর দেখলাম, 
সেই ছাই থেকে আরও নতুন দুর্গা বেরিয়ে এল। তাদের কারও দশটা হাত নেই।
 সবার দু'টো করে হাত।দুর্গাপুজো আসলে সবার পুজো। 
বড়লোকের পুজো, মধ্যবিত্তের পুজো, প্রান্তিকের পুজো,
 ব্রাহ্মণের পুজো, কোল ভিল সাঁওতালের পুজো। 
যদিও বহু সাঁওতালের বাড়ি পাঁচদিন কালো কাপড়ে ঘিরে রাখা হয়।
 শোকের চিহ্ন হিসেবে, সে এক অন্য গল্প। 
অসুর তাঁদের প্রতীক। অনার্য জনজাতির দেবতা।
 তাঁরা বিশ্বাস করেন, এই পুজোর ভিতরে লুকিয়ে রয়েছে আর্য সাম্রাজ্যবাদ। 
অসুরকে শূল বিদ্ধ করে পুজো করাটা তাঁরা অনেকেই ভালো চোখে নেন না। 
তাই শোক। তাই কালো কাপড়।
 যে কোনও উৎসবের পিছনেই থাকে একটা না একটা পরাজয়ের কাহিনি। 
বশ্যতার কাহিনি। ক্ষমতা দেখানোর উল্লাস। 
কিন্তু দুর্গা আমার চোখে হাজার হাজার লক্ষ কোটি মেয়ের উঠে দাঁড়ানোর গল্প। 
প্রতিটি মেয়ের মধ্যে একটি লুকোনো দুর্গা আছে।
 প্রতিটি মেয়ের মধ্যে আটটা লুকোনো হাত রয়েছে।
 একটা একটা করে সেই হাত বের করে নিয়ে আসার নাম দুর্গাপুজো। 
আর সেই পুজোর গন্ধের নাম শিউলি।
 
 

No comments:

Post a Comment

প্রেমের কবিতা

আমাকে ভালোবাসার পর – হুমায়ুন আজাদ আমাকে ভালবাসার পর আর কিছুই আগের মত থাকবে না তোমার, যেমন হিরোশিমার পর আর কিছুই আগের মতো ন...