তুই কি আমার দুঃখ হবি – আনিসুল হক
তুই কি আমার দুঃখ হবি?
এই আমি এক উড়নচন্ডী আউলা বাউল
রুখো চুলে পথের ধুলো
চোখের নীচে কালো ছায়া
সেইখানে তুই রাত বিরেতে স্পর্শ দিবি।
তুই কি আমার দুঃখ হবি?
তুই কি আমার শুষ্ক চোখে অশ্রু হবি?
মধ্যরাতে বেজে ওঠা টেলিফোনের ধ্বনি হবি?
তুই কি আমার খাঁ খাঁ দুপুর
নির্জনতা ভেঙে দিয়ে
ডাকপিয়নের নিষ্ঠ হাতে
ক্রমাগত নড়তে থাকা দরজাময় কড়া হবি?
একটি নীলাভ এনভেলাপে পুরে রাখা
কেমন যেন বিষাদ হবি?
তুই কি আমার শুন্য বুকে
দীর্ঘশ্বাসের বকুল হবি?
নরম হাতের ছোঁয়া হবি?
একটুখানি কষ্ট দিবি,
নীচের ঠোট কামড়ে ধরা রোদন হবি?
একটুখানি কষ্ট দিবি
প্রতীক্ষার এই দীর্ঘ হলুদ বিকেল বেলায়
কথা দিয়েও না রাখা এক কথা হবি?
একটুখানি কষ্ট দিবি
তুই কি একা আমার হবি?
তুই কি আমার একান্ত এক দুঃখ হবি?
ম’রে যেতে সাধ হয় – আনিসুল হক
ক্যাম্পাসে এসো না, আমার খারাপ লাগে।
সখী পরিবৃতা হয়ে মোগল-দুহিতার মতো
করিডোরে অমন ক’রে হেঁটো না, আমার খারাপ লাগে।
শাহানা, তুমি চিবুক নাড়িয়ে
রাঙা মাড়িতে
দুধ শাদা হাতে
লালিম জিহ্বায়
গিটারের তারের মতো বেজে উঠো না —
দরদালান কেঁপে উঠে, ঢিল পড়ে বুকের পুকুরে,
কাঁপে পানি থিরিথিরি, আমার খারাপ লাগে।
শাহানা, তুমি টিফিন আওয়ারে ক্লাসরুমে ব’সে
অমন করে রাধার মতো দীর্ঘ চুল মেলে দিও না
অন্ধকার করে আসে সারাটা আকাশ
নিবে যায় সবগুলি নিয়ন
কালো মেঘের উপমা দিতে আমার ভালো লাগে না।
শাহানা, তুমি ক্যাফেটেরিয়ায় নিরেট চায়ের কাপে
ওই দুটি ঠোঁট রেখো না;
নিদাঘ খরার পোড়ে ঠোঁটের বাগান,
মরুভূর মতো জ্বলে তৃষ্ণার্ত সবুজ;
আমার মরে যেতে সাধ হয়।
ওই দুটি ঠোঁট রেখো না;
নিদাঘ খরার পোড়ে ঠোঁটের বাগান,
মরুভূর মতো জ্বলে তৃষ্ণার্ত সবুজ;
আমার মরে যেতে সাধ হয়।
পড়শি
- আনিসুল হক---সংকলিত (আনিসুল হক)
আমার একটা কদম বৃক্ষ আছে!
আমি তাকে নীপ বলে ডাকি।
আইনত গাছটা আমার নয়,
আমি ঠিক তার পাশের বাসায় থাকি!
কিন্তু তাকে ডেকে আমি বলি,
ওগো নীপ তুমি কিন্তু আমার!
তুমি আমার তুমি আমার শুধুই!
তোমার ছায়ায় দিবারাত্র শুই।
কদম আমার কথায় মাথা নাড়েন,
চুলের বেণি বৃষ্টিশেষে ঝাড়েন।
বলেন, যখন আকাশ থাকে মেঘলা,
আমার ছায়া কোথায় তখন? একলা
আমি তখন ছায়াবিহীন একাকিনী!
জলের কাছে মেঘের কাছে ভীষণ ঋণী।
আমি বলি, ছায়া তখন বিশ্বজুড়ে
তোমাকে পাই ঠিক তখনই অন্তঃপুরে
জানলা দিয়ে চেয়ে থাকি তোমার দিকে,
মাথা রাখি তোমার কোলে, লোহার শিকে...
বাতাস ওঠে, পাতা নড়ে, হাসেন নীপ!
আমার কিযে ভালো লাগে তার সমীপ।
আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামে
আমার কদম বৃষ্টিভেজা শাড়ির দামে
জড়িয়ে থাকেন
আমি তাকে নজর করি
সোনার পুষ্প অঙ্গে দোলে, নীলাম্বরী
রাধার কাঁখে
আমার কদম আমার নীপ পীনোন্নত
আমার কদম আমার নীপ ব্রীড়ানত
বৃষ্টি থামে রৌদ্র ওঠে
কদম ছায়া কদমে তার আপনি লোটে
আমিও ঠিক লুকোই যে তার ছায়ার সাথে
এমনভাবে থাকতে পারি রাত-বিরাতে!
কদম ফুলের গায়ের গন্ধে মাদকতা!
আমায় বলে, তিনি কিন্তু পতিব্রতা!
বর্ষা গেলে শরৎ আসে, হেমন্ত যায়
শীতের শেষে বসন্ত তার বাতাস কাঁদায়
কাঠুরেরা আসে তখন কুড়াল হাতে
আমার কদম ন্যাড়া হবেন রক্তপাতে
কদম বলেন, আমি নাকি তোমার একার
এ জগতে কেউ কি আছেন আমায় দেখার
এমন করে ছাঁটবে আমায় প্রতি বছর!
দেখবে তুমি, জানালা আর তোমার কছর!
হাত বাড়িয়ে বলি আমি, কাঠুরে ভাই,
এমন করে কদম গাছকে কাটতে যে নাই!
হাসে ওরা। স্বত্ব তোমার আছে নাকি!
আমি বলি, আমি যে ওর পাশে থাকি।
ওরা বলে, থাকলে পাশে
গাছের কিবা যায় বা আসে
নিজের উঠান জুড়ে একটা বৃক্ষ লাগাও
সেই গাছেতে বছর ভরে পত্র জাগাও
আমরা সে গাছ কাটতে আসব না কখনও
কাটতে বলবে না কোনোদিন ঊর্ধ্বতনও
আমার একটা কদম আছে পড়শি কদম
আমায় দেখে হয়ে পড়েন হতোদ্যমও
আমি ভাবি আমার কদম ব্যক্তিগত
জানি সেটা সম্ভব নয় আইনত
বর্ষা এলে তবু যখন কদম ফোটে
রেনু ঠিকই এসে আমার অঙ্গে লোটে
আমি তখন হাত বাড়িয়ে বৃষ্টিকে ছুঁই
বৃষ্টিজলে আখর লিখি, রয় না কিছুই
দরখাস্ত
-আনিসুল হক
আমি যে তোমার নখের যোগ্য নই
এই প্রসঙ্গ ঘুরে ফিরে শুধু ভাবি,
কিন্তু প্রেম কি যোগ্যতা মেপে হয়?
হৃদয়ের কাছে হৃদয়ের নেই দাবি?
যোগ্যতা মেপে চাকুরিতে লোক নিও
অযোগ্যকেই ভালোবাসা দাও, প্রিয়,
যোগ্য লোকেরা ভালো করে চাকুরিতে
কাজে ব্যবসায় তারা খুব বরণীয়।
কিন্তু এটা তো চাকরি ব্যবসা নয়,
পুঁজিহীন এই হৃদয়ের কারবার,
আমার তো শুধু হৃদয়কে নিয়ে ভয়--
টাকা চলে গেলে টাকা আসে বারবার ।
আমি তো তোমার হৃদয়কে নিয়ে ভাবি
রূপ! সেও তো হৃদয়েরই দর্পণ:
হৃদয়হীনাকে রূপবতী বলি নাকো!
রূপের সোনায় সোহাগা তোমার মন!
আমি খুব ছোট আমি খুব সাধারণ,
কিন্তু আমার কারবার মন নিয়ে,
তোমার শস্তি গাই আমি সারাক্ষণ
গানে ও কাব্যে সবটুকু ঢেলে দিয়ে।
আমি পথধূলি তুমি হলে মহারানী,
তুমি সুন্দর তুমি মহার্ঘ ধন,
কিন্তু আমি যে কাব্য করতে জানি,
তোমার তাই তো আমাকেই প্রয়োজন।
লিখতে জানি না! পড়তে তো আমি জানি।
৩০০ কবিতা মুখস্থ আছে, বলব!
কবিতা পড়েছি এটা কি তুচ্ছ কিছু!
এর চেয়ে বড় নয় টয়োটা ভলভো!
জন আব্রাম তোমাকে বুঝবে না!
বিল গেটসও তোমার তুল্য নন।
রবীন্দ্রনাথকে বলা যায় কিছু যোগ্য
যোগ্য ভাবি না ওবামা বা ক্লিনটন।
তোমার জন্য আমি ছাড়া আমি কাউকে
আর তো দেখি না তোমার নখের যোগ্য
আমিই তোমার কবিতাশরীরে প্রাণ
আমিই তোমার কাক্সিক্ষত সেই লোক গো!
No comments:
Post a Comment